সালাম একটি গুরুত্বপূর্ণ ইবাদত। এর অত্যধিক ফাজায়েলের পাশাপাশি রয়েছে বহু বাস্তবমুখী উপকারিতা। সালামের বিনিময়ে যেমন রয়েছে নেকি, অনুরূপভাবে তা একটি সুন্দর সমাজ গঠন ও পরস্পরের মধ্যে ভালোবাসা সৃষ্টিরও মাধ্যম। সালাম ব্যক্তি ও পারিবারিক জীবনে নিয়ে আসে বরকত। সমাজকে করে নির্মল, সুশোভিত।
কুরআন ও হাদিসে সালাম-সংক্রান্ত বহু বর্ণনা রয়েছে। আল্লাহ তায়ালা বলেন- ‘যখন তোমাদেরকে সালাম দেয়া হয় তখন তোমরা তার চেয়ে উত্তম শব্দ দিয়ে উত্তর দাও। অথবা তার অনুরূপ বলো। নিশ্চয় আল্লাহ সবকিছুর হিসাব গ্রহণকারী।’ (সূরা নিসা-৮৬)
‘রাসূল সা:-কে জিজ্ঞেস করা হলো, কোনটি ইসলামের সর্বোত্তম আমল? রাসূল সা: বলেন, ‘অপরকে আহার করাবে এবং চেনা-অচেনা সবাইকে সালাম দেবে।’ (বুখারি-১২) সালামের মাধ্যমে মনের অহঙ্কার দূর হয়। প্রত্যেকের মধ্যে সৃষ্টি হয় ভ্রাতৃত্ববোধ। যার ফলে সমাজে বয়ে যায় শান্তির স্নিগ্ধ হাওয়া। ইসলাম আগে সালাম দেয়ার প্রতিযোগী মনোভাব সৃষ্টি করার প্রয়াস চালিয়েছে। রাসূল সা: বলেছেন, ‘যে আগে সালাম দেয় নিশ্চয় সে আল্লাহর কাছে শ্রেষ্ঠতর ব্যক্তি।’ (আবু দাউদ-৫১৯৭) তা ছাড়া আগে সালাম দানকারী ব্যক্তি অহঙ্কার থেকে মুক্ত থাকে। রাসূল সা: বলেন, ‘যে আগে সালাম দেয় সে অহঙ্কারমুক্ত থাকে।’ (শুআবুল ঈমান-৪৬৬৬) রাসূল সা: বলেন, ‘আমি তোমাদেরকে কি এমন একটি কাজের কথা বলব, যা করলে তোমারা পরস্পরে ভালোবাসার বন্ধনে আবদ্ধ হবে? তোমরা সমাজে অধিকহারে সালামের প্রসার করো।’ (ইবনে মাজাহ-৩৬৯২) সালামের মাধ্যমে পারিবারিক জীবনেও বরকত নেমে আসে। আনাস রা: থেকে বর্ণিত- রাসূল সা: তাকে বলেন, ‘হে বৎস, তুমি যখন তোমার পরিবারের কাছে যাবে তখন তাদেরকে সালাম দেবে। তাহলে তোমার এবং তোমার পরিবারের ওপর বরকত নেমে আসবে।’ (তিরমিজি-২৯৯৮) রাসূল সা: সালামকে সাম্যের মাপকাঠি বানিয়েছেন। তিনি ছোট-বড় সবাইকে সালাম দিতেন। ‘রাসূল সা: একবার কিছু শিশুর পাশ দিয়ে যাচ্ছিলেন তখন তিনি তাদের সালাম দেন।’ (মুসলিম- ৫৬৬৩) সবার মধ্যে ভ্রাতৃত্ববোধ সৃষ্টি করার লক্ষ্যে সালামের অত্যধিক প্রচার-প্রসারের কথা হাদিসে এসেছে। রাসূল সা: বলেন, ‘যখন তোমাদের কেউ তার ভাইয়ের সাথে সাক্ষাৎ করবে সে যেন তাকে সালাম দেয়। অতঃপর যদি তাদের মধ্যে কোনো গাছ, দেয়াল বা পাথর প্রতিবন্ধক হয়ে পুনরায় সাক্ষাৎ হয় তখনো যেন সালাম দেয়।’ (আবু দাউদ-৫২০০) সালাম আমাদেরকে হিংসামুক্ত করে। অন্তর থেকে দূর করে বিদ্বেষ। সমাজকে করে একতাবদ্ধ। অহঙ্কার দূর করে সবাইকে ভ্রাতৃত্বের বন্ধনে আবদ্ধ করে। আমাদের মধ্যে ছড়িয়ে দেয় শান্তির সুশীতল হাওয়া। উপহার দেয় একটি বৈষম্যহীন সুন্দর সমাজ। লেখক : রায়পুর, লক্ষ্মীপুর