আজ বিশ্ব ডিম দিবস। প্রতি বছর অক্টোবর মাসের দ্বিতীয় শুক্রবার পালন করা হয় ‘ওয়ার্ড এগ ডে’। মুরগি আগে না ডিম আগে? উত্তর যেটাই হোক, অশ্বডিম্ব ছাড়া অনেক ধরনের ডিম রয়েছে পৃথিবীতে। প্রাণিজ প্রোটিনের এই সহজ উৎসের প্রতি আকর্ষণ বাড়াতে ডিম ব্যবসায়িদের নিয়ে ১৯৬৪ সালে যাত্রা শুরু করা ‘দি ইন্টারন্যাশনাল এগ কমিশন’য়ের ১৯৯৬ সালে অস্ট্রিয়ার ভিয়েনা’তে অনুষ্ঠিত সম্মেলনে ‘ওয়ার্ড এগ ডে’ পালনের ঘোষণা দেওয়া হয়। এই সংগঠনের নিজস্ব ওয়েবসাইট ‘ইন্টারন্যাশনালএগ ডটকম’য়ে দেওয়া তথ্যানুসারে, ডিমের শক্তি সারা পৃথিবীতে ছড়িয়ে দিতে প্রতি বছর অক্টোবর মাসের দ্বিতীয় শুক্রবার এই দিবস পালন করার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়। সেই থেকে ৪০টিরও বেশি দেশে এই দিবস ঘটা করে আয়োজন করা হচ্ছে। আর এবার হচ্ছে বিশ্ব ডিম দিবসের ২৫ বছর পূর্তি। তাই আয়োজনটা আরও ‘এগ-সেলেন্ট’ হওয়ারই কথা। প্রতি বছর নির্দিষ্ট বিষয় ধরে বিশ্ব ডিম দিবস পালন করা হয়। এবারেরটা হচ্ছে ‘এগস ফর বেটার লাইফ’। গত বছর ছিল ‘এগস ফর অল: নেচার’র পারফেক্ট প্যাকেজ’।
ইতিহাস বলে খ্রিষ্টের জন্মের সাড়ে ৭শ’ বছর আগ থেকেই মানবজাতির খাদ্য তালিকায় জায়গা করে নিয়েছে ডিম। আর বাঙালি ব্যাচেলর থেকে শুরু করে সংসার করা প্রায় প্রতিটি মানুষের সকাল যে ডিম খেয়ে শুরু হয় তা আর নতুন করে বলার কী আছে! পুষ্টিবিজ্ঞানের ভাষায়, ডিম শুধু প্রোটিনের উৎস নয়; রয়েছে বিভিন্ন ধরনের ভিটামিন যেমন- ডি, বি-সিক্স, বি-টুয়েল্ভ। খনিজ উপাদানের মধ্যে আছে জিঙ্ক, কপার এবং শক্তির আধার আয়রন বা লৌহ। বিশেষ করে ডিমের কুসুমে থাকে ভিটামিন এ, ডি, ই এবং কে। পাশাপাশি পাওয়া যায় মানব শরীরের কোষ গঠনের অত্যাবশকীয় চর্বি ‘ল্যাসেথিন’। ডিম আর কোলেস্টেরল নিয়ে যত তর্ক: হৃদরোগে আক্রান্তরা ডিম খাবেন নাকি খাবেন না, খেলেও কি কুসুম বাদ দেবেন- এরকম নানান তর্ক লেগেই থাকে। তাই বরং জানা যাক বিভিন্ন গবেষণা কী বলছে। ইটদিস নটদ্যাট ডটকম’য়ে প্রকাশিত প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, ১৯৫০ থেকে ১৯৬০ সালের মধ্যে সিংহভাগ মানুষের খাদ্যাভ্যাস নিয়ে যেসব গবেষণা প্রকাশিত হয়েছে সেগুলো কোলেস্টেরল ও হৃদরোগের মধ্যকার সম্পর্ক তুলে ধরে। রক্তে অতিরিক্ত কোলেস্টেরল রক্তনালীর দেয়ালে চর্বি জমাটা বাঁধায়, সৃষ্টি হয় ‘ব্লাড ক্লট’, যা পরে ডেকে আনে স্ট্রোক, হার্ট অ্যাটাক। এই গবেষণাগুলোর পরবর্তী পর্যায়ে কোলেস্টেরল কতটুকু খাওয়া হল আর এর সঙ্গে রক্তে কতটা কোলেস্টেরল আছে- সেই সম্পর্ক খুঁজে পাওয়া যায়নি। তারপরও ‘আমেরিকান হার্ট অ্যাসোসিয়েশন’ মানুষের কোলেস্টেরল খাওয়া মাত্রা দৈনিক ৩০০ মি.লি. গ্রামে বেঁধে দেয়। আরও বলা হয় সপ্তাহের ৩টির বেশি ডিম খাওয়া চলবে না। ফলে ডিম খাওয়ার ওপর এক ধরনের প্রতিবন্ধকতা তৈরি হয়। তবে ২০১৫ সালে ‘ইউ.এস. ডায়েটারি গাইডলাইনস অ্যাডভাইজরি কমিটি’ নতুন তথ্য দেয়। সংস্থাটির গবেষণায় দেখা যায়, ভোজ্য উৎস থেকে আসা কোলেস্টেরল হৃদরোগের ঝুঁকির ওপর তেমন কোনো প্রভাব ফেলে না। ১৯৯৯ সালে একদল মানুষকে এক সপ্তাহে প্রতিদিন একটি ডিম খাওয়ানো হয় এবং সপ্তাহ শেষে দেখা যায় তাদের হৃদরোগের ঝুঁকি মোটেই বাড়েনি। এর প্রেক্ষিত্রে ২০১৫-২০২২ ‘ডায়েটারি গাইডলাইনস ফর আমেরিকান্স’ থেকে প্রতিদিন ৩০০ মি.লি. গ্রামের বেশি কোলেস্টেরল খাওয়া যাবে না এই নিষেধাজ্ঞা তুলে নেওয়া হয়। পরের গবেষণাগুলোতেও একই কথা উঠে আসে। ২০১৮ সালে ‘দ্য আমেরিকান জার্নাল অফ ক্লিনিকাল নিউট্রিশন’য়ে প্রকাশিত গবেষণায় ‘প্রিডায়াবেটিক’ ও ‘টাইপ টু ডায়াবেটিস’য়ে আক্রান্তদের নিয়ে গবেষণা করা হয়। এমন মানুষের হৃদরোগ হওয়া ঝুঁকি বেশি বলেই ধরা হয়। তারা প্রায় তিন মাস ধরে প্রতি সপ্তাহে কমপক্ষে ১২টি করে ডিম খান এবং দেখা যায় তাদের হৃদরোগের ঝুঁকি একটুও বাড়েনি।
ভারতীয় পুষ্টিবিদ মানসি চাত্রাথ টাইমসঅফইন্ডিয়া ডটকম’য়ে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে বলেন, “যদি একটি পুরো ডিম খান, তবে খাদ্যাভ্যাসের অন্যান্য কোলেস্টেরলের উৎস যেমন- মাছ, মাংস খাওয়ার পরিমাণ সম্পর্কে সচেতন হতে হবে। পাশাপাশি ডিম কীভাবে খাচ্ছেন সে ব্যাপারেও ভাবতে হবে। ভাজা ডিমের তুলনায় সিদ্ধ ডিমে চর্বি কম হয়। তাই ডিম খাবেন না বাদ দেবেন সেই সিদ্ধান্ত নেওয়ার সময় ডিম ছাড়া অন্যান্য খাবার থেকে দিনে কতটা কোলেস্টেরল আর ‘স্যাচুরেইটেড ফ্যাট’ গ্রহণ করছেন সেটা পরিমাপ করতে হবে।” মুম্বাইয়ের ‘এশিয়ান হার্ট ইন্সটিটিউট’য়ের জ্যেষ্ঠ হৃদরোগ বিশেষজ্ঞ ডা. সন্তোশ কুমার ডোরা বলেন, “হৃদরোগে আক্রান্ত হওয়ার কারণ শুধু ডিম নয়, খাদ্যাভ্যাসের আরও অনেক খাবারই আরও বেশি ঝুঁকিপূর্ণ। দিনে কতটুকু প্রোটিন, কার্বোহাইড্রেট এবং চর্বি গ্রহণ করছি তা নিয়ে আমাদের সচেতন হতে হবে। চর্বির মাত্রা নিয়ে ভাবার সময় ‘স্যাচুরেইটেড’ ও ‘আন-স্যাচুরেইটেড’ ফ্যাট বা চর্বি নিয়ে আলাদাভাবে ভাবতে হবে। অতিরিক্ত ‘কার্বোহাইড্রেইট’ এবং ‘স্যাচুরেইটেড’ চর্বি অস্বাস্থ্যকর।”
তাই ডিম নিয়ে আতঙ্কিত হওয়ার আগে চিকিৎসকের কাছে যান, জেনে নিন কোন খাবারগুলো আপনার জন্য ঝুঁকিপূর্ণ আর কোনগুলো প্রয়োজনীয়। আর দিনে একটি ডিম খাওয়া কোনো ক্ষতিই করবে না।