ইসলামের বিধিবিধান সম্পর্কে যাদের সঠিক ধারণা নেই, কেবল তারাই মতভেদ শব্দটি শোনামাত্র ভ্রু কুঞ্চিত করেন। তাদের জেনে রাখা উচিত, মতানৈক্য মাত্রই পরিত্যাজ্য নয়। কেননা কিছু মতভেদ আছে যা সৃষ্টি হয় দলিল থেকে। দলিলই যার উৎস। আর কিছু মতভেদ সৃষ্টি হয় মূর্খতা ও হঠকারিতা থেকে। দলিল সম্পর্কে অজ্ঞতাই এ মতভেদের কারণ। ইসলামে প্রথম মতভেদটা স্বীকৃত আর দ্বিতীয়টা নিন্দিত। তবে ইসলামের মৌলিক আকিদা ও অকাট্য বিষয়ে মতভেদের কোনো সুযোগ নেই। দ্বীনের শাখাগত বিষয়ে দলিলভিত্তিক মতভেদ হতে পারে এবং তা হয়েছেও।
এটি নবীজী-সাহাবি, তাবেয়িদের যুগেও ছিল এবং কিয়ামত পর্যন্ত থাকবে। এই মতভেদের বিষয়ে শরিয়তের বিধান হলো- তা বিলুপ্ত করার চেষ্টা করা ভুল। একে বিবাদ-বিসংবাদের মাধ্যম বানানো অপরাধ। এ শ্রেণীর মতভেদ প্রকৃতপক্ষে গন্তব্যে পৌঁছার বিভিন্ন মাধ্যম। সিরাতে মুস্তাকিমের বিভিন্ন পথরেখা। এগুলোর কোনোটাকে প্রত্যাখ্যান করা কিংবা অনুসরণের অস্বীকৃতি জ্ঞাপন করা শরিয়তের দৃষ্টিতে অবৈধ।
হজরত ইবনে উমর রা: থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নবী করিম সা: খন্দক যুদ্ধের দিন ঘোষণা করলেন, কেউ যেন বনু কুরাইজা পৌঁছার আগে সালাত আদায় না করে। পথে আসরের সময় হলে একদল সাহাবি নামাজ আদায় করলেন এবং অপর দল নামাজ থেকে বিরত রইলেন। দ্বিতীয় দলের যুক্তি ছিল রাসূল সা:-এর নির্দেশ। আর প্রথম দল নির্দেশ দ্বারা ‘বিলম্ব না করে দ্রুত পৌঁছা’ উদ্দেশ্য নিয়েছেন। এ ঘটনায় রাসূলুল্লাহ সা: কোনো দলকে তিরস্কার করেননি’ (বুখারি : ৪১১৯)।
মনে রাখতে হবে, দলিলবিহীন, মূর্খতাপ্রসূত মতভেদ আপাদমস্তক নিন্দিত। দ্বীনের স্বতঃসিদ্ধ বিষয়াদি এবং ইমামদের সর্বসম্মত ঐকমত্য বিষয়ে দ্বিমত প্রকাশ এই নিন্দিত মতভেদেরই অন্তর্ভুক্ত। বলা বাহুল্য সিরাতে মুস্তাকিমের অন্তর্গত বিভিন্ন পথ এবং সিরাতে মুস্তাকিম থেকে বিচ্যুত বিভিন্ন পথের হুকুম এক নয়। এ কারণেই সিরাতে মুস্তাকিমের ওপর পূর্ণ প্রতিষ্ঠিত আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাতের ইমাম ও আলেমদের মাঝে শাখাগত মতপার্থক্য হলেও বিভেদ ও বিচ্ছিন্নতার কোনো আলামত পরিলক্ষিত হয়নি। রাসূলুল্লাহ সা: খুলাফায়ে রাশেদিনের সুন্নাহ ও সাহাবায়ে কেরামের তরিকাকে বিভেদ ও বিদআত থেকে বাঁচার মানদণ্ড বলে ঘোষণা করেছেন অথচ দ্বীনের শাখাগত বিষয়ে তাদের মাঝেও মতপার্থক্য হয়েছে; কিন্তু এ কারণে তাদের মাঝে সৃষ্টি হয়নি বিভেদ, নষ্ট হয়নি প্রীতি ও সম্প্রীতি।
লেখক : মুহাদ্দিস, জামিয়া ইসলামিয়া হামিদিয়া বটগ্রাম, সুয়াগাজী, কুমিল্লা