সোমবার, ৩০ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ১২:১২ অপরাহ্ন

চন্দ্র বিভাজনের মুজিজা

আবু বকর রাকিব
  • আপডেট সময় সোমবার, ১৪ আগস্ট, ২০২৩

মানবজাতির সর্বশ্রেষ্ঠ শিক্ষক বিশ্বনবী হজরত মুহাম্মাদ সা:-এর জীবন সেই শৈশব থেকে ওফাত পর্যন্ত মুজিজা বা মহাবিস্ময়কর অনেক ঘটনায় ভরপুর ছিল। আমরা জানি মুজিজা বা অলৌকিক ঘটনা সাধারণ মানুষ বা সাধারণ কার্যকারণ বা চালিকাশক্তির মাধ্যমে ঘটানো সম্ভব নয়। পবিত্র কুরআনে বিশ্বনবী সা:-এর অন্য যেসব মুজিজার কথা উল্লেখ করা হয়েছে সেসবের মধ্যে চাঁদকে দ্বিখ-িত করার ঘটনা অন্যতম।
চন্দ্র বিভাজন বা দ্বিখ-ন হলো ইসলামী ঐতিহাসিক বর্ণনানুসারে, ইসলামের নবী মুহাম্মাদ সা: কর্তৃক প্রদর্শিত একটি মুজিজা বা অলৌকিক ক্ষমতা। সবকিছুতে ব্যর্থ হয়ে মদিনায় হিজরতের পাঁচ বছর আগে ইহুদি প-িতরা কুরাইশ নেতাদের একটি কূটকৌশল শিখিয়ে দিলো। তারা বলল, মুহাম্মাদ জাদুকর কি না, যাচাইয়ের একটি প্রকৃষ্ট পন্থা এই যে, জাদুর প্রভাব কেবল জমিনেই সীমাবদ্ধ থাকে। আসমানে এর কোনো প্রতিক্রিয়া হয় না। অতএব তোমরা মুহাম্মাদকে বলো, সে চাঁদকে দ্বিখ-িত করুক। সম্ভবত হজরত মূসা আ: কর্তৃক লাঠির সাহায্যে নদী বিভক্ত হওয়ার মুজিজা থেকেই চন্দ্র দ্বিখ-িত করার চিন্তাটি ইহুদিদের মাথায় এসে থাকবে। অথচ নদী বিভক্ত করার চেয়ে চন্দ্র দ্বিখ-িত করা কতই না কঠিন বিষয়। কেননা এটি দুনিয়ার এবং অন্যটি আকাশের। কুরাইশ নেতারা মহাখুশিতে বাগবাগ হয়ে গেল এই ভেবে যে, এবার নির্ঘাত মুহাম্মাদ কুপোকাত হবে। মক্কার কাফির ও মুশরিকদের একদল নেতা আল্লাহর রাসূল হজরত মুহাম্মাদ সা:-এর কাছে আসে। তাদের মধ্যে আবু জেহেল, ওয়ালিদ বিন মুগিরাহ, আস ইবনে ওয়ায়েল, আস ইবনে হিশাম, আসওয়াদ ইবনে আবদে ইয়াগুস, আসওয়াদ ইবনে মুত্তালিব, জামআহ ইবনুল আসওয়াদ, নজর ইবনে হারেস প্রমুখ ছিল। ওই দিন রাতের আকাশে পূর্ণ চাঁদ দেখা যাচ্ছিল। তারা বলল, ‘আপনার নবুওয়াতের দাবি যদি সত্য হয়ে থাকে তাহলে এই চাঁদকে দ্বিখ-িত হতে বলুন।’ মুহাম্মাদ সা: বললেন, ‘এ কাজ করলে কি তোমরা ঈমান আনবে?’ তারা বলল, ‘হ্যা’।
অতঃপর রাসূল সা: আল্লাহর কাছে এ বিষয়ে প্রার্থনা করলেন। তার প্রার্থনা কবুল হলো। অতঃপর চাঁদ স্পষ্টভাবে দ্বিখ-িত হয়ে গেল এবং দুই খ-ের মাঝখানে হেরা পর্বত দৃশ্যমান হলো। দুই খ-ের এক খ- আবি কুবাইস পাহাড় বরাবর, অপরটি কাইকাআন বরাবর দৃশ্যমান হলো। ইবনে কাসিরসহ সংখ্যাগরিষ্ঠ প্রাথমিককালের ইসলামী ইতিহাস রচয়িতারা এ ঘটনাকে নির্ভুল বলে সিদ্ধান্ত দিয়েছেন। এ সময় মুহাম্মাদ সা: বলছিলেন, ‘সাক্ষী থাকো ও দেখো’। কাফির ও মুশরিকরা এই অসাধারণ দৃশ্য দেখে বিস্ময়ে হতবাক হয়ে গেল; কিন্তু তারা ঈমান না এনে বলল, ‘মনে হয়, আপনি আমাদেরকে জাদু করেছেন’। চন্দ্র দ্বিখ-িত করার এ ঘটনাকে বলা হয় ‘শাক্কুল কামার’ যার পরিপ্রেক্ষিতে সূরা কামার (চন্দ্র) অবতীর্ণ হয়। এর প্রথম দুই আয়াত হলো : ‘কিয়ামত সমাসন্ন, চন্দ্র বিদীর্ণ হয়েছে। তারা যদি কোনো নিদর্শন দেখে তবে মুখ ফিরিয়ে নেয় এবং বলে এটি তো চিরাচরিত জাদু।’ (৫৪ : ১-২)
এ ব্যাপারে হাদিসে উল্লেখ রয়েছে- আনাস ইবনু মালিক রা: থেকে বর্ণিত- মক্কাবাসী রাসূলুল্লাহ সা:-কে তাঁর নবুওয়াতের নিদর্শন দেখানোর দাবি জানাল। তিনি তাদেরকে চাঁদ দু’খ- করে দেখালেন। এমনকি তারা দু’খ-ের মধ্যে হেরা পাহাড়কে দেখতে পেল। (বুখারি-৩৮৬৮, মুসলিম-২৮০০)
তারিখে ফিরিশতায় বর্ণিত হয়েছে যে, চন্দ্র দ্বিখ-িত হওয়ার এই অলৌকিক দৃশ্য ভারতের তৎকালীন মালাবারের রাজা চক্রবর্তী ফারমাস (চেরামান পিরুমেল) স্বচখে দেখেন এবং তা নিজের রোজনামচায় লিপিবদ্ধ করেন। পরে আরব বণিকদের মুখে ঘটনা শুনে তখনকার রাজা ‘সামেরি’ ওই রোজনামচা বের করেন। অতঃপর তাতে ঘটনার সত্যতা দেখে তিনি মুসলমান হয়ে যান। যদিও সামরিক নেতা ও সমাজনেতাদের ভয়ে তিনি ইসলাম গোপন রাখেন। ভারতীয় রাজা যে ঘটনা দেখেছিলেন তার লিখিত বিবরণের একটি প্রাচীন দলিল বর্তমানে লন্ডনে ভারতীয় দফতরের লাইব্রেরিতে সংরক্ষিত রয়েছে।
বলা হয়, ১৯৬৯ সালের ২১ জুলাই রাত ২টা ১৬ মিনিটে চন্দ্রে প্রথম পদাপর্ণকারী দলের নেতা নীল আর্মস্ট্রং স্বচক্ষে চন্দ্রপৃষ্ঠের বিভক্তি রেখা দেখে বিস্ময়াভিভূত হন এবং ইসলাম কবুল করেন। কিন্তু মার্কিন প্রশাসনের ভয়ে তিনি এ কথা কয়েক বছর পরে প্রকাশ করেন।
মার্কিন মহাশূন্য সংস্থা নাসার নভোচারীদের মাধ্যমে তোলা ছবিতেও চাঁদের মধ্যে গভীর ফাটলের চিহ্ন বা দাগ দেখা গেছে এবং এ থেকে স্পষ্ট হয় যে, কোনো একসময় চাঁদ দ্বিখ-িত হয়েছিল।
ফাখরে রাজি তাফসিরে মাফাতিহুল গাইবে সূরা কামারের তাফসিরে লিখেছেন, সব তাফসিরকার এ ব্যাপারে একমত যে চাঁদে ফাটল বা ভাঙন দেখা দিয়েছিল এবং গোটা চাঁদ দ্বিখণ্ডিত হয়েছিল। এ ঘটনা সম্পর্কে হাদিসের প্রায় ২০টি বর্ণনা রয়েছে এবং এ ঘটনার সত্যতার ব্যাপারে কোনো সন্দেহ নেই। লেখক : আরবি বিভাগ, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়




শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর









© All rights reserved © 2020 khoborpatrabd.com
Theme Developed BY ThemesBazar.Com