বুড়িমারী স্থলবন্দরে শ্রমিক ধর্মঘটের কারনে আমদানীরপ্তানী প্রায় বন্ধ হয়ে পড়েছে। গত পাঁচ দিন থেকে বন্দর শ্রমিকরা কাজে যোগ না দেয়ায় রাস্তার ওপরে প্রায় দুই শতাধিক আমদানীকৃত পণ্যবাহী ট্রাক লোডআনলোডের অপেক্ষায় দাড়িয়ে আছে। গতকাল সোমবার শ্রমিক ধর্মঘটের পঞ্চম দিন অতিবাহিত হচ্ছে। অপরদিকে সীমান্তের ওপারে ভারতের চ্যাংড়াবান্ধায় প্রায় পাঁচ শতাধিক পণ্যবাহী ট্রাক বন্দরে প্রবেশের অপেক্ষায় দাড়িয়ে আছে। এসব পণ্যের মধ্যে পচনশীল পণ্যও রয়েছে। এতে প্রতিদিন প্রায় ৫০ লাখ টাকার রাজস্ব আয় থেকে বঞ্চিত হচ্ছে সরকার। এদিকে উদ্ভুত পরিস্থিতি নিরসনে জেলা প্রশাসনের গঠিত পাঁচ সদস্যের তদন্ত কমিটি গত রোববার বিকেলে বন্দর কতৃপক্ষের হলরুমে শ্রমিক নেতা সাজ্জাদ হোসেন এবং উপজেলা পরিষদে সর্দার গ্রুপের সাথে পৃথক বৈঠক করেন। ওই বৈঠক কোন সিদ্ধান্ত ছাড়াই শেষ হয়েছে বলে সংশ্লিষ্ট দায়িত্বশীল সুত্রে জানা গেছে। আন্দোলনরত শ্রমিক নেতা সাজ্জাদ হোসেন বলেন তারা দাবী আদায়ে অনিদ্রিষ্টকালের জন্য ধর্মঘট ডেকেছেন। দাবী আদায় না হওয়া পর্যন্ত তাদের আন্দোলন চলবে। তারা যে ১০ দফা দাবী দিয়েছেন এই দাবীর অন্যতম দাবী হলো লেবার হ্যান্ডেলিং প্রতিষ্ঠান ড্রপ কমিউনিকেশন কোন সরদারের মাধ্যমে নয় মজুরীর টাকা সরাসরি লেবারদের হাতে দিতে হবে এবং নির্বাচনের মাধ্যমে শ্রমিকদের কমিটি গঠন করতে হবে। সরেজমিনে দেখা গেছে বুড়িমারী স্থলবন্দরে প্রবেশ পথে মহাসড়কের একাধিক স্থানে লোড-আনলোড শ্রমিকেরা সারাদিন ধরে কাজ বন্ধ রেখে দলে দলে বসে আছেন। তাদের দাবী এর আগেও তারা আন্দোলন করেছেন কিন্ত বাস্তবায়ন হয়নি। জানা গেছে গত ১২ সেপ্টেম্বর শ্রমিকদের কাজের সিরিয়াল দেয়ার ঘটনাকে কেন্দ্র করে সাধারণ শ্রমিক ও দায়িত্বরত সরদার গ্রুপের মধ্যে সংঘর্ষ হয়। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে পুলিশ রাবার বুলেট ও টিয়ার শেল নিক্ষেপ করে। এতে সাংবাদিক সহ ১৫ জন আহত হয়। এ ঘটনায় ইউএনও নুরুল ইসলামকে প্রায় ৬ ঘন্টা অবরুদ্ধ করে রাখে শ্রমিকেরা। উদ্ভুত পরিস্থিতিতে লালমনিরহাট জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ উল্যাহ অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিষ্ট্রেট মাহবুবুর রহমানকে প্রধান করে পাঁচ সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করেন। কমিটির অপর সদস্যরা হলেন লালমনিরহাট সিনিয়র সহকারী পুলিশ সুপার (বি-সার্কেল) ফরহাদ ইমরুল কায়েস, পাটগ্রাম উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা নুরুল ইসলাম, পাটগ্রাম থানা ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ফেরদৌস ওয়াহিদ, বুড়িমারী স্থলবন্দর কর্তৃপক্ষের সহকারী পরিচালক (ট্রাফিক) গিয়াস উদ্দিন। কমিটি গত রোববার বিকেল সাড়ে ৪ টা হতে সন্ধা ৭ টা পর্যন্ত আন্দোলনরত শ্রমিকদের ১০ জনের প্রতিনিধি দল ও সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি ছায়েদুজ্জামান সায়েদকে নিয়ে প্রথম বৈঠক করেন। এতে সাধারণ শ্রমিকদের পক্ষে নের্তৃত্ব দেন বাংলাদেশ স্থলবন্দর শ্রমিক লীগ বুড়িমারী স্থলবন্দর শাখার সভাপতি সাজ্জাদ হোসেন। বৈঠক সূত্র জানিয়েছে, সমস্যা নিরসনে সরদার পক্ষ, ঠিকাদার ও শ্রমিকপক্ষের মাধ্যমে লোড-আনলোড, মজুরী পরিশোধের কাজ করার প্রস্তাব করা হলে শ্রমিকেরা এ প্রস্তাবে রাজি হয়নি। ফলে কোনো প্রকার সুরাহা ছাড়াই বৈঠক শেষ হয়। দাযিত্বরত সর্দার (সভাপতি) সফর উদ্দিন বলেন সাজ্জাদ গ্রুপের যে দাবী তা অযৌক্তিক। ওই দাবীর কোন ভিত্তি নেই। কমিটিতে ২৩ জন সর্দার আছে তাদের (সাজ্জাদ গ্রুপ) দাবী এই সর্দারদের বহিস্কার করতে হবে। সর্দাররা লেবার হ্যান্ডেলিং ঠিকাদারদের কাছ থেকে চুক্তিপত্রের মাধ্যমে সাব কণ্ট্রাক্ট নেয়া হয়েছে। তারা ঠিকাদারদের কাছ থেকে ৪৬ টাকা করে পান। এর মধ্যে লোডআনলোড বাবদ শ্রমিকদের ৪২ টাকা দেয়া হয়। বাকী ৪ টাকা চিকিৎসা সাংগঠনিক সহ বিবিধ খরচ বাদ দিয়ে যে টাকা থাকে ওই টাকা সর্দাররা ভাগ করে নেন। বুড়িমারী স্থলবন্দর সিএন্ডএফ এজেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি ছায়েদুজ্জামান সায়েদ অভিযোগ করেন রোববার জেলা প্রশাসকের গঠিত কমিটির মিটিং শেষে ফেরার পথে সাজ্জাদ গ্রুপের শ্রমিকরা তার ওপর হামলা করেন। এতে তিনি হামলা থেকে রক্ষা পেলেও তার প্রাইভেট কারের ব্যাপক ক্ষতি হয়। এ ঘটনায় তিনি আইনী ব্যবস্থা নিচ্ছেন বলে জানান। পাটগ্রাম উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা নুরুল ইসলাম বলেন আমরা আজকে (গতকাল সোমবার) বুড়িমারী গিয়েছি শ্রমিকদের সাথে কথা বলেছি চেষ্টা করেছি যে গাড়িগুলো (পণ্যবাহী ট্রাক) আটকা পড়েছে তা বের করে দেয়ার কিন্ত তারা (শ্রমিকরা) রাজি হচ্ছেনা। রোববার কাষ্টম কতৃপক্ষের হলরুমে আন্দোরত শ্রমিকদের নিয়ে এবং উপজেলা পরিষদে সর্দার গ্রুপের সাথে পৃথক বৈঠক করা হয়েছে। তাদের বক্তব্য এডিএম স্যার লিপিবদ্ব করে জেলা প্রশাসক স্যারের কাছে দিয়েছেন। তিনি আরও বলেন প্রতিদিন সরকারের যে রাজস্ব ক্ষতি হচ্ছে আমরা সরকারের সর্বোচ্চ মহলে তা জানিয়েছি।