মঙ্গলবার, ১৯ নভেম্বর ২০২৪, ০৮:০৬ পূর্বাহ্ন

মৌসুম শুরু: শুঁটকি ঘিরে দুবলার চরে ব্যস্ততা

খবরপত্র ডেস্ক:
  • আপডেট সময় শুক্রবার, ৩ নভেম্বর, ২০২৩

সুন্দরবনের দুবলার চরে পাঁচ মাসের শুঁটকি মৌসুম শুরু হয়েছে। বনবিভাগের পাস নিয়ে বৃহস্পতিবার (২ নভেম্বর) দিনগত রাত থেকে দুবলার চরে যেতে শুরু করেছেন জেলে, মহাজন ও শ্রমিকরা। গতকাল শুক্রবার ভোরে দুবলায় পৌঁছেই শুরু হয়েছে ব্যস্ততা। কেউ ঘর বাঁধছেন। আবার কেউ সাগরে মাছ ধরতে নেমে পড়েছেন। কেউ কেউ মাছ নিয়ে চরে ফিরেছেন। কেউ বা সেগুলো বাছাইয়ের পর মাচায় শুকাতেও দিয়েছেন। এর আগে উপকূলের জেলেরা শুঁটকি মৌসুম ঘিরে নিজ নিজ এলাকায় জাল, নৌকা মেরামত ও সব ধরনের সরঞ্জাম প্রস্তুত করেন। এরপর বিভিন্ন এলাকার জেলে ও শ্রমিকরা দুবলার উদ্দেশ্যে জড়ো হন মোংলায়। বৃহস্পতিবার দিনগত গভীর রাতে বনবিভাগের পাস নিয়ে চরের উদ্দেশ্যে যাত্রা শুরু করেন তারা। সুন্দরবন পূর্ব বনবিভাগের সহকারী বন সংরক্ষক (সদর) রানা দেব বলেন, আজ (৩ নভেম্বর) থেকে বঙ্গোপসাগর পাড়ে সুন্দরবনের দুবলার চরে শুরু হয়েছে শুঁটকি মৌসুম। এ মৌসুম চলবে ৩১ মার্চ পর্যন্ত। টানা পাঁচ মাস সেখানে থাকতে হবে হাজারো জেলে ও শ্রমিককে। সাগরপাড়ের এ চরে তাদের থাকতে অস্থায়ী ঘর, মাছ শুকানোর চাতাল ও মাচা তৈরি করা হচ্ছে।
তিনি আরও বলেন, স্থাপনা নির্মাণে সুন্দরবনের কোনো গাছপালা ব্যবহার করা যাবে না। তাই বনবিভাগের নির্দেশনা অনুযায়ী দুবলার চরে যাওয়া জেলেরা সঙ্গেই নিয়ে যাচ্ছেন প্রয়োজনীয় সামগ্রী।
আলোরকোল অস্থায়ী ক্যাম্প ও দুবলা জেলে পল্লী টহল ফাঁড়ির ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা দিলীপ মজুমদার বলেন, উপকূলের বিভিন্ন এলাকার জেলেরা গভীর রাতে রওনা হয়ে ভোরে পৌঁছান দুবলার চরে। তারা চরে ঘর বাঁধতে শুরু করেছেন। জেলেদের থাকার ঘর বাঁধতে সময় লাগবে দু-তিনদিন।

এদিকে ভোরে চরে এসেই ঘর, মাঁচা ও চাতাল তৈরিসহ অন্যান্য জিনিসপত্র নামিয়ে রেখে জাল এবং নৌকা নিয়ে সাগরে মাছ ধরতে নেমেছেন জেলেরা। ভোরের প্রথম খেপের মাছও দুপুরে চলে এসেছে চরে। চরে সেই মাছ বাছাই করে শুকাতেও দিয়েছেন জেলেরা। দুবলার চরের মনোহারী দোকান ব্যবসায়ী মো. ফারুক বলেন, বৃহস্পতিবার উপকূলের বিভিন্ন এলাকা থেকে আসা জেলেরা প্রথমে মোংলায় অবস্থান নেন। পরে বনবিভাগের কাছ থেকে পাস নিয়ে গভীর রাতে দুবলায় যেতে শুরু করেন। কেউ গভীর রাতে এসেছেন, কেউ শুক্রবার ভোরে, আবার কেউ দুপুরে এসেছেন। তিনি আরও বলেন, চরে আমার নিজের মুদি ও তেলসহ বিভিন্ন সামগ্রীর ব্যবসা আছে। মৌসুম শেষে জেলে ও ব্যবসায়ীরা আবারও ফিরে যাবেন নিজ নিজ এলাকায়।
সুন্দরবন পূর্ব বনবিভাগ জানায়, এবারের শুঁটকি মৌসুম ঘিরে উপকূলের বিভিন্ন এলাকার প্রায় ১০ হাজার জেলে সমবেত হবেন দুবলার চরে। তারা দেড় হাজার ট্রলার নিয়ে মাছ ধরবেন গভীর সাগরে। সাগর থেকে আহরিত বিভিন্ন প্রজাতির মাছ বাছাই করে শুঁটকি করবেন। এরপর সেই শুঁটকি বিভিন্ন মোকামে চালান করবেন। এ বছর চরে জেলেদের থাকা ও শুঁটকি সংরক্ষণের জন্য ১ হাজার ১০৮টি জেলে ঘর ও ৭৮টি ডিপো স্থাপনের অনুমতি দিয়েছেন বনবিভাগ। গত শুঁটকি মৌসুমে দুবলার চর থেকে বনবিভাগের রাজস্ব আদায় হয়েছিল ছয় কোটি টাকা। আর এবার লক্ষ্য ধরা হয়েছে সাত কোটি টাকা।
ঝড়-জলোচ্ছ্বাসের মতো প্রাকৃতিক দুর্যোগে প্রাণহানি ও ক্ষয়ক্ষতির আশঙ্কা মাথা নিয়েই পরিবার-পরিজন রেখে পাঁচ মাস ধরে দুবলার চরে শুঁটকি তৈরিতে ব্যস্ত থাকবেন হাজারো জেলে। আর মৌসুম শেষেই লাভ-লোকসানে হিসাব কষেই ফের বাড়িতে ফিরবেন জেলে-শ্রমিক-মহাজনরা।- জাগো নিউজ




শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর









© All rights reserved © 2020 khoborpatrabd.com
Theme Developed BY ThemesBazar.Com