সাধারণভাবে বলা যায়, জড় হতে জীবকে পার্থক্য করে যে জিনিস তা হলো প্রাণ। প্রাণ এমন এক জিনিস যা ধরা যায় না ছোঁয়া যায় না, কিন্তু বুঝা যায়। যতক্ষণ প্রাণ থাকবে ততক্ষণ একটি জিনিসকে জীবিত বলা যায়। অন্য দিকে আত্মা হলো কোনো জীবের অংশ যা কোনো শরীর নয়। জীব যখন জীবিত থাকে, তখন এর ভেতরে আত্মা থাকে এবং আত্মার সাথে মস্তিষ্কের কাজ চলে। আর মৃত্যুর সময় আত্মা দেহ থেকে বেরিয়ে যায়। ফলে তখন আর মস্তিষ্ক কাজ করে না। তাই এই দু’টি বিষয় এক হতে পারে না। আক্ষরিক অর্থে, কোনো কিছুর খাঁটি ও সেরা অংশকে বলা হয় আত্মা-প্রাণ। মানবের প্রাণ-আত্মার নাম তখনই যথার্থ যখন তা মানুষের উচ্চ ও উৎকৃষ্টতম অঙ্গ। আত্মা হলো সৃষ্টার শ্রেষ্ঠ ও উৎকৃষ্টতর সৃষ্টি। প্রাণ ও আত্মার তৃপ্তি পাওয়া যায় তখনই যখন প্রাণীর হৃদয়ে নিঃস্বার্থতা কাজ করে। আর এই নিঃস্বার্থতা তখনই কাজ করবে যখন সে জ্ঞানের রাজ্যে বিচরণ করবে। বই হলো আত্মার আত্মীয়, হৃদয়ের অতি আপনজন। একটি সুপাঠ্য বই একজন খাঁটি বন্ধুর চেয়েও ঢের আন্তরিক, উদার। যে শুধু বিনিময়বিহীন দিয়ে যায়। সুসময় কিংবা দুঃসময়, সর্বদা পাশে রয়। একটা ভালো বইয়ের আছে সঞ্জীবনী শক্তি। আছে প্রশান্তির নিয়ামক। আত্মা নামক একটা বস্তুও হয় সদা অনুভূত। তারও চাহিদা আছে, ক্ষুধা আছে, যা নিবারণ করতে পারে শুধুই বই। গ্রিসের থিবসের লাইব্রেরির দরজায় খোদাই করে লেখা রয়েছে যে কথাটি, তা হলো ‘আত্মার ওষুধ’। তারা বইকে আত্মার রোগ নিরাময়কারী হিসেবে তুলনা করেছে। তাই জ্ঞানের বিশালতাকে জায়গা দিতে পারলেই আত্মার বিশুদ্ধতা স্ফুটন ঘটবে। নতুবা প্রাণ ও আত্মা দুই বিপরীত অবস্থানে চলে যাবে। লেখক: শিক্ষক