রাজধানীর সদরঘাট লঞ্চ টার্মিনালে ভোরে যাত্রীদের পদচারনায় মুখর থাকে। যাত্রীদের ভিড়ে স্বাভাবিকভাবে হাঁটা মুশকিল। লেঞ্চর স্টাফদের হাঁকডাকে সরগরম থাকে টার্মিনাল। কিন্তু বিএনপি-জামায়াতের ডাকা তিন দিনের অবরোধের প্রথম দিন গতকাল মঙ্গলবার রাজধানীর একমাত্র লঞ্চটার্মিনাল সদরঘাট ল টার্মিনালে দেখা গেছে একেবারেই ভিন্ন দৃশ্য। একেবারেই ফাঁকা। সকাল থেকে লেঞ্চর সব শিডিউল ভেঙ্গেছে। যাত্রী কম থাকায় দুই একটি ছাড়া কোনো ল ই নির্দিষ্ট সময় ছেড়ে যায়নি। ছেড়ে যাওয়া লেঞ্চযাত্রী ছিলো খুবই কম। গতকাল মঙ্গলবার ভোর থেকে বেলা ১১টা পর্যন্ত সদরঘাট ল টার্মিনালে এমন চিত্র দেখা গেছে। টার্মিনাল সূত্র জানায়, সকালে চাঁদপুর, নড়িয়া, মৃধারহাট, ইলিশার উদ্দেশে ছয়-সাতটি লঞ্চছেড়ে গেছে। যাত্রী কম থাকায় বেশিরভাগ লঞ্চই ছাড়তে পারেনি।
আবার কিছু লেঞ্চযাত্রী উঠলেও সংখ্যায় কম থাকায় নামিয়ে দেয়া হচ্ছে। কারণ হিসেবে কর্তৃপক্ষ বলছে, যাত্রী কম, আপ-ডাউনে লেঞ্চর খরচ উঠবে না। তাই সকালে না গিয়ে বিকেলে যাবে।
একটি লেঞ্চর ইনচার্জ জানান, সকালে বরিশালের উদ্দেশে লঞ্চছাড়ার কথা ছিলো। কিন্তু যাত্রী না থাকায় লঞ্চছাড়তে পারেনি। এতো বড় লেঞ্চতো ২০-২৫ জন যাত্রী নিয়ে যাওয়া যায় না। তেলের খরচও উঠবে না। সন্ধ্যায় যাত্রী হলে যাবো, নাহলে বসে থাকতে হবে।
চাঁদপুরগামী বেশ কয়েকটি লেঞ্চর স্টাফ বলেন, বিএনপি-জামায়াতের অবরোধের কারণে যাত্রী কম। সকালে চাঁদপুর লাইনে তিন থেকে চারটি ল চলাচল করে। কিন্তু আজ শুধু একটি গেছে। একবার আপডাউন করলে দেড় লাখ টাকা খরচ হয়। সে টাকাটা না উঠলে তো লঞ্চ চালিয়ে লাভ হবে না। সেজন্য লেঞ্চর সংখ্যা আজকে কম। একটি লঞ্চ থেকে যাত্রী নামিয়ে দিতে দেখা গেছে। লেঞ্চর কেরানি বলেন, যাত্রী নাই, তাই তাদেরকে নামিয়ে দিচ্ছি। বিএনপি-জামায়াতের অবরোধের জন্য যাত্রী কম। ল ছাড়লে লোকসান হবে। তাই যাত্রী নামিয়ে অন্য লে উঠিয়ে দিচ্ছি। সদরঘাট লঞ্চ টার্মিনালের বেশ কয়েকটি প্রবেশমুখও বন্ধ রাখা হয়েছে। বিআইডব্লিউটিএর পক্ষ থেকে একটু পর পর মাইকে ঘোষণা দেয়া হচ্ছে খোলা রাখা প্রবেশ গেইটের কথা। লঞ্চ পরিচালনায় নিয়োজিত কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সতর্ক থাকতে বলা হয়। কেউ যাতে কোনো নাশকতা করতে না পারে। কেবিনের যাত্রীদের জাতীয় পরিচয় পত্র ও তল্লাশি করে যাত্রী তোলার জন্য আহ্বান জানানো হয়। সদরঘাট লঞ্চ টার্মিনাল সূত্র জানায়, বেলা ১২টা পর্যন্ত অন্যদিন সদরঘাট থেকে যত লঞ্চ ছাড়া হয় আজ তার অর্ধেক সংখ্যক লঞ্চ ও ছেড়ে যায়নি। এ বিষয়ে জানতে সদরঘাটের দায়িত্বপ্রাপ্ত বিআইডব্লিউটিএ’র যুগ্ম পরিচালক মুহাম্মদ ইসমাইল হোসেনের অফিসে যোগাযোগ করলে তাকে পাওয়া যায়নি। মুঠোফোনেও তাকে পাওয়া যায়নি। তবে লঞ্চ মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক সিদ্দিকুর রহমান পাটোয়ারী গণমাধ্যমকে বলেন, অবরোধে লঞ্চ বন্ধ নেই। যাত্রী কম হলেও লঞ্চ চলছে। সকাল থেকে সব রুটেই লঞ্চ চলাচল করছে।