বিচার বিভাগকে রাজনৈতিক প্রভাবমুক্ত রাখার আহ্বান জানিয়ে প্রধান বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকী বলেছেন, বিচার বিভাগকে রাজনৈতিক প্রভাবমুক্ত রাখতে ব্যর্থ হলে জাতিকে খারাপ সময়ের জন্য অপেক্ষা করতে হবে।
গতকাল বৃহস্পতিবার আপিল বিভাগের এজলাস কক্ষে বিদায়ী সংবর্ধনা দেয়ার সময় তিনি এ কথা বলেন।
প্রধান বিচারপতি বলেন, মানুষ শাসন বিভাগ, আইন বিভাগের প্রতি আস্থা হারাতে পারে। কিন্তু বিচার বিভাগের প্রতি আস্থা হারালে ওই জাতিকে খারাপ সময়ের জন্য, খারাপ দিনের জন্য অপেক্ষা করতে হবে। তিনি বলেন, বিচার বিভাগ জনগণের মৌলিক অধিকারের রক্ষক। সংবিধানের রক্ষক।
তাই বিচারকদের সাহসী ও সুবিচারক হতে হবে। এর আগে প্রধান বিচারপতিকে অ্যাটর্নি জেনারেল অফিস ও সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির পক্ষ থেকে বিদায়ী সংবর্ধনা দেয়া হয়।
দেশের ২৩তম প্রধান বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকী অবসরে যাচ্ছেন আগামী ২৫ সেপ্টেম্বর। কিন্তু সে সময় সুপ্রিম কোর্টে অবকাশকালীন ছুটি চলবে। সে জন্য আজ প্রধান বিচারপতির বিচারিক জীবনের শেষ কর্মদিবস।
২০২১ সালের ৩১ ডিসেম্বর বঙ্গভবনে প্রধান বিচারপতি হিসেবে বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকীকে রাষ্ট্রপতি মো: আবদুল হামিদ শপথ বাক্য পাঠ করান। প্রধান বিচারপতির সংবর্ধনা বর্জন করলেন আইনজীবীদের একাংশ:প্রধান বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকীর বিদায়ী সংবর্ধনা বর্জন করেছেন সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবীদের একাংশ। বৃহস্পতিবার সকালে আইনজীবীরা প্রধান বিচারপতির বিদায়ী সংবর্ধনায় অংশ না নিয়ে সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতি ভবনের সামনে বিদায়ী সংবর্ধনা বর্জন সভা করেন। সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির ব্যানারে এ সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভায় উপস্থিত থাকা বেশিরভাগ আইনজীবী ছিলেন বিএনপি সমর্থক ও সরকার বিরোধী আইনজীবীদের মোর্চা ইউনাইটেড লইয়ার্স ফ্রন্টের সদস্য। সভায় সুব্রত চৌধুরী বলেন, আপনারা যখন আইনজীবী ছিলেন তখন এই সুপ্রিম কোর্টে কী করেছেন? তা আইনজীবী সমাজ জানে। প্রধান বিচারপতির দরজায় একজন বিচারপতি লাথি মেরেছেন যা মিডিয়ার প্রকাশিত হয়েছে। আদালত অঙ্গনে মিছিল সমাবেশ নিয়ে যে রায় এখন আমাদের মানতে বলা হচ্ছে, একসময় সেই রায়ই আপনারা সুপ্রিম কোর্ট প্রাঙ্গণে পুড়িয়েছেন। আপনারা অতীত ভুলে গেছেন। আপনারা যা করেছেন, আমরা তার থেকে বেশি করব গণতান্ত্রিক আন্দোলনের মধ্যে। হুঁশিয়ার, বিচার বিভাগকে কলুষমুক্ত করতে আমাদের আন্দোলন অব্যাহত থাকবে। ব্যারিস্টার মাহবুব উদ্দিন খোকন বলেন, মুক্তমনা বিচারপতি দরকার আছে কিন্তু আওয়ামী লীগের বিচারপতি দরকার নেই।
তিনি বলেন, বিচারপতিরা শপথ নিয়ে আইন অনুযায়ী নিরপেক্ষভাবে কাজ করবেন। কিন্তু কিছু বিচারপতি শপথ ভঙ্গ করে আওয়ামী লীগের পক্ষে কাজ করেন। সংবিধান লঙ্ঘন করছেন।
সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির অ্যাডহক কমিটির সদস্য সচিব শাহ আহমেদ বাদলের সভাপতিত্বে ও ইউনাইটেড লইয়ার ফ্রন্টের সুপ্রিম কোর্ট ইউনিটের যুগ্ম কনভেনর মোহাম্মদ আলীর সঞ্চালনায় প্রতিবাদ সভায় বক্তব্য রাখেন ইউনাইটেড লইয়ার ফ্রন্টের সদস্য সচিব সিনিয়র আইনজীবী সুব্রত চৌধুরী, সুপ্রিম কোর্ট বারের সাবেক সম্পাদক ব্যারিস্টার মাহবুব উদ্দিন খোকন, গিয়াস উদ্দিন আহমদ, আইনজীবী আবেদ রাজা, গোলাম মোহাম্মদ চৌধুরী আলাল, সুপ্রিম কোর্ট বারের সাবেক ট্রেজারার ফাহিমা নাসরিন মুন্নী, ইউনাইটেড লইয়ার ফ্রন্টের সমন্বয়ক সৈয়দ মামুন মাহবুব, গোলাম নবী প্রমুখ। এতে অংশ নেন সুপ্রিম কোর্ট বারের সাবেক ট্রেজারার রাগীব রউফ চৌধুরী, মো. কামাল হোসেন, আইনজীবী মো. আক্তারুজ্জামান, সুপ্রিম কোর্ট বারের সাবেক সহ-সম্পাদক মোরশেদ আল মামুন লিটন, আইনজীবী রেজাউল করীম রেজা, হুমায়ুন কবীর মনজু, সৈয়দ মো. তাজরুল হোসেন, মাহমুদ হাসান, মাহবুবুর রহমান খান, সগীর হোসেন লিওন, আবদুল্লাহ আল মাহবুব, শরীফ ইউ আহমেদ, গাজী তৌহিদুল ইসলাম, মো. জহিরুল ইসলাম সুমন, শহিদুল ইসলাম সপু, মাহফুজুর রহমান মিলন, মিজানুর রহমান, আইয়ুব আলী আশ্রাফী, সালমা সুলতানা, ফাতেমা আক্তার, আনিসুর রহমান রায়হান, মো. মাসুদুল আলম দোহা, মো. মাকসুদ উল্লাহ, এ কে এম এহসানুর রহমান, মু. কাইয়ুম ইশাসহ শতাধিক আইনজীবী।