রবিবার, ২৮ এপ্রিল ২০২৪, ০৮:১২ অপরাহ্ন
শিরোনাম ::
নেত্রকোনায় বোরো ফসলের বাম্পার ফলনে কৃষকদের মুখে হাঁসি উন্নয়ন করাই আমার একমাত্র মিশন ও ভিশন-মহিউদ্দিন মহারাজ, এমপি ফটিকছড়িতে এক বৈদ্যকে দা, দিয়ে কুপিয়ে হত্যা, অভিযুক্ত গ্রেফতার বোয়ালমারীতে ফসলের ক্ষতি করে চলছে ব্যাটারি প্রসেসিং ইন্ডাস্টি বরিশালে আল্লাহর রহমত কামনায় ইসতেসকার নামাজ আদায় জলঢাকায় পৌর উপ নির্বাচনকে ঘিরে স্থানীয় এমপির বিরুদ্ধে অপপ্রচারের প্রতিবাদে সংবাদ সম্মেলন বরিশালে পানির স্তর নেমে যাওয়ায় চাপকলে উঠছে না পানি সাংবাদিক নাদিম হত্যাকারীরা জামিনে এসে পরিবারকে হুমকি দিচ্ছে, ১০ মাসেও আটক হয়নি মূল খুনি মাধবদীতে চাহিদা বেড়েছে তরমুজের, ক্রেতা কম ডাবের হাসপাতালে ডাক্তার উপস্থিত না থাকলেই কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে-স্বাস্থ্যমন্ত্রী

পরিবেশের প্রয়োজনেই হাতি বাঁচাতে হবে

প্রকাশ ঘোষ বিধান
  • আপডেট সময় শুক্রবার, ২৫ আগস্ট, ২০২৩

শুঁড় হাতের মতো ব্যবহার করতে পারার জন্য নাম হাতি। দলবদ্ধ জন্তু। তবে ক্রমাগত আবাসস্থল ধ্বংস, খাদ্যাভাব এবং মানুষের সঙ্গে দ্বন্দ্বে দিন দিন হাতির সংখ্যা কমছে। হাতিকে সংকটাপন্ন প্রাণী হিসাবেও চিহ্নিত করা হয়েছে। সারা বিশ্বে এশিয়ান হাতির সংখ্যা ৩৫ থেকে ৪০ হাজার দাবি করা হয়। বাংলাদেশে এ সংখ্যা ২০০-এর বেশি হবে না। সারা বিশ্বে চার লাখের মতো আফ্রিকান হাতি টিকে আছে। এশিয়ান হাতি ও আফ্রিকান হাতি শারীরিকভাবে দেখতে প্রায় একই রকম, তবু এদের মধ্যে জৈবিক পার্থক্য রয়েছে। এশিয়ান হাতি সাধারণত উচ্চতায় ৬ থেকে ১১ ফুট হয়ে থাকে আর আফ্রিকান হাতি ৬ থেকে ১৩ ফুট। এশিয়ান হাতির ওজন ২ থেকে ৫ টন, আফ্রিকান হাতির ওজন ২ থেকে ৭ টন। এশিয়ান হাতির কান ছোট, আফ্রিকান হাতির কান বড়। এশিয়ান হাতির বুকের হাড় ২০ জোড়া, আফ্রিকান হাতির বুকের হাড় ২১ জোড়া। আফ্রিকান হাতির স্ত্রী-পুরুষ উভয়ের প্রলম্বিত দাঁত আছে। এশিয়ান হাতির ক্ষেত্রে শুধু পুরুষের দাঁত রয়েছে।
পৃথিবীর সবচেয়ে বড় স্তন্যপায়ী প্রাণী হাতি। ইংরেজি এলিফ্যান্ট শব্দটি এসেছে গ্রিক শব্দ এলিফাস থেকে যার অর্থ আইভরি বা গজদন্ত। হাতি অনেক বুদ্ধিমান প্রাণী। স্ত্রী হাতি পরিবারের নেতৃত্ব দেয়। একটি স্ত্রী হাতির নেতৃত্বে ১০ থেকে ২৫টি হাতি পরিবারের মতো একসঙ্গে বাস করে। পুরুষ হাতি ৮ থেকে ১৫ বছর বয়সের মধ্যে নিজ পরিবার ত্যাগ করে সঙ্গীর সন্ধানে অন্য ছোট পরিবারের সঙ্গে থাকতে শুরু করে। হাতির ৪ ঘণ্টা ঘুমালেই চলে। তারা বেশির ভাগ দাঁড়িয়ে ঘুমায়। গভীর ঘুমের জন্য হাতি একপাশে ফিরে শোয় এবং জোরে জোরে নাক ডাকে। হাতির গর্ভকাল প্রায় ২২ মাস। হাতির বাচ্চার ওজন হয় ২৬০ পাউন্ড। সাধারণত হাতি ৬০ থেকে ৮০ বছর বাঁচে। হাতির গজদন্ত জীবনভর বৃদ্ধি পায়। পূর্ণ বয়স্ক পুরুষ হাতির গজদন্ত বছরে ৭ ইঞ্চি বাড়ে। এশিয়ান স্ত্রী হাতির গজদন্ত থাকে না। হাতির শুঁড় অনেক শক্তিশালী হয়। যা দিয়ে গাছের ডালপালা ভেঙে ফেলতে পারে। পানি পান করা ও গোসলের জন্য হাতি শুঁড় ব্যবহার করে। প্রতিদিন একটি হাতির সর্বনি¤œ ১০০ কেজি খাবার ও ১২০ লিটার পানি প্রয়োজন হয়। হাতির বড় কান দুটি তাপ সুরক্ষায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। হাতির জীবনদশায় ছয়বার কষদাঁত বের হয়। চিবিয়ে চিবিয়ে ক্ষয়ে যায়, এর পর খাদ্য গ্রহণ করতে না পারায় অনাহারে মৃত্যু হয়।
বাংলাদেশের স্থায়ী বন্য হাতির আবাসস্থল হচ্ছে চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, বান্দরবান, রাঙ্গামাটি ও খাগড়াছড়ি। এর মধ্যে চট্টগ্রামের চন্দনাইনা, বাঁশখালী, পটিয়া ও রাঙ্গুনিয়া। কক্সবাজারের কাসিয়াখালি, রামু, উখিয়া ও টেকনাফ। বান্দরবানের লামা ও আলিকদম। রাঙ্গামাটির কাউখালি, কাপ্তাই ও লংদু এবং খাড়গাছড়িসহ দেশের ১১টি বন বিভাগে এদের বিচারণ দেখা যায়। বাংলাদেশে অভিবাসী হাতির সংখ্যা ৮৪ থেকে ১০০টি। একসময় বাংলাদেশের বড় বড় বনে বুনো হাতির অবাধ বিচরণ ছিল। বর্তমানে স্বল্প সংখ্যক হাতি টিকে আছে। বনের প্রতিবেশব্যবস্থায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালনকারী এই প্রাণীটি এখন মহাবিপন্ন। ৯টি কারণে বাংলাদেশে হাতি কমছে। আইইউসিএনের গবেষণা প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছেÍবনাঞ্চল নিশ্চিহ্ন হয়ে যাওয়া, খাদ্য সংকট, চলাচলের পথ রুদ্ধ হয়ে যাওয়া, যত্রতত্র জনবসতি গড়ে ওঠা, চোরাশিকারিদের নিষ্ঠুরতা ইত্যাদি।
মানুষ জীবন-জীবিকার জন্য বনের ওপর অনেকাংশে নির্ভরশীল হয়ে পড়ায় বন্য প্রাণীর ওপর বিরূপ প্রভাব পড়েছে। খাদ্য সংকটের কারণে এরা অনেকক্ষেত্রে লোকালয়ে ঢুকছে। তারা খাবারের জন্য ফসলের মাঠ ও মজুদ করা খাদ্যশস্যের জন্য বাড়ি-ঘরে হানা দিচ্ছে। এর ফলে মানুষের সঙ্গে হাতির সংঘর্ষ বাড়ছে। তাছাড়া হাতির চলাচলের পথ রুদ্ধ এবং আবাসস্থল কৃষিকাজে বেদখল হওয়ার কারণে মানুষ ও হাতির বিরোধ সংঘটিত হচ্ছে। এজন্য হাতির আবাসস্থল বন-জঙ্গল উজাড় করা বন্ধ করতে হবে। পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষায় তাৎপর্যপূর্ণ ভূমিকা পালনের জন্য হাতিকে ‘ফরেস্ট ইঞ্জিনিয়ার’ বলা হয়। হাতিকে বনের ইন্ডিকেটর স্পেসিসও বলা হয়। বনে হাতির আবাসস্থলে নিরুপদ্রব বিচরণ এবং খাদ্য সংকট নিরসন করতে পারলে হাতির সুরক্ষা অনেকাংশে সম্ভব হবে।- উৎস: দৈনিক ইত্তেফাক




শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর









© All rights reserved © 2020 khoborpatrabd.com
Theme Developed BY ThemesBazar.Com