রাসূল সা: রাতের অবসর মুহূর্তকে ইবাদতের মোক্ষম সুযোগ হিসেবে গ্রহণ করতেন। এশার সালাতের পর কথা বলা একেবারেই পছন্দ করতেন না। খুব জরুরি বিষয় না হলে কারো সাথে এ সময় দেখা পর্যন্ত করতেন না। মসজিদ থেকে সোজা অন্দরে চলে আসতেন। পরিবার-পরিজনের সাথে কিছুক্ষণ আলাপের পর সারা দিনের ক্লান্ত দেহটাকে বিছানায় এলিয়ে দিতেন। রাতের প্রথম ভাগে নিদ্রা যেতেন। অবশিষ্ট রাত ইবাদতে অতিবাহিত করতেন। অর্ধরাত পার হওয়ার কিছু পরেই চোখ ঘষতে ঘষতে উঠে পড়তেন। সেই অর্ধজাগরণ-অর্ধঘুমস্ত অবস্থাতেও মুখে ইস্তিগফার অথবা কুরআনের কোনো আয়াত উচ্চারিত হতো। মিসওয়াক ও অজুর পর ইবাদত শুরু করতেন। এর পর দীর্ঘ সময় ধরে সালাত আদায় করতেন।
জায়েদ ইবনে খালেদ আল জুহানি রা: বলেন, আমি একবার মনে মনে প্রতিজ্ঞা করলাম, আজ রাতে রাসূল সা:-এর রাতের সালাতের প্রতি লক্ষ রাখব। এর পর আমি দেখলাম যে তিনি ঘুম থেকে উঠে মিসওয়াক ও অজু করে সংক্ষিপ্ত দুই রাকাত সালাত পড়েন। তারপর দীর্ঘায়িত করে দুই রাকাত সালাত পড়েন। তারপর আরো দুই রাকাত সালাত পড়েন, এ দুই রাকাত আগের দুই রাকাতের চেয়ে কিছুটা সংক্ষিপ্ত করেন। এর পর আরো দুই রাকাত সালাত পড়েন, এ দুই রাকাত ছিল আগের দুই রাকাতের চেয়েও সংক্ষিপ্ত। তারপর আরো দুই রাকাত সালাত পড়েন, তা ছিল আগের দুই রাকাতের চেয়ে সংক্ষিপ্ত। অতঃপর বিতর সালাত পড়েন। সর্বমোট সালাত পড়েছেন ১৩ রাকাত। (মুসলিম, মুয়াত্তা ও আবু দাউদ)
রাসূল সা: রাতের সালাতে কান্না করতেন। এমনকি সাহাবিরা তাঁর কান্নার শব্দ শুনতেন। আবদুল্লাহ ইবনে শুখাইর রা: বলেন, একবার আমি দেখলাম রাতের বেলা সালাতের মধ্যে ডুবে আছেন তিনি। দু’টি নয়ন থেকে অশ্রু প্রবাহিত হচ্ছে। রোদনের প্রবল বেগ সংবরণ করতে গিয়ে জবান মুবারক থেকে এমন একপ্রকার শব্দ বেরুচ্ছে যেন মনে হয় আটার চাকি চলছে অথবা উত্তপ্ত কড়াইয়ে কোনো কিছু টগবগ করে সিদ্ধ হচ্ছে। (তিরমিজি ও আবু দাউদ)
রাসূল সা:-এর রাতের সালাত বেশ দীর্ঘ হতো। মুগিরা রা: বলেন, মহানবী সা: রাতের সালাতে এত দীর্ঘ সময় ধরে দাঁড়িয়ে থাকতেন যে, তাঁর কদম মোবারক ফুলে যেত। তাঁকে জিজ্ঞেস করা হয়েছে যে, আপনি এমন কেন করেন, অথচ আপনার অতীতের ও ভবিষ্যতের সব গুনাহ ক্ষমা করা হয়েছে। তিনি প্রত্যুত্তরে বলেছেন, আমি কি কৃতজ্ঞশীল বান্দা হব না? (বুখারি ও মুসলিম)। লেখক : শিক্ষক ও ইসলামবিষয়ক গবেষক, বাকলিয়া, চট্টগ্রাম