গত সপ্তাহের শেষ কার্যদিবস শুক্রবার বিশ্ববাজারে সোনার দামে বড় উত্থান হয়েছে। একদিনেই প্রতি আউন্স সোনার দাম বেড়েছে প্রায় ৬৪ ডলার। বিশ্ববাজারে সোনার এমন দাম বাড়ায় দেশের বাজারেও এর প্রভাব পড়বে। ফলে দেশের বাজারে বাড়তে পারে দামি এই ধাতুর দাম। এতে আবারও দেশের বাজারে এক ভরি সোনার দাম এক লাখ টাকা ছাড়িয়ে যেতে পারে। আজ রোববার (১৫ অক্টোবর) বৈঠকে বসবে সোনার দাম নির্ধারণে বাংলাদেশ জুয়েলার্স অ্যাসোসিয়েশন (বাজুস) গঠিত কমিটি। ‘বাজুস স্ট্যান্ডিং কমিটি অন প্রাইসিং অ্যান্ড প্রাইস মনিটরিং’ নামের এই কমিটির বৈঠকের পর সোনার দাম বাড়ানোর ঘোষণা আসতে পারে। এ বিষয়ে বাজুসের একটি সূত্র জানিয়েছে, সোনার দাম নির্ধারণের ক্ষেত্রে বাজুস থেকে স্থানীয় বাজারে তেজাবি সোনার (পাকা সোনা) দাম বাড়া বা কমার কথা বলা হলেও বড় ভূমিকা রাখে বিশ্ববাজারের চিত্র। বিশ্ববাজারে সোনার দাম বাড়ার পরিপ্রেক্ষিতে সম্প্রতি দেশের বাজারেও দাম বাড়ানো হয়েছে।
তবে দেশের বাজারে দাম বাড়ানোর পর বিশ্ববাজারে প্রতি আউন্স সোনার দাম প্রায় ৭০ ডলার বেড়ে গেছে। এ পরিস্থিতিতে দেশের বাজারে সোনার দাম বাড়াবে এটাই স্বাভাবিক। দেশে সোনার দাম কী পরিমাণ বাড়বে তা আগামীকাল রোববার ‘বাজুস স্ট্যান্ডিং কমিটি অন প্রাইসিং অ্যান্ড প্রাইস মনিটরিং’ কমিটির বৈঠকের আলোচনার মাধ্যমে নির্ধারণ করা হবে। বিশ্ববাজারের তথ্য পর্যালোচনায় দেখা যায়, গত সপ্তাহের প্রতি কার্যদিবসেই সোনার দাম বেড়েছে। এতে এক সপ্তাহেই প্রতি আউন্স সোনার দাম বেড়েছে ১০০ দশমিক ২৩ ডলার বা ৫ দশমিক ৪৭ শতাংশ। সপ্তাহের শুরুতে প্রতি আউন্স সোনার দাম ছিল এক হাজার ৮৩২ দশমিক ২৭ ডলার। সপ্তাহের ব্যবধানে তা বেড়ে এক হাজার ৯৩২ দশমিক ৫০ ডলারে দাঁড়িয়েছে।
বিশ্ববাজারে সোনার দাম বাড়ার পরিপ্রেক্ষিতে গত বুধবার (১১ অক্টোবর) বৈঠকে বসে ‘বাজুস স্ট্যান্ডিং কমিটি অন প্রাইসিং অ্যান্ড প্রাইস মনিটরিং’ কমিটি। ওই বৈঠক থেকে দেশের বাজারে সব ধরনের সোনার দাম বাড়ানোর সিদ্ধান্ত হয়। পরের দিন ১২ অক্টোবর থেকে দেশের বাজারে কার্যকর হয় সোনার নতুন দাম। বাজুসের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, সব থেকে ভালো মানের বা ২২ ক্যারেটের এক ভরি (১১ দশমিক ৬৬৪ গ্রাম) সোনার দাম ২ হাজার ৩৩৩ টাকা বাড়িয়ে নির্ধারণ করা হয়েছে ৯৯ হাজার ৩৭৭ টাকা। ২১ ক্যারেটের এক ভরি সোনার দাম ২ হাজার ২১৬ টাকা বাড়িয়ে ৯৪ হাজার ৮২৮ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে।
এছাড়া ১৮ ক্যারেটের এক ভরি সোনার দাম এক হাজার ৮৬৬ টাকা বাড়িয়ে ৮১ হাজার ২৯৮ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে। আর সনাতন পদ্ধতির এক ভরি সোনার দাম এক হাজার ৬৩৩ টাকা বাড়িয়ে ৬৭ হাজার ৭৬৮ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে। দেশের বাজারে বর্তমানে এই দামে বিক্রি হচ্ছে সোনা।
অবশ্য সোনার গয়না কিনতে ক্রেতাদের এর থেকে বেশি অর্থ গুনতে হচ্ছে। কারণ বাজুস নির্ধারণ করা দামের ওপর ৫ শতাংশ ভ্যাট যোগ করে সোনার গয়না বিক্রি হয়। একই সঙ্গে ভরি প্রতি মজুরি ধরা হয় ন্যূনতম ৩ হাজার ৪৯৯ টাকা। ফলে ভালো মানের এক ভরি সোনার গয়না কিনতে এখন ক্রেতাদের এক লাখ ৭ হাজার ৮৪৫ টাকা গুনতে হচ্ছে।
বাজুস থেকে যখন দেশের বাজারের জন্য সোনার নতুন দাম নির্ধারণ করা হয়, সে সময় বিশ্ববাজারে প্রতি আউন্স সোনার দাম ছিল এক হাজার ৭০ ডলারের কাছাকাছি। অর্থাৎ দেশের বাজারে সোনার দাম নির্ধারণের পর বিশ্ববাজারে প্রতি আউন্স সোনার দাম ৬০ ডলারের ওপরে বেড়েছে। এর মধ্যে দেশের বাজারে সোনার নতুন দাম কার্যকর হওয়ার পর শুধু শুক্রবারেই বিশ্ববাজারে প্রতি আউন্স সোনার দাম বেড়েছে ৬৩ দশমিক ৮৫ ডলার বা ৩ দশমিক ৪২ শতাংশ। সাম্প্রতিক সময়ে একদিনে বিশ্ববাজারে সোনার দাম এত বাড়তে দেখা যায়নি। বিশ্ববাজারে সোনার দাম বাড়ার পরও বিশ্ববাজার ও দেশের বাজারে সোনার দামের মধ্যে বড় ধরনের পার্থক্য রয়েছে। বিশ্ববাজারে প্রতি আউন্স (২৮ দশমিক ৩৫ গ্রাম) সোনা যে দামে বিক্রি হচ্ছে, তাতে প্রতি ডলার ১১১ টাকা করে ধরলে এক ভরির দাম দাঁড়ায় ৮৮ হাজার ২৫৪ টাকা। অর্থাৎ বিশ্ববাজারের তুলনায় দেশের বাজারে প্রতি ভরি সোনা ১১ হাজার টাকা বেশি দামে বিক্রি হচ্ছে।
এখন দেশের বাজারে আবার সোনার দাম বাড়ানো হলে এই পার্থক্য আরও বাড়বে। একই সঙ্গে সৃষ্টি হতে পারে নতুন রেকর্ড। দেশের ইতিহাসে এখনো পর্যন্ত এক ভরি সোনার দাম সর্বোচ্চ এক লাখ এক হাজার ২৪৪ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে। গত ২৫ আগস্ট ভালো মানের এক ভরি সোনা দাম ২ হাজার ২২২ টাকা বাড়ানোর মাধ্যমে ওই দাম নির্ধারণ করা হয়। ২৫ আগস্ট থেকে ২৮ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত এই রেকর্ড দামে বিক্রি হয় সোনা।
বিশ্ববাজারে দাম বাড়ার পরিপ্রেক্ষিতে দেশের বাজারে সোনার দাম বাড়ানো হবে কি না জানতে চাইলে বাজুস স্ট্যান্ডিং কমিটি অন প্রাইসিং অ্যান্ড প্রাইস মনিটরিংয়ের চেয়ারম্যান এম এ হান্নান আজাদ বলেন, ‘বিশ্ববাজারে সোনার দাম বাড়ার বিষয়টি আমরা দেখেছি। তবে দেশের বাজারে সোনার দাম বাড়ানো হবে কি না এখই বলতে পারছি না। আমরা রোববার বৈঠকে বসবো। সোনার দামে যে অস্থিরতা দেখা দিয়েছে বৈঠকে তা নিয়ে আলোচনা হবে। দেশের বাজারে সোনার দাম বাড়ানো হবে কি না তা ওই বৈঠকের আলোচনার মাধ্যমে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।’