মঙ্গলবার, ১৯ নভেম্বর ২০২৪, ০৩:৩১ পূর্বাহ্ন

সম্মিলিত প্রচেষ্টা ছাড়া যুদ্ধ বন্ধ করা অসম্ভব

সিনেম চেঙ্গিজ
  • আপডেট সময় শুক্রবার, ২৭ অক্টোবর, ২০২৩

ইসরায়েল-হামাস সংঘাত যেন থামছেই না। মৃত্যুপুরীতে পরিণত হওয়া গাজা উপত্যকায় ইসরায়েলি বাহিনীর মুহুর্মুহু বোমাবর্ষণে বেঘোরে মারা পড়ছে হাজুার হাজার মানুষ। গত ৭ অক্টোবর থেকে শুরু হওয়া যুদ্ধে ইসরায়েলের সেনারা গুঁড়িয়ে দিয়েছে গাজার আল-আহলি আরব হাসপাতাল, যেখানে প্রাণ হারিয়েছেন ৫০০ জনেরও বেশি ফিলিস্তিনি। বলা বাহুল্য, পুরো বিশ্বের নজর এখন চলমান ইসরায়েল-হামাস সংঘর্ষের ওপর। হামাসের হামলার পেছনে অন্য কোনো শক্তির হাত রয়েছে কি না, তথা এই যুদ্ধে বাইরের শক্তির সম্পৃক্ততার বিষয় নিয়েও চলছে চুলচেরা বিশ্লেষণ। লক্ষ করা যাচ্ছে, গাজার ক্ষতিগ্রস্ত জনগণকে জরুরি সাহায্য প্রদানের জন্য হাত বাড়াচ্ছে পার্শ্ববর্তী বিভিন্ন দেশ। সংঘাতের অবসানের স্বার্থে উভয় পক্ষকে চাপ দেওয়ার জন্য নানাভাবে প্রচেষ্টাও চালাচ্ছে কেউ কেউ, কিন্তু কোনো কিছুতেই কাজ হচ্ছে না।
খেয়াল করলে দেখা যাবে, আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় ইসরায়েলকে যুদ্ধ বন্ধে সেভাবে চাপ দিতে পারছে না এ কারণে যে, ইসরায়েলের ভূখ-ে আগে হামলা চালিয়েছে হামাস। ফিলিস্তিনের স্বাধীনতাকামী এই গোষ্ঠীকে ইসরায়েলসহ বিভিন্ন শক্তি সর্বদাই আখ্যায়িত করে থাকে ‘সন্ত্রাসী গোষ্ঠী’ হিসেবে। অর্থাৎ, আগে হামলা চালানোর দায় হিসেবে হামাসকে বিশ্বের সামনে ‘উগ্র সন্ত্রাসী বাহিনী’ হিসেবে প্রমাণ করার পাকাপোক্ত যুক্তি খুঁজে পেয়েছে ইসরায়েল ও তার মিত্ররা। ফলস্বরূপ, যুদ্ধ বন্ধের ব্যাপারে সরাসরি কিংবা সক্রিয় ভূমিকা রাখাটা কঠিন হয়ে পড়ছে বিশ্ব সম্প্রদায়ের জন্য।
মনে থাকার কথা, ইসরায়েলি ও ফিলিস্তিনিদের মধ্যে ২০১২ সালে বড় ধরনের সংঘাতের সৃষ্টি হয়। ঐ সময় আঞ্চলিক দেশগুলোর বড় ধরনের চাপ ছিল ইসরায়েলের ওপর। এর ফলে শেষ পর্যন্ত যুদ্ধবিরতি চুক্তির মধ্য দিয়ে হানাহানির যবনিকাপতন সম্ভব হয়। অথচ ঐ সংঘাতকেও প্রথম দিকে মনে হচ্ছিল যেন ‘কোনোভাবেই থামার নয়’। ২০১২ সালের সংঘাতকালে বিভিন্ন আরব রাষ্ট্র ফিলিস্তিনি জনগণের সঙ্গে সংহতি প্রকাশ করে অবিলম্বে গাজা সফর করেন। মূলত তাদের ঐ সফরই তাৎপর্যপূর্ণ ভূমিকা রাখে যুদ্ধ বন্ধের ক্ষেত্রে। সফরকারী বিভিন্ন দেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রীরা গাজা ভূখ- থেকে যে শক্তিশালী বার্তা প্রদান করেন, তা সংঘর্ষ বন্ধে কাজ করে টনিক হিসেবে। এবারের সংঘাতের বাস্তবতা হলো, যুদ্ধ বন্ধের উপায় যেন ঝুলে গেছে! সম্মিলিত আঞ্চলিক প্রতিক্রিয়া তো দূর পরাহত, কার্যকর উদ্যোগ গ্রহণ করতে এগিয়ে আসার মতো উল্লেখযোগ্য কাউকেই চোখে পড়ছে না। আঞ্চলিক প্রেক্ষাপট বিবেচনায় এমনটা হওয়ার কথাও বটে। তবে এ কথাও মানতে হবে হামাস দোষী, নাকি ইসরায়েল এই হিসাবের বাইরে দাঁড়িয়ে অসহায় ফিলিস্তিনিদের যে বাঁচানোর ব্যবস্থা করাটা জরুরি বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে, তা যেন ভুলেই যাচ্ছি আমরা! বর্তমান পরিস্থিতি যা-ই হোক না কেন, প্রতিবাদী কণ্ঠস্বর কেবল কূটনৈতিক বৃত্তে আটকে থাকার চিত্র নিতান্ত দুঃখজনক। প্রশ্ন হলো, চলমান হামাস-ইসরায়েল যুদ্ধ বন্ধের কার্যকর উপায় কী? এর সহজ উত্তরে বলতে হয়, এক্ষেত্রে আঞ্চলিক নেতাদের এগিয়ে আসতে হবে সবার আগে; তা না হলে তুরস্ক, লেবানন, মিশর, জর্ডান ও সিরিয়ার মাটিতে যদি কোনোভাবে এই সংঘাত ছড়িয়ে পড়ে, তাহলে গভীর সংকটে পতিত হবে মধ্যপ্রাচ্যসহ গোটা বিশ্ব।
মনে রাখতে হবে, চলমান ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে রাশিয়া ফিলিস্তিনের জনগণের পক্ষে খুব বেশি কথা বলার উপলক্ষ্য খুঁজে পাচ্ছে না। ফিলিস্তিনের দীর্ঘদিনের সমর্থক চীনও ইসরায়েলের সঙ্গে ক্রমবর্ধমান সম্পর্কের কারণে জোর অবস্থান নিতে দ্বিধার সম্মুখীন হচ্ছে। এসব কারণে চলমান সংঘাতের রেশ অনেক দূর অবধি বয়ে যাওয়ার আশঙ্কা বাড়ছে ক্রমাগতভাবে। পশ্চিম তীর, জর্ডান, মিশর ও লেবাননের হিজবুল্লাহর হাত ধরে এই যুদ্ধ গোটা বিশ্বকে নিয়ে যেতে পারে বৃহত্তর সংঘাতের দিকে। সুতরাং, যত তাড়াতাড়ি সম্ভব এই যুদ্ধ বন্ধ করার সঠিক রাস্তা খুঁজে বের করতে হবে। এই অঞ্চল তো বটেই, বিশ্বের কল্যাণ ও উন্নতির জন্য এটাই এখন জরুরি কাজ। (দৈনিক ইত্তেফাক) লেখক: মধ্যপ্রাচ্য রাজনীতির বিশ্লেষক,আরব নিউজ থেকে অনুবাদ: সুমৃৎ খান সুজন




শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর









© All rights reserved © 2020 khoborpatrabd.com
Theme Developed BY ThemesBazar.Com