বুধবার, ২৭ নভেম্বর ২০২৪, ০৮:২৩ অপরাহ্ন
শিরোনাম ::
বনফুল আদিবাসী গ্রীনহার্ট কলেজে মনমাতানো ক্লাস পার্টি অনুষ্ঠিত ব্যবসায়ীদের সরকারের সঙ্গে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করার আহ্বান অধ্যাপক ইউনূসের রাষ্ট্রপতির কাছে সুপ্রিম কোর্টের বার্ষিক প্রতিবেদন পেশ প্রধান বিচারপতির দেশমাতৃকার বিরুদ্ধে দেশী-বিদেশী চক্রান্ত থেমে নেই: তারেক রহমান তুর্কি রাষ্ট্রদূতের সাথে জামায়াতের সৌজন্য সাক্ষাৎ চিন্ময় সমর্থক জঙ্গীদের হামলায় আইনজীবী সাইফুল ইসলাম নিহত অভ্যন্তরীণ বিষয় হস্তক্ষেপ: চিন্ময় ইস্যুতে ভারতের উদ্যোগ শাপলা চত্বরে গণহত্যায় হাসিনাসহ ৫০ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগ আমরা চাই না ছাত্র ভাইদের কঠোর হয়ে দমন করতে : স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা রাষ্ট্রদ্রোহের ঘটনায় যুক্ত থাকলে ছাড় দেয়া হবে না : আসিফ মাহমুদ

ফরিদপুরে কলেজছাত্র প্রান্ত হত্যার আসামীদেরকে গ্রেফতারের বিষয়ে জেলা পুলিশের সংবাদ সম্মেলন

নুরুল ইসলাম আনজু ফরিদপুর
  • আপডেট সময় বুধবার, ২ আগস্ট, ২০২৩

ফরিদপুরে রাজেন্দ্র কলেজের অনার্স (উদ্ভিদবিদ্যা) তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী আলোচিত প্রান্ত মিত্র(২৩) ছিনতাইকারীদের হাতে নিহত হয়েছেন। পুলিশ এই হত্যাকান্ড ও ছিনতাইয়ের সাথে জড়িত চার আসামিকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। তাদের কাছ থেকে জব্দ করা হয়েছে হত্যাকান্ড ও ছিনতাইয়ে ব্যবহৃত বিভিন্ন আলামত। প্রান্ত একই সাথে ছাত্রলীগ ও স্বেচ্ছাসেবক লীগের কর্মী ছিল। সে রাজেন্দ্র কলেজের সনাতন শিক্ষার্থী সংসদের সাধারন সম্পাদক ছিল। এই হত্যাকান্ডটি সারাদেশে আলোচিত হয়। গ্রেফতারকৃতরা হলো ফরিদপুর শহরের গুহলক্ষীপুর মহল্লার শাহীন শেখ এর পুত্র তানভীর আহম্মেদ সজিব শেখ(২৩), শহরের আলীপুর বাদামতলী সড়ক নিবাসী মৃত আবু তালেব মল্লিক এর পুত্র ইসরাফিল মল্লিক(৩৪), সদর উপজেলার গোলাপদি মাতুব্বরের ডাঙ্গী গ্রামের লিটন বেপারী এর পুত্র সিফাতুল্লাহ বেপারী(১৯) ও শহরের টিবি হাসপাতালের মোড় এলাকার মৃত সামাদ শেখ এর পুত্র মাসুম শেখ(৩৪)। তাদের কাছ থেকে হত্যাকান্ডের সময় ব্যবহৃত মোটরসাইকেল, চাপাতি, সেভেন গিয়ার চাকু ও রেঞ্জসহ হত্যাকারীর গায়ে থাকা রক্তমাখা জামা-কাপড়, জুতা ও বেল্ট উদ্ধার করা হয়। এদের মধ্যে প্রথম তিনজন ছিনতাই ও হত্যাকান্ডে অংশ নেন আর শেষোক্ত মাসুম তাদের মোটরসাইকেল সরবরাহ করেন। বুধবার দুপুরে ফরিদপুরের পুলিশ সুপারের কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত এক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান পুলিশ সুপার মো. শাহজাহান। তিনি বলেন, একই রাতে ছিনতাইকারী দলটি প্রান্তকে হত্যার পর একটি মোটর সাইকেলযোগে ঘুরে ঘুরে শহরের বিভিন্ন এলাকায় আরো কয়েকটি ছিনতাই সংগঠিত করে। সংবাদ সম্মেলনে নিহত প্রান্ত মিত্রের বাবা বিকাশ মিত্র, মা পুতুল মিত্রসহ পরিবারের সদস্যরাও উপস্থিত ছিলেন। সংবাদ সম্মেলনে পুলিশ সুপার মো. শাহজাহান বলেন, গ্রেফতারকৃতরা সবাই মাদকসেবী। জেলখানা থেকে তাদের একে অপরের সাথে সখ্যতা ও সংঘবদ্ধতা। তারা মাদকসেবন ও পতিতালয়ে স্ফূর্তির জন্য এসব ছিনতাই করত। তিনি বলেন, গত ২৫ জুলাই রাত ২টার দিকে হৃদয় নামে এক বন্ধুর বোনের ডেলিভারি সংক্রান্ত জটিলতায় সহায়তা করতে প্রান্ত শহরের ওয়ারলেসপাড়ার বাসা হতে বের হন। এরপর একটি রিকশায় হাসপাতালে যাওয়ার পথে আলিমুজ্জামান ব্রিজের ঢালে তিন ছিনতাইকারী তার স্মার্ট ফোন ও দু’হাজার টাকা ছিনিয়ে নেয়। এসময় ধস্তাধস্তির একপর্যায়ে তার বুকে চাকু দিয়ে কোপ মেরে তাকে হত্যা করা হয়। সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে জানানো হয়, ছিনতাইকারীরা প্রান্তকে হত্যার পরে রাত পৌনে ৪টার দিকে আলীপুর বাদামতলী সড়কে একজন সবজিবিক্রেতার ভ্যান থামিয়ে তিন হাজার টাকা ছিনতাই করে। রাত সোয়া ৪টার দিকে ঝিলটুলীতে পুরাতন পাসপোর্ট অফিসের সামনে ধুলদি মসজিদের ইমাম মুফতি আবু নাসিরের কাছ থেকে চাপাতির ভয় দেখিয়ে একটি স্মার্ট ফোন ও নগদ ৭০০টাকা ছিনতাই করে। ভোর ৪টা ৫০ মিনিটের দিকে শহরের কমলাপুরে জেলা জাকের পার্টির সভাপতি মশিউর রহমান যাদু মিয়াকে কুপিয়ে জখম করে তার স্মার্ট ফোন ছিনতাই করে। তারপর ভোর ৫টার পরে তারা পূর্ব খাবাসপুর অন্ধকল্যাণ হাসপাতালের সামনে শরীফ উল্লাহ মাহমুদ মিয়া নামে একজন চিকিৎসকের কাছ থেকে একটি ল্যাপটপ, একটি স্মার্ট ফোন ও নগদ টাকা ছিনতাই করে। প্রেস ব্রিফিংয়ে বলা হয়, এসব গণছিনতাইয়ের অভিযোগ পেয়ে পুলিশের উর্ধ্বতন কর্মকতা, থানা পুলিশ ও ডিবির সমন্বয়ে পুলিশের একটি চৌকস টিম গঠন করে মামলার তদন্ত পরিচালনা করা হয়। বিভিন্ন সিসি টিভি ফুটেজ পর্যালোচনা ও তথ্য প্রযুক্তির সহায়তায় মঙ্গলবার সন্ধ্যায় ঢাকার শ্যামপুর হতে তানভীর আহম্মদ সজিব শেখকে গ্রেফতার করা হলে তার কাছ থেকে নিহত প্রান্ত মিত্রের ছিনতাই হওয়া মোবাইল সেট উদ্ধার করা হয়। এরপর তার স্বীকারোক্তি অনুযায়ী মধুখালী হতে আরেক আসামি ইসরাফিল মোল্লাকে গ্রেফতার করার পর তার কাছ থেকে যাদু মিয়ার ছিনতাই হওয়া মোবাইল সেট উদ্ধার করা হয়। তাদের দেয়া তথ্য অনুযায়ী পরে অন্যান্য মালামাল উদ্ধার করা হয়। সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে পুলিশ সুপার বলেন, কুপিয়ে আহত হওয়ার পর প্রান্তের শরীর রোড ডিভাইডারের উপর হাঁটু ভাঙ্গা অবস্থায় চিৎ হয়ে পড়েছিল। এজন্য তার শরীরে রক্তক্ষরণ হলেও তার বেশিরভাগই পেটের খালি স্থানে জমে ছিল বলে পোস্টমর্টেমে দেখা যায়। পোস্টমর্টেমকারী চিকিৎসক জানান, আড়াই থেকে তিন লিটার রক্ত তার শরীরের মধ্যে জমা ছিল। অল্পকিছু রক্ত বাইরে বের হয় যা মাটিতে লেগে ছিল। এদিকে, সংবাদ সম্মেলন শেষে নিহত প্রান্তের মা পুতুল মিত্র সাংবাদিকদের দেখে কান্নায় ভেঙে পড়েন। তিনি কান্নাজড়িত কন্ঠে আসামিদের সর্বোচ্চ শাস্তি দাবি করে বলেন, ‘আমি তো টিকতে পারতেছি না। আমার ছেলে সারাজীবন পরের উপকার করতে করতে নিজের জীবন দিয়ে গেল। এমনভাবে আর কারো জীবন যেন না যায়।’ সংবাদ সম্মেলনে পুলিশের অন্যান্য কর্মকতা ছাড়াও প্রিন্ট, ইলেকট্রনিক ও অনলাইন মিডিয়ার সাংবাদিকরা উপস্থিত ছিলেন। উল্লেখ্য ২৫ জুলাই দিবাগত রাত আড়াইটার দিকে হৃদয় নামে এক বন্ধুর ফোন পেয়ে শহরের ওয়ারলেসপাড়ার বাসা থেকে রিকশায় করে শিশু হাসপাতালের উদ্দেশে যাওয়ার পথে ছুরিকাঘাতে নিহত হন প্রান্ত। এর দুদিন পরে ২৭ জুলাই দিবাগত রাতে প্রান্তের বাবা বিকাশ মিত্র অজ্ঞাতনামা আসামিদের বিরুদ্ধে কোতয়ালী থানায় এ মামলা করেন।




শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর









© All rights reserved © 2020 khoborpatrabd.com
Theme Developed BY ThemesBazar.Com