শুক্রবার, ২৯ নভেম্বর ২০২৪, ০৭:২৮ অপরাহ্ন

শীতকালে নেপালে বিদ্যুৎ রফতানি করবে বাংলাদেশ

খবরপত্র ডেস্ক:
  • আপডেট সময় মঙ্গলবার, ১২ সেপ্টেম্বর, ২০২৩

শীতকালে বাংলাদেশ থেকে বিদ্যুৎ কেনার প্রস্তাব দিয়েছে পার্শ্ববর্তী দেশ নেপাল। উভয় দেশ সম্মত হলে শীতকালে বিশেষ করে শুষ্ক মৌসুমে নেপালে বিদ্যুৎ রফতানি হতে পারে। অবশ্য আগে থেকেই গ্রীষ্মকালে নেপাল থেকে বিদ্যুৎ আমদানি করতে চাইছে বাংলাদেশ। আগ্রহের সেই ৪০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ আমদানির বিষয়ে আলাপ-আলোচনার সময়ই নেপাল এমন প্রস্তাব দিয়েছে। শিগগিরই বিষয়টি চূড়ান্ত হবে বলে বিদ্যুৎ মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে।
সূত্র জানিয়েছে, শীতকালে বাংলাদেশে বিদ্যুতের চাহিদা কমে যায়। এ সময় সাধারণত ফ্যান-এসি চালানোর প্রয়োজন হয় না। এর ফলে বাংলাদেশের বিদ্যুতের বাড়তি চাপ থাকে না, উদ্বৃত্ত থাকে। আর বিদ্যুৎ যেহেতু সংরক্ষণ করা যায় না, তাই ‘আর্থিং’ করতে হয়। অন্যদিকে এ সময়টাতে নেপালে উল্টো বিদ্যুতের চাহিদা বাড়ে। কারণ শীতকালে নেপালের বিদ্যুৎ উৎপাদন কমে যায়।
হিমালয়কন্যা নেপালের বিদ্যুৎ মূলত জলবিদ্যুৎ। প্রচণ্ড শীতে সেখানে বরফ জমার কারণে বিদ্যুৎ উৎপাদন বন্ধ থাকে। এ ছাড়া ঠান্ডা থেকে বাঁচতে নেপালের মানুষ শীতকালে ঘর গরম রাখতে ব্যাপকহারে রুম হিটার ব্যবহার করে। এতে বিদ্যুতের চাহিদা বাড়ে; যা নেপালের বিদ্যুৎ বিভাগের পক্ষে উৎপাদন করে সরবরাহ করা সম্ভব নয়। তাই শীতকালে বিদ্যুতের সংকট মেটাতে বাংলাদেশ থেকে উদ্বৃত্ত বিদ্যুৎ আমদানির প্রস্তাব দিয়েছে নেপাল। বাংলাদেশ এই প্রস্তাব বিবেচনা করছে বলে জানিয়েছে বিদ্যুৎ বিভাগ।
জানা গেছে, গ্রীষ্মকালে বাংলাদেশে বিদ্যুতের চাহিদা বাড়লে উৎপাদন সক্ষমতা থাকার পরও বিভিন্ন কারণে চাহিদা অনুযায়ী বিদ্যুৎ উৎপাদন ব্যাহত হয়। সে কারণে চাহিদা মেটাতে নেপাল থেকে বিদ্যুৎ আমদানির জন্য উভয় দেশের সঙ্গে প্রশাসনিক কার্যক্রম চলছে। এ বিষয়ে সবধরনের প্রস্তুতি নেওয়া হচ্ছে। বিষয়গুলো চূড়ান্ত করতে নিয়মিত বৈঠকও করছে বিদ্যুৎ বিভাগ।
বাংলাদেশের পক্ষে নেপাল থেকে ৪০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ আমদানির বিষয়টি শিগগিরই চূড়ান্ত হচ্ছে। এ জন্য নেপাল ও বাংলাদেশের চুক্তিপত্রে আমদানির খুঁটিনাটি দিক বিবেচনা করে সবকিছু চূড়ান্ত করা হচ্ছে। এজন্য একের পর এক নিজেদের মধ্যে বৈঠকও করছেন সংশ্লিষ্টরা। সূত্র জানিয়েছে, বৈঠকে নেওয়া সারসংক্ষেপ বিদ্যুৎমন্ত্রীর দায়িত্বে নিয়োজিত প্রধানমন্ত্রীর কাছে পাঠানো হবে। প্রধানমন্ত্রীর অনুমোদন সাপেক্ষে তা আইনি মতামতের জন্য আইন মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হবে। আইন মন্ত্রণালয়ের মতামত পাওয়ার পর বিষয়টি কেবিনেট বৈঠকে উপস্থাপন করা হবে। কেবিনেটের অনুমোদন পেলেই তা চূড়ান্ত হবে বলে জানিয়েছে বিদ্যুৎ বিভাগ।
এদিকে সম্প্রতি নেপালের একটি অনলাইন নিউজ পোর্টারল ‘কাঠমান্ডু পোস্ট’ তাদের এক প্রতিবেদনে বলেছে, নেপাল থেকে বাংলাদেশে বিদ্যুৎ রফতানি বিলম্ব হচ্ছে। কারণ দেশটি ভারতের সঙ্গে ত্রিপক্ষীয় চুক্তি ও বাংলাদেশ-নেপালের মধ্যে শুল্ক নির্ধারণ প্রসঙ্গটি এখনও চূড়ান্ত করতে পারেনি। তবে শুষ্ক মৌসুমে ভারতের স ালন অবকাঠামোর মাধ্যমে বাংলাদেশে বিদ্যুৎ রফতানি শুরু করতে চায় নেপাল।
তবে এক্ষেত্রে যেহেতু ভারতীয় গ্রিড ব্যবহার করতে হবে, এজন্য দিল্লির সম্মতির প্রয়োজন। তাই ভারতের সঙ্গে ত্রিপক্ষীয় (বাংলাদেশ-ভারত-নেপাল) চুক্তি করতে হবে। এছাড়া বিদ্যুৎ আমদানিতে শুল্ক নির্ধারণের বিষয়টিও অমীমাংসিত আছে। সেটিও নিষ্পত্তির দরকার। শুল্ক আরোপের প্রতিক্রিয়ার অপেক্ষায় রয়েছে নেপাল। ফলে ত্রিপক্ষীয় চুক্তি ও অমীমাংসিত শুল্ক হার এই দুটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে হবে এ সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটিতে। এ কমিটির প্রধান হচ্ছে অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। সংশ্লিষ্ট সূত্রে পাওয়া গেছে এ তথ্য।
এ প্রসঙ্গে অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল জানিয়েছেন, নেপাল থেকে ৪০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ আমদানির বিষয়টি আলোচনার মধ্যে রয়েছে, এটি আগে চূড়ান্ত হোক। নেপাল যদি শীত মৌসুমে তাদের সংকটকালে বাংলাদেশের উদ্বৃত্ত বিদ্যুৎ কিনতে চায়, আমাদের পক্ষ থেকে নেপালে বিদ্যুৎ রফতানির বিষয়টি নিয়ে চিন্তাভাবনা করা যাবে।
একটি সূত্র জানিয়েছে, নেপাল থেকে বাংলাদেশের বিদ্যুৎ আমদানির বিষয়ে বাংলাদেশের পাওয়ার ডেভেলপমেন্ট বোর্ড নেপালের ইলেকট্রিসিটি অথরিটি ও ভারতের বিদ্যুৎ উন্নয়ন নিগমের সঙ্গে গত মে মাসে বিদ্যুতের মূল্য ও ট্রান্সমিশন ফি নিয়ে এ বিষয়ে সমঝোতাও হয়েছে। ট্রান্সমিশন চার্জ ও সার্ভিস ফি পরিশোধ করতে হবে ভারত কর্তৃপক্ষকে। ভারতের বিদ্যুৎবিষয়ক কর্তৃপক্ষ বর্তমানে ক্রেতাদের কাছ থেকে যে পরিমাণ চার্জ নিচ্ছে তার সমপরিমাণ হবে ট্রান্সমিশন চার্জ। এটা ধার্য করা হবে ভারতের উন্মুক্ত নিয়ম অনুযায়ী। তাই নেপাল থেকে বিদ্যুৎ আমদানির জন্য ত্রিপক্ষীয় চুক্তি প্রয়োজন, তাতে জড়িত ভারত। শিগগিরই এ বিষয়ে চুক্তি হবে বলে জানিয়েছে বিদ্যুৎ বিভাগ।
এ প্রসঙ্গে বিদ্যুৎ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ জানিয়েছেন, গ্রীষ্মকালে দেশের চাহিদা মেটাতে নেপাল থেকে ৪০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ আমদানির বিষয়টি প্রক্রিয়াধীন। তবে শীতকালে আমাদের দেশে বিদ্যুতের চাহিদা কমে যায়। পক্ষান্তেরে নেপালে বাড়ে। সেসময় চাহিদা অনুযায়ী তারা বিদ্যুৎ উৎপাদন করতে না পারায় বাংলাদেশ থেকে বিদ্যুৎ কেনার বিষয়ে আগ্রহ ব্যক্ত করেছে। আমরা বিষয়টি বিবেচনা করছি।-বাংলাট্রিবিউন




শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর









© All rights reserved © 2020 khoborpatrabd.com
Theme Developed BY ThemesBazar.Com