সোমবার, ২৫ নভেম্বর ২০২৪, ১১:৩৩ অপরাহ্ন

আসমান-জমিন কার মৃত্যুতে কাঁদে

মুফতি মুহাম্মদ রফিকুল ইসলাম
  • আপডেট সময় মঙ্গলবার, ১২ সেপ্টেম্বর, ২০২৩

যিনি আল্লাহ তায়ালা, ফেরেশতাগণ, সমগ্র আসমানি কিতাব, সমস্ত রাসূল, পরকাল ও তাকদিরের ভালো-মন্দের প্রতি বিশ্বাস স্থাপন করেন তিনি হলেন মু’মিন। (মিশকাত-হাদিসে জিবরাইল আ: পৃষ্ঠা-১১) একজন মু’মিনের মূল্য আল্লাহ তায়ালার কাছে সমস্ত জগতের চেয়ে বেশি। আল্লাহ তায়ালার দৃষ্টিতে মু’মিনরা জীবিত এবং কাফিররা মৃত সদৃশ। (সূরা ফাতির-২২) মু’মিনরা চক্ষুষ্মান ও কাফিররা অন্ধ, বধির, বোবা, চতুষ্পদ জন্তু সদৃশ। আসমান-জমিন কার মৃত্যুতে কাঁদে : আল্লাহ তায়ালা সূরা আদ-দোখানের ২৯ নম্বর আয়াতে ইরশাদ করেন- ‘তাদের (ফেরাউন গোষ্ঠীর) জন্য আসমান-জমিন ক্রন্দন করেনি।’ এ আয়াতের মর্মার্থ হলো- ফেরাউন গোষ্ঠী তথা পাপীরা জমিনে কোনো সৎকর্ম করেনি যে, তাদের মৃত্যুতে জমিন ক্রন্দন করবে এবং তাদের কোনো সৎকর্ম আকাশেও পৌঁছায়নি যে, তাদের জন্য আকাশ অশ্রুপাত করবে। অসংখ্য বর্ণনায় প্রমাণিত রয়েছে, কোনো সৎকর্মপরায়ণ বান্দা মৃত্যুবরণ করলে আকাশ ও জমিন ক্রন্দন করে। হজরত আনাস ইবন মালেক রা: থেকে বর্ণিত- মহানবী সা: বলেন, ‘প্রত্যেক মুমিনের জন্য আকাশে দু’টি দরজা আছে। একটি দিয়ে তার রিজিক অবতরণ করে, আরেকটি দিয়ে তার কথা ও আমল আল্লাহর দরবারে পৌঁছে। অতঃপর যখন সে মৃত্যুবরণ করে তখন সব কিছু বন্ধ হয়ে যায়। ফলে আসমান-জমিন তার জন্য কাঁদে।’ (তিরমিজি-৩২৫৫) ইমাম কুরতুবি রহ: বলেন, জমিন এ জন্য কাঁদে যে, একজন নেক আমলকারী বিদায় নিলো, জমিনে সে আর নেককাজ করবে না। আর আকাশ এ জন্য কাঁদে তার মধ্য দিয়ে মু’মিন ব্যক্তির নেক কাজগুলো আকাশে পৌঁছত কিন্তু তার মৃত্যুর ফলে আকাশে তার নেক পৌঁছবে না। হজরত মুজাহিদ বলেন, ‘একজন মু’মিনের মৃত্যুতে ৪০ দিন সকালে ফেরেশতা ক্রন্দন করে।’ (কুরতুবি ১৬তম খ-, পৃষ্ঠা-৯৯) আবু ইয়াহহিয়া বলেন, যে জমিনে মুমিন রুকু সিজদা করেছে এবং যে আকাশ দিয়ে তার নেকগুলো মালিকের দরবারে পৌঁছে, তার মৃত্যুতে সে আসমান-জমিন ক্রন্দন করা কোনো আশ্চর্যের বিষয় নয়। হজরত আলী এবং হজরত ইবনে আব্বাস রা: বলেন, মু’মিনের জন্য জমিনে তার সালাতের জায়গা এবং আকাশে তার নেককাজ পৌঁছার জায়গা ক্রন্দন করে। হজরত শোরায়হ ইবনে ওবায়েদ রা: বলেন, রাসূল সা: বলেছেন, ‘প্রবাসে মৃত্যুবরণ করার দরুন, যে মু’মিনের জন্য ক্রন্দনকারী কেউ থাকে না, তার জন্য আকাশ-জমিন কাঁদে।’ (ইবন জারির-২৫/৭৫) আতা খুরাসানি রহ: বলেন, মু’মিনের সিজদার জায়গা বিচারদিবসে তার জন্য সাক্ষ্য দেবে এবং তার মৃত্যুর দিন ওই জায়গা তার জন্য কাঁদবে। সুদ্দি বলেন, হজরত হুসাইন ইবন আলী রা:-এর শাহাদতের দিন আকাশ ক্রন্দন করেছে। আর আকাশের ক্রন্দন হলো লাল বর্ণ ধারণ করা। ইয়াজিদ ইবনে আবু জিয়াদ বলেন, ‘হজরত হুসাইন রা:-এর শহীদের পর চার মাস পর্যন্ত আকাশের পার্শ্ব রক্তিম বর্ণ ধারণ করেছিল।’ (কুরতুবি ১৬তম খ-, পৃষ্ঠা-১০০)

আল্লাহ তায়ালা মু’মিনকে সালাম দেন : হজরত আবু হুরায়রা রা: বর্ণনা করেন, একদা হজরত জিবরাইল আ: নবী সা:-এর সমীপে হাজির হয়ে বলেন, হে আল্লাহর রাসূল! হজরত খাদিজা রা: আপনার কাছে খাদ্যসামগ্রী নিয়ে আসছে। সে এলে তাকে আল্লাহর ও আমার পক্ষ থেকে সালাম দেবেন। আর জান্নাতে তার জন্য তৈরি গৃহের সুসংবাদ দিন। (মিশকাত-৫৭৩, বুখারি ও মুসলিম) হজরত আয়শা রা: বলেন, একদা রাসূলুল্লাহ সা: বলেন, ‘হে আয়েশা! এই জিবরাইল আ: তোমাকে সালাম দিয়েছেন। হজরত আয়েশা রা: প্রত্যুত্তরে বলেন, তাঁর প্রতি সালাম ও আল্লাহর রহমত বর্ষিত হোক। হজরত জিবরাইল আ:-কে রাসূলুল্লাহ সা: দেখছেন কিন্তু হজরত আয়েশা রা: দেখছেন না।
গুণাগুলো ক্ষমা করেন : হজরত উসমান রা: থেকে বর্ণিত- রাসূল সা: বলেন, ‘মু’মিন বান্দাহ যখন ৪০ বছর বয়সে উপনীত হয় তখন আল্লাহ তায়ালা হিসাব সহজ করে দেন। ৬০ বছর বয়সে পৌঁছলে সে আল্লাহর দিকে রুজু হওয়ার তওফিক লাভ করে। ৭০ বছর বয়সে পৌঁছলে আকাশের অধিবাসীরা তাকে ভালোবাসতে শুরু করে। ৮০ বছর বয়সে পৌঁছলে আল্লাহ তায়ালা তার সৎকর্মগুলো প্রতিষ্ঠিত করেন এবং মন্দ কর্মগুলো মিটিয়ে দেন। যখন সে ৯০ বছর বয়সে পৌঁছে তখন তার গুনাহগুলো ক্ষমা করে দেয়া হয়, তাকে তার পরিবারের লোকজনের জন্য সুপারিশ করার অধিকার দেয়া হয় এবং আকাশে তার নামের সাথে ‘আসিরুল্লাহ ফিল আরদ’ তথা পৃথিবীতে আল্লাহর কয়েদি বলে লিখে দেন।’ (ইবনে কাসির) আল্লাহ তায়ালা ইরশাদ করেন- ‘আমি এমন লোকদের সুকর্মগুলো কবুল করি এবং মন্দকর্মগুলো মার্জনা করি। তারা জান্নাতিদের তালিকাভুক্ত সেই সত্য ওয়াদার কারণে যা তাদের দেয়া হতো।’ (সূরা আহকাফ-১৬)। লেখক : প্রধান ফকিহ, আল জামিয়াতুল ফালাহিয়া কামিল মাদরাসা, ফেনী




শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর









© All rights reserved © 2020 khoborpatrabd.com
Theme Developed BY ThemesBazar.Com