এক দশক আগে কাশ্মীর নিয়ে রাষ্ট্রদ্রোহমূলক মন্তব্যের অভিযোগে বিচারের মুখে পড়তে পারেন বুকার পুরস্কার বিজয়ী ভারতীয় লেখিকা অরুন্ধতী রায়। দিল্লির একজন শীর্ষ কর্মকর্তা জানিয়েছেন লেখিকার বিরুদ্ধে যথেষ্ট প্রমাণ রয়েছে। ১৯৯৭ সালে “দ্য গড অফ স্মল থিংস” উপন্যাসের জন্য বুকার পুরস্কার পান অরুন্ধতী রায়। তার অন্যান্য উপন্যাসগুলিও আন্তর্জাতিক খ্যাতি অর্জন করেছে। তবে তিনি দুটি রাজনৈতিক লেখাও প্রকাশ করেছেন এবং দীর্ঘকাল ধরে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির একজন কট্টর সমালোচক সিএনএন প্রকাশিত ২০২২-এর একটি প্রতিবেদনে, রায় ভারতের ক্ষমতাসীন হিন্দু জাতীয়তাবাদী ভারতীয় জনতা পার্টিকে (বিজেপি) ৬ জানুয়ারী ইউএস ক্যাপিটলে দাঙ্গাবাজদের সাথে তুলনা করেছেন। উল্লেখ করেছেন যে “আমার মতো লোকেরা ‘দেশবিরোধীদের’ তালিকায় প্রথম সারিতে রয়েছে। আমি যা লিখি এবং বলি, বিশেষ করে কাশ্মীর নিয়ে।” মোদি সরকার তার সমালোচকদের বিরুদ্ধে দমন-পীড়ন বাড়িয়েছে বলে অভিযোগের মধ্যেই অরুন্ধতী রায়ের ঘটনাটি সামনে এলো। যা নতুন করে অভিযোগের জন্ম দিয়েছে যে, প্রশাসন বাকস্বাধীনতা রোধ করতে চাইছে। এই মাসের শুরুর দিকে, নয়াদিল্লিতে পুলিশ ভারত সরকারের তদন্তের জন্য পরিচিত একটি বামপন্থী সংবাদ সংস্থার সাথে যুক্ত বিশিষ্ট সাংবাদিকদের বাড়িতে অভিযান চালায়। পুলিশ বলেছে, তারা ভারতের সন্ত্রাস বিরোধী আইন বা টঅচঅ, এর সাথে সম্পর্কিত একটি চলমান তদন্তের অংশ হিসাবে আউটলেটের সম্পাদক এবং একজন সহকর্মীকে গ্রেপ্তার করেছে।
বিষয়টি চরম সমালোচিত হয়েছে। ফেব্রুয়ারিতে, ভারতের ইনকাম ট্যাক্স কর্তৃপক্ষ নয়াদিল্লি এবং মুম্বাইতে বিবিসির অফিসে অভিযান চালায়। ভারতীয় কর্তৃপক্ষ বিবিসিকে কর ফাঁকির জন্য অভিযুক্ত করেছিল। তার আগেই বিবিসি তার একটি ডকুমেন্টারিতে ২০ বছরেরও বেশি সময় আগে মারাত্মক দাঙ্গায় মোদির কথিত ভূমিকার সমালোচনা করেছিল। দিল্লির লেফটেন্যান্ট গভর্নর ভি কে সাক্সেনা একটি বিবৃতিতে বলেছেন, লেখিকা অরুন্ধতী রায় এবং অন্যদের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রদ্রোহের মামলা করা হয়েছে এবং বিষয়টি এখন আদালতের অনুমোদনের অপেক্ষায় রয়েছে। ২০১০ সালে রায় বলেছিলেন-” আজাদী মানে স্বাধীনতা বা মুক্তি এবং প্রায়শই কাশ্মীরি স্বাধীনতা আন্দোলনের জন্য এই স্লোগান ব্যবহৃত হয়।”
ঐ বক্তব্যে অরুন্ধতী রায় আরো বলেন যে, “কাশ্মীর কখনই ভারতের অবিচ্ছেদ্য অংশ ছিল না। আপনি আমাকে আক্রমণাত্মকভাবে এবং যতবারই জিজ্ঞাসা করেন না কেন, আমি সেটাই বলবো।” এরপরেই লেফটেন্যান্ট গভর্নরের কার্যালয় এক বিবৃতিতে বলে-কাশ্মীরের স্বাধীনতার পক্ষে কথা বলে জননিরাপত্তাকে হুমকির মুখে ফেলেছিলেন অরুন্ধতী। রায়ের বক্তৃতা ছিলো উস্কানিমূলক। অভিযুক্তদের মধ্যে দুজন, কাশ্মীরি বিচ্ছিন্নতাবাদী নেতা সাইদ আলি শাহ গিলানি এবং দিল্লি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রভাষক সৈয়দ আবদুল রহমান গিলানি প্রাথমিক অভিযোগ দায়ের করার পর মারা গেছেন। কাশ্মীর সেন্ট্রাল ইউনিভার্সিটির প্রাক্তন আন্তর্জাতিক আইনের অধ্যাপক শেখ শওকত হুসেন অরুন্ধতী রায়ের পাশাপাশি অভিযোগের মুখোমুখি হচ্ছেন। অনলাইনে পোস্ট করা তার ২০১০ সালের বক্তৃতায়, অরুন্ধতী রায় ক্রমবর্ধমান সহিংসতার মধ্যে ১৯৯০ এর দশকের গোড়ার দিকে মুসলিম-সংখ্যাগরিষ্ঠ কাশ্মীর থেকে হিন্দুদের ব্যাপকভাবে উচ্ছেদের প্রেক্ষিতে ন্যায়বিচারের জন্য কাশ্মীরি প্রচেষ্টার কথা বলেছিলেন। কয়েক দশক ধরে, কাশ্মীর ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে ঘন ঘন সহিংস আঞ্চলিক বিরোধের কেন্দ্রবিন্দুতে রয়েছে, উভয়ই সমগ্র পার্বত্য অঞ্চলকে নিজেদের বলে দাবি করে। মানবাধিকার সংগঠনগুলোর মতে, প্রতি বছর কাশ্মীরে বিচ্ছিন্নতাবাদী সহিংসতায় শত শত মানুষ নিহত হয়। বিজেপি কাশ্মীরের বিশেষ আধা-স্বায়ত্তশাসিত মর্যাদা প্রত্যাহার করার জন্য প্রচার চালায়, যা মোদি শেষ পর্যন্ত ২০১৯ সালে কার্যকর করেছিলেন রাজ্যটিকে দুটি ফেডারেল অঞ্চলে বিভক্ত করে।
ভারত বলেছে, দেশটির আইন সকল নাগরিকের জন্য সমান তা নিশ্চিত করতে এবং এই অঞ্চলে অর্থনৈতিক উন্নয়ন বাড়ানোর পাশাপাশি বিচ্ছিন্নতাবাদ ও সন্ত্রাসবাদের অবসান ঘটাতে এই পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে। ভারত সরকারের এই সিদ্ধান্তকে পাকিস্তান “অবৈধ” বলে দাবি করেছে, বিষয়টি দুই দেশের মধ্যে উত্তেজনা বাড়িয়ে দিয়েছে। সূত্র : সিএনএন