শুক্রবার, ০৩ মে ২০২৪, ০৫:৪০ অপরাহ্ন
শিরোনাম ::
বগুড়া শেরপুরে আগুনে পুড়লো পঁচিশ বিঘা জমির ভুট্টা ইসলামাবাদে ভোট কারচুপি ও অনিয়মের অভিযোগে মানববন্ধন বীর মুক্তিযোদ্ধার নির্মাণাধীন দোকানে সন্ত্রাসী হামলা বাগেরহাট নানান আয়োজনে মে দিবস পালিত ভালুকা বিশেষায়িত পেঁয়াজ প্রক্রিয়াজাতকরণ ও সংরক্ষণ কেন্দ্র উদ্বোধন বরিশালে জাতীয়তাবাদী শ্রমিকদলের ৪৫তম প্রতিষ্ঠা বার্ষিকী পালন কুড়িগ্রামের উলিপুরে ভুট্টা মাড়াইয়ে ব্যস্ত কৃষকেরা, দ্বিগুণ লাভের আশা নগরকান্দায় অগ্নিকান্ডে চারটি দোকান ঘর ভস্মীভূত দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তি না হলে গণতন্ত্রের মুক্তি হবে না-কেন্দ্রীয় বিএনপি যুগ্ম মহাসচিব মজিবুর রহমান সরোয়ার গলাচিপায় পুষ্টি সমন্বয় কমিটির সভা ও জাতীয় স্বাস্থ্য ও কল্যাণ দিবস পালিত

কর বাড়ায় কমেছে ফ্ল্যাট-প্লট নিবন্ধন, রাজস্ব আহরণে ভাটা

খবরপত্র ডেস্ক:
  • আপডেট সময় বুধবার, ১৩ সেপ্টেম্বর, ২০২৩

ঢাকাসহ সারাদেশে সম্পত্তি নিবন্ধন কর দ্বিগুণ করেছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)। দেশের যে কোনো অ লে এখন স্থাবর সম্পত্তি বা জমি-ফ্ল্যাট হস্তান্তরের ক্ষেত্রে ক্রেতাকে মালিকানা অর্জনে গুনতে হচ্ছে দ্বিগুণ কর। ‘আয়কর আইন-২০২৩’-এর আওতায় উৎসে কর বিধিমালায় নতুন এ কর নির্ধারণ করেছে এনবিআর।
নিবন্ধন কর বাড়ায় ঢাকাসহ দেশের বড় শহরগুলোতে প্লট ও ফ্ল্যাট বিক্রি কমেছে। নিবন্ধনেও আগ্রহ হারাচ্ছেন ক্রেতারা। এতে আয়কর আদায় যেমন অস্বাভাবিকভাবে কমছে, সরকারের রাজস্ব আহরণ লক্ষ্যমাত্রায়ও লাগছে বড় ধাক্কা। এ অবস্থায় বর্ধিত নিবন্ধন কর প্রত্যাহারের কথা বলছেন আবাসন খাত সংশ্লিষ্টরা। চলতি (২০২৩-২৪) অর্থবছরের প্রথম দুই মাস (জুলাই ও আগস্ট) রাজস্ব আদায়ে হোঁচট খাওয়ার পর এরই মধ্যে প্লট ও ফ্ল্যাটের নিবন্ধনে উৎসে কর কমিয়ে আনার পরিকল্পনা করছে এনবিআর। আগে জমি নিবন্ধনে চুক্তিমূল্যের ৪ শতাংশ কর দিতে হতো। ২০২৩-২৪ অর্থবছরের বাজেটে তা বাড়িয়ে ৮ শতাংশ করা হয়। সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, নিবন্ধন কর আগের হারে (৪ শতাংশে) ফিরে যেতে পারে৷ এ নিয়ে রাজস্ব বোর্ডের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের বৈঠকের পর চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত আসতে পারে।
চলতি অর্থবছর রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে চার লাখ ৩০ হাজার কোটি টাকা। অর্থবছরের প্রথম মাস জুলাইয়ে সাত হাজার ২৮১ কোটি টাকা লক্ষ্যমাত্রার বিপরীতে আয়কর আদায় হয়েছে পাঁচ হাজার ২১৩ কোটি টাকা। প্লট ও ফ্ল্যাট নিবন্ধন কমে যাওয়াকে লক্ষ্যমাত্রা পূরণ না হওয়ার কারণ হিসেবে দেখা হচ্ছে।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, প্লট ও ফ্ল্যাট নিবন্ধন কমে যাওয়ায় আয়কর আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা অর্জন সম্ভব হয়নি। রাজধানী ঢাকা ও এর আশপাশের ১৭টি সরকারি নিবন্ধন কার্যালয়ে প্লট বা ফ্ল্যাট নিবন্ধন কার্যক্রম চলে। এসব কার্যালয়ে নিবন্ধনের চুক্তিমূল্য বা রাজস্ব কেটে রাখা হয়। ওই ১৭ কার্যালয়ে গত জুলাই মাসে জমি বা ফ্ল্যাট নিবন্ধন বাবদ মাত্র ৩২ কোটি টাকার কর আহরণ হয়েছে, যা গত অর্থবছরের একই সময়ের তুলনায় ৬৯ কোটি টাকা কম। ২০২২-২৩ অর্থবছরের জুলাই মাসে নিবন্ধন করের পরিমাণ ছিল ১০১ কোটি টাকা।
চলতি অর্থবছরে জুলাইয়ের মতো আগস্ট মাসেও একই ধারা অব্যাহত আছে। ১ থেকে ২৪ আগস্ট পর্যন্ত ২৪ দিনে কর আদায় হয়েছে ৭৬ কোটি টাকা। গত বছর আগস্টে সব মিলিয়ে কর আদায় হয়েছিল ১২৬ কোটি টাকা।
সরকার চলতি অর্থবছরে নিবন্ধন কর আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে চার হাজার ৭শ কোটি টাকা। তবে যে হারে কর আদায় হচ্ছে তাতে লক্ষ্যমাত্রা অর্জন নিয়ে শঙ্কা ও অনিশ্চয়তা দেখা দিয়েছে। গত এক মাস ২৪ দিনে অর্থাৎ ১ জুলাই থেকে ২৪ আগস্ট পর্যন্ত নিবন্ধন কর আদায় হয়েছে ১০৮ কোটি টাকা, যা লক্ষ্যমাত্রার মাত্র সোয়া ২ শতাংশ। বিষয়টি এনবিআরের নীতিনির্ধারকদের বেশ ভাবাচ্ছে। রিয়েল এস্টেট অ্যান্ড হাউজিং অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (রিহ্যাব) সূত্রে জানা যায়, রাজধানীর গুলশান, বনানী, ধানমন্ডি, বারিধারা, ডিওএইচএস, উত্তরা ও ঢাকার আশেপাশের বিভিন্ন আবাসন প্রকল্পে তুলনামূলকভাবে বেশি প্লট বিক্রি হয়। নিবন্ধন কর ছাড়াও গেইন করসহ অন্যান্য কর বাড়ায় ক্রেতাকে এখন বাড়তি ১৩-১৪ শতাংশ অর্থ ব্যয় করতে হচ্ছে। আগে যা ছিল ১০ শতাংশ। আগে কোনো প্লট বা ফ্ল্যাটের দাম ১ কোটি টাকা হলে ক্রেতাকে বিভিন্ন কর মিলিয়ে ১ কোটি ১০ লাখ টাকা খরচ করতে হতো, যা এখন ১ কোটি ১৪ লাখে উঠেছে। এছাড়া স্থান বা এলাকাভেদে নিবন্ধন করের রকমফেরও রয়েছে। যেমন- গুলশান ও বনানী এলাকায় প্রতি কাঠায় ২০ লাখ টাকা কিংবা চুক্তিমূল্যের ৮ শতাংশ—যেটি বেশি, তা কর হিসেবে আদায় করা হয়। এই কর দেশের যে কোনো আবাসিক এলাকার মধ্যে সর্বোচ্চ। গুলশানে কোনো ক্রেতা যদি পাঁচ কাঠার একটি প্লট কেনেন, তাহলে ওই ক্রেতাকে কমপক্ষে ১ কোটি টাকা কর দিতে হবে।
রিহ্যাব সূত্রে জানা যায়, দেশে প্রতি বছর গড়ে ১০-১৫ হাজার ফ্ল্যাট হস্তান্তর হয়। এর মধ্যে ঢাকা শহর ও আশপাশের এলাকায় আট হাজারের মতো ফ্ল্যাট কেনাবেচা হয়। তবে নিবন্ধন কর দ্বিগুণ হওয়ায় গত জুন মাসের পর থেকে ফ্ল্যাট বিক্রিতে ভাটা পড়েছে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে রিহ্যাব সহ-সভাপতি কামাল মাহমুদ বলেন, এনবিআর যখন এ সিদ্ধান্ত নেয়, তখনই আমরা জানিয়েছিলাম এতে রাজস্ব আদায় কমবে। সেটাই হয়েছে। এখন ফ্ল্যাট নিবন্ধন ও হস্তান্তরে ধস নেমেছে।
রিহ্যাব পরিচালক প্রকৌশলী আল-আমিন বলেন, বাজেট ঘোষণার পর ফ্ল্যাট নিবন্ধন অনেক কমে গেছে। জমি কেনাবেচাও কমেছে। রেজিস্ট্রি অফিসের সঙ্গে আমাদের নিয়মিত যোগাযোগ হয়। আগে সেখানে গেলে নিবন্ধনের জন্য আসা মানুষের লাইন দেখতাম, এখন আর সেটা নেই। জমির রেজিস্ট্রি অনেক কমেছে। এতে সরকারের রাজস্ব আদায়ও কমেছে। ৪ শতাংশ নিবন্ধন কর ৮ শতাংশে উন্নীত বা দ্বিগুণ করার ক্ষেত্রে এনবিআরের রাজস্ব আহরণ বাড়ানোর পরিকল্পনা থাকতে পারে। কিন্তু সেটা তো হয়ইনি, উল্টো হিতে বিপরীত হয়েছে। এ সিদ্ধান্ত নেগেটিভ রোল প্লে করেছে।
তিনি আরও বলেন, গত দুই মাসে প্লট ও ফ্ল্যাটের প্রায় ৬০ শতাংশ নিবন্ধন কমেছে। আগেই বলেছিলাম, কর হার বাড়ালে নিবন্ধন কমবে। শেষ পর্যন্ত সেটাই হয়েছে। নিবন্ধন খরচ বাড়ায় উল্লেখযোগ্য হারে জমি ও ফ্ল্যাট কেনাবেচা কমেছে বলে স্বীকার করেছেন রাজস্ব বোর্ডের ঊর্ধ্বতন এক কর্মকর্তা। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ওই কর্মকর্তা জানান, আয়কর আদায় বাড়ানোর লক্ষ্যে উৎসে কর বাড়ানো হয়েছিল। তবে ফলাফল উল্টো হয়েছে। এ খাতে উৎসে কর কমানোর চিন্তা-ভাবনা করা হচ্ছে। এটা আগের হারে (৪ শতাংশে) ফিরতে পারে। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, জমি ও ফ্ল্যাটের দাম হু হু করে বাড়ছে। নির্মাণসামগ্রীর দামও আকাশছোঁয়া। এ অবস্থায় জমি বা ফ্ল্যাট নিবন্ধনে বাড়তি করারোপ ‘মড়ার ওপর খাঁড়ার ঘা’ এর মতো। একটু দেরিতে হলেও এ সত্যটা রাজস্ব বোর্ড অনুধাবন করতে পেরেছে। জ্যেষ্ঠ অর্থনীতিবিদ মাশরুর রিয়াজ মনে করেন, দেশের অর্থনীতি যে ধরনের চ্যালেঞ্জের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে, তাতে স্বাভাবিকভাবেই করহার বাড়ালে জমি বা ফ্ল্যাট কেনাবেচা কমবে। আমাদের ইনফরমাল ইকোনমি এখনো অনেক বড়। কারণ, মানুষ করজালের আওতায় আসতে চান না। এখন যদি করহার বাড়ানো হয় তাহলে যারা জমি বা ফ্ল্যাটের লেনদেনে ফরমাল ইকোনমির মাধ্যমে করজালে আছেন কিংবা জালে আসতে চান, তারা ফের নিরুৎসাহিত হবেন। রিহ্যাব পরিচালক প্রকৌশলী আল আমিন বলেন, বাড়তি করহার প্রত্যাহার করে আগের জায়গায় ফেরত না গেলে আবাসন খাত যেমন ক্ষতিগ্রস্ত হবে, রাজস্ব আদায়েও বড় ধাক্কা খাবে সরকার।- জাগো নিউজ




শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর









© All rights reserved © 2020 khoborpatrabd.com
Theme Developed BY ThemesBazar.Com