শনিবার, ২৭ জুলাই ২০২৪, ০২:২৬ অপরাহ্ন
শিরোনাম ::
ডিইউজে’র সাংগঠনিক সম্পাদক সাঈদ খানকে গ্রেফতার:বিএফইউজে ও ডিইউজে’র তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ আহতরা যেই দলেরই হোক চিকিৎসার দায়িত্ব নেবে সরকার: প্রধানমন্ত্রী ঢালাওভাবে মামলা-গ্রেপ্তার বন্ধ ও শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তা নিশ্চিতের দাবি সুজনের নিরীহ মানুষ হত্যাকারী রাষ্ট্রীয় সম্পদ ও স্থাপনার নিরাপত্তা  দিতে ব্যর্থ সরকারের ক্ষমতায় থাকার কোন  অধিকার নেই: মির্জা ফখরুল ছাত্র-জনতার খুনের দায়ে সরকারকে পদত্যাগ করতে হবে: বাংলাদেশের বিপ্লবী কমিউনিস্ট লীগ জনরোষ থেকে বাঁচাতে সরকার জামায়াতে ইসলামী, ছাত্রশিবির ও বিরোধীদলের ওপর দোষ চাপানোর অপচেষ্টা চালাচ্ছে: মাওলানা এটিএম মা’ছুম কোটা আন্দোলনকারীদের ওপর হামলায় যুক্তরাষ্ট্র নিন্দা:ম্যাথিউ মিলার পবিত্র আশুরার মর্মবাণী অন্তরে ধারণ করে সমাজে সত্য ও ন্যায় প্রতিষ্ঠায় কাজ করার জন্য প্রধানমন্ত্রীর আহবান ব্লাকবেঙ্গল জাতের ছাগল মেহেরপুরের দরিদ্র জনগোষ্ঠীর আয়ের অন্যতম উৎস দিনাজপুর হাবিপ্রবিতে সাপ নিয়ে গবেষণায় সফল শিক্ষার্থী কামরুন নাহার কনা

যুদ্ধবিরতিতে একমত যুক্তরাষ্ট্র-ইসরাইল-হামাস

খবরপত্র ডেস্ক:
  • আপডেট সময় রবিবার, ১৯ নভেম্বর, ২০২৩

পাঁচ দিনের যুদ্ধবিরতি ও ‘৫০ বা তার বেশি’ শিশু ও নারী বন্দীদের মুক্তির বিষয়ে একমতে পৌঁছেছে যুক্তরাষ্ট্র, ইসরাইল ও হামাস। গত শনিবার কাতারের মধ্যস্থতায় তারা এ মতে পৌঁছেছে। গতকাল রোববার ইসরাইলভিত্তিক সংবাদমাধ্যম দ্যা জেরুসালেম পোস্টের এক প্রতিবেদনে চুক্তির সাথে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের উদ্ধৃতি দিয়ে এ তথ্য জানানো হয়েছে। ছয় পৃষ্টার ওই চুক্তির মধ্যে রয়েছে, সব পক্ষ কমপক্ষে পাঁচ দিনের জন্য যুদ্ধ অভিযান স্থগিত করবে যেখানে ‘প্রাথমিক ৫০ বা তার বেশি বন্দীকে প্রতি ২৪ ঘণ্টায় ছোট ছোট দলে ছেড়ে দেয়া হবে। সংবাদপত্রটি বলেছে যে- উল্লেখযোগ্য পরিমাণে মানবিক সহায়তার অনুমতি দেয়ার উদ্দেশে স্থল গতিবিধি পর্যবেক্ষণ করবে পুলিশ। এ প্রতিবেদনের বিষয়ে হোয়াইট হাউস বা ইসরাইলের প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে তাৎক্ষণিক কোনো মন্তব্য পাওয়া যায়নি। চুক্তির সাথে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের থেকে আরো জানা গেছে, বন্দী মুক্তি আগামী কয়েক দিনের মধ্যে শুরু হতে পারে।
এদিকে ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষের সর্বশেষ পরিসংখ্যান অনুসারে, গাজা উপত্যকায় ইসরাইলি হামলার কমপক্ষে ১২ হাজার ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছে, যার মধ্যে ৮ হাজারের বেশি শিশু এবং নারী। আহত হয়েছে ২৮ হাজারেরও বেশি। গত মাস থেকে অবরুদ্ধ ছিটমহলে ইসরাইলের অবিরত বিমান ও স্থল হামলায় হাসপাতাল, মসজিদ এবং গির্জাসহ হাজার হাজার ভবন ক্ষতিগ্রস্ত বা ধ্বংস হয়েছে। ইসরাইলি সরকারি পরিসংখ্যান অনুসারে, ইতোমধ্যে ১ হাজার ২০০ ইসরাইলি নিহত হয়েছে। উল্লেখ্য, গাজাভিত্তিক ফিলিস্তিনি প্রতিরোধ আন্দোলন হামাস ইসরাইলের বিরুদ্ধে সামরিক অভিযান শুরু করেছে বলে ঘোষণা করে। এর প্রতিরোধে পাল্টা হামলা শুরু করে ইসরাইল।
এক বিবৃতিতে হামাসের সামরিক শাখার প্রধান মোহাম্মদ দেইফ বলেন, গত শনিবার (৭ অক্টোবর) সকালে ইসরাইলে পাঁচ হাজার রকেট বর্ষণের মাধ্যমে ‘অপারেশন আল-আকসা স্ট্রম’ শুরু হয়েছে। এ সময় ইসরাইল গাজা থেকে অনুপ্রবেশের কথা স্বীকার করে। বস্তুত, ১৯৫৩ সালের পর এই প্রথম এত বড় মাত্রার যুদ্ধ শুরু হয়েছে মধ্যপ্রাচ্যের আল আকসা অ লে। সূত্র : দ্যা জেরুসালেম পোস্ট
গাজার সবচেয়ে সুন্দর এলাকার করুণ পরিণতি: গাজার আল-জাহরা এলাকার অভিজাত গাজান পাড়ার বাসিন্দারা গত ২০ অক্টোবর শুক্রবার দুপুরের দিকে, ধুলা-ময়লা আর ধ্বংসস্তূপের সামনে দাঁড়িয়ে ছিলেন। এই ধ্বংসপ্রাপ্ত জায়গাটি এক সময় ছিল তাদের আবাসস্থল। গতকাল শুক্রবার দিনটি তাদের জন্য বিশেষ কারণ জুম্মাবার এবং এই দিন থেকেই সাপ্তাহিক ছুটি শুরু হয়। আল-জাহরায় এ ছুটির দিনের অর্থ ছিল ফালাফেল এবং হম্মুস, সেইসাথে কফি এবং চা খাওয়ার দিন। ভূমধ্যসাগরের তীর জুড়ে বড় বড় অ্যাপার্টমেন্ট বা ভিলায় থাকা এই পরিবারগুলো বিশেষ এই দিনে খাবারগুলো পরিবেশন করত। এখানকার বাসিন্দারা জানতেন যে তারা গাজার অধিকাংশ বাসিন্দাদের চাইতে অনেক ভাগ্যবান। কিন্তু এক রাতের মাথায়, ইসরাইলি বোমা হামলা এখানকার ২৫টি অ্যাপার্টমেন্ট ভবনকে মাটির সাথে মিশিয়ে দেয়, যেখানে কমপক্ষে শতাধিক মানুষ বসবাস করতেন। গত ৭ অক্টোবর হামাসের হামলার জবাবে গাজায় একটানা বোমা হামলা চালায় ইসরাইল। কিন্তু ২০ অক্টোবরের আগ পর্যন্ত আল-জাহরায় কোনো হামলা চালানো হয়নি।
ধসে পড়া এই অ্যাপার্টমেন্ট কমপ্লেক্সে যারা বাস করতেন, তাদের মধ্যে কেউ ডাক্তার, আইনজীবী, শিক্ষাবিদ, ফ্যাশন ডিজাইনার আবার অনেকে উদ্যোক্তা ছিলেন। ধ্বংসস্তূপের মধ্যেই তারা টিকে থাকা আর জীবনধারণের চেষ্টা করছেন। বাড়ি থেকে বের হওয়ার সময় খুব সামান্য কিছু সাথে নেয়ার সুযোগ পেয়েছেন এই মানুষগুলো। পরে তারা গাজা ভূখ-ের নানা জায়গায় আশ্রয় নেন। হানা হুসেন, আল-জাহরায় বেড়ে উঠলেও গত দুই বছর ধরে তিনি তুরস্কে থাকছেন। কয়েক শ’ মাইল দূর থেকে অনেক আতঙ্কের সাথে গাজা উপত্যকায় হামলার নানা খবরে চোখ রাখছিলেন তিনি।
ওইদিন তাড়াহুড়ো করে, তিনি তার পরিবারকে ফোন করে খোঁজ নিয়েছিলেন যে তারা নিরাপদে আছেন কি না? তাদের ভালোবাসেন বলার পর টেলিফোন লাইনটি কেটে যায়।
‘জানতে চাওয়ার জন্য ধন্যবাদ। আমরা এখনো বেঁচে আছি’: ধ্বংস হওয়া অ্যাপার্টমেন্ট ব্লকের বাসিন্দারা বোমা হামলা থেকে বাঁচতে একটি বিশ্ববিদ্যালয় ভবনে আশ্রয় নিয়েছিলেন।
এক্ষেত্রে তাদের সাহায্য করেছিলেন স্থানীয় দন্ত চিকিৎসক মাহমুদ শাহীন। তিনি তার প্রতিবেশীদের দ্রুত ওই ভবন থেকে সরিয়ে নেয়ার ব্যবস্থা করেছিলেন। হামলার দিন ভোরবেলায় এক ইসরাইলি গোয়েন্দা অ্যাজেন্টের কাছ থেকে এই দন্ত চিকিৎসক ফোন কল পান। সেখানে তাকে সতর্ক করে বলা হয় যে ওই অ্যাপার্টমেন্ট ব্লকগুলোয় কিছুক্ষণ পর বোমা ফেলা হবে। মাহমুদ শাহীন এ বিষয়ে আরো নিশ্চিত হতে ইসরাইলের প্রতিরক্ষা বাহিনীর (আইডিএফ) কাছে জানতে চান যে তারা আল-জাহরার আবাসিক ব্লকগুলোয় হামলার সিদ্ধান্ত নিয়েছে কি না? এ বিষয়ে আইডিএফ জানায় যে, তারা ‘নির্দিষ্ট কোন কোন স্থানে অভিযান চালাবে সে সংক্রান্ত প্রশ্নের উত্তর দিতে পারবে না।’ ‘হামাস, গাজা উপত্যকার বিভিন্ন স্থান থেকে ইসরাইলের ওপর আক্রমণ করছে এবং তারা বেসামরিক অবকাঠামোয় অবস্থান করছে,’ বলে জানিয়েছে আইডিএফ। তবে আল-জাহরায় হামলায় কোনো হামাস যোদ্ধা নিহত হয়েছেন কি না এমন কারো নাম উল্লেখ করেনি আইডিএফ। ধারণা করা হয়, ওই হামলায় কেউ মারা যায়নি।
ইসরাইল বলেছে যে তাদের কৌশল হলো হামাসকে নির্মূল করা। হামাস বেসামরিক মানুষদের মাঝে থেকে, তাদের অভিযান পরিচালনা করছে বলে অভিযোগ উঠেছে। আইডিএফের দাবি, তারা বেসামরিক মানুষ হতাহতের ঘটনা কমিয়ে আনার জন্য নানা ধরনের পদক্ষেপ নিয়েছে। ‘যেমন আমরা মাহমুদকে ফোন করে জানিয়েছি যার কারণে সে তার এলাকা খালি করতে পেরেছিল।’ যে অ্যাজেন্ট ওই দন্ত চিকিৎসককে ফোন করেছিলেন, তিনি এটাও বলেছিলেন যে ‘আমরা এমন অনেক কিছুই দেখি যা আপনি দেখতে পান না।’
মাহমুদের প্রতিবেশীরা সেদিন হয়তো সেখান থেকে প্রাণ নিয়ে পালাতে পেরেছিলেন। কিন্তু এরপরে যা ঘটেছে, তা থেকে সবাই রক্ষা পায়নি। বিবিসি দুই সপ্তাহ ওই এলাকা ঘুরে দেখেছে এবং সেখানকার বেশ কয়েকটি পরিবারের সাথে কথা বলেছে। সেখানে যেমন প্রতিষ্ঠিত বাসিন্দারা ছিলেন, সেইসাথে ছিলেন উচ্চাভিলাষী নবাগত তরুণ। তারা বিবিসিকে জানায় যে তারা তাদের বাড়ি থেকে বের হওয়ার সময় হাতের কাছে যা কিছু পেয়েছে তা নিয়ে কোনোভাবে পালিয়েছে। এরপর তারা চোখের সামনে নিজেদের বাড়ি বিস্ফোরিত হতে দেখেন। এরপর গাজার চারপাশে এক অনিশ্চিত ভাগ্যের পথে পা বাড়ান। গাজা উপত্যকা জুড়ে অস্থায়ী শিবির এবং অস্থায়ী ঘরগুলোয় যারা আশ্রয় নিয়েছেন, তারা তাদের প্রিয় এলাকাটির জন্ম ও মৃত্যুর গল্পের কথা বলতে চেয়েছেন।
তাদের সাথে বিবিসির টেলিফোনে যতোটা যোগাযোগ হয়েছে সেটাও বার বার কেটে যাচ্ছিল, ভাঙা ভাঙা ফোন কলে কথা হয়েছে।
কখনো কখনো ওইপাশ থেকে তীব্র বোমার শব্দ পাওয়া যায়। সেইসাথে ছিল বিক্ষিপ্ত কিছু হোয়াটসঅ্যাপ বার্তা। তখন এই মানুষরা নিরাপদ আশ্রয় খোঁজার জন্য ছোটাছুটি করতেন। এজন্য তারা বেশিক্ষণ কথা বলতে পারতেন না। কখনো কখনো টানা কয়েকদিন যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়েছিল। গাজা উপত্যকায় তীব্র ইসরাইলি হামলার সময় সাম্প্রতিক যোগাযোগ বিচ্ছিন্নতার পরে, আল-জাহরার এক বাসিন্দার কাছ থেকে অবশেষে একটি ক্ষুদে বার্তা আসে। তিনি লিখেছিলেন, ‘জানতে চাওয়ার জন্য ধন্যবাদ। আমরা এখনো বেঁচে আছি।’ কথোপকথন থেকে জানা যায় যে আল-জাহরা ছেড়ে যাওয়া সবাই বেঁচে নেই।
নিহতদের মধ্যে ছিলেন স্থানীয় জিমের একজন তরুণ বডিবিল্ডার। সোশ্যাল মিডিয়া পোস্ট অনুসারে তার বন্ধুর সাথে শেষ কথা ছিল, ‘সব শেষ হয়ে গেছে।’ হামাস পরিচালিত স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় বলছে, যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর থেকে গাজায় ১০ হাজারেরও বেশি ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন, যাদের এক তৃতীয়াংশ শিশু।
নাশওয়ার গল্প: গাজা উপত্যকা অত্যন্ত ঘনবসতিপূর্ণ এবং দারিদ্র্যের হারও অনেক বেশি। ‌এই উপত্যকায় প্রবেশ ও বের হওয়ার ওপর কঠোর নিয়ন্ত্রণ আরোপ করা হয়েছে। কিন্তু আল-জাহরা ছিল অন্যরকম। এখানে ছিল উঁচু সব দালান এবং বাইরে ঝকঝকে খোলা আঙিনা, যেখানে বাদাম ও ডুমুর গাছের বাগান ছিল। খেলার মাঠ আর পার্ক ছিল। প্যালেস্টাইন অথরিটির (পিএ) প্রেসিডেন্ট ইয়াসির আরাফাত ১৯৯০ এর দশকে আল-জাহরা এলাকাটি প্রতিষ্ঠা করেন। তিনি মূলত তার কর্মী ও সমর্থকদের জন্য জায়গাটি বরাদ্দ করেছিলেন।
স্থানীয়রা মতে, এই এলাকার সাথে পিএ-এর শক্তিশালী সংযোগ ছিল। পিএ-এর আধিপত্য মূলত অধিকৃত পশ্চিম তীর জুড়ে, যারা কি না হামাসের তিক্ত প্রতিদ্বন্দ্বী। এলাকাটি ওয়াদি গাজা নদীর ঠিক উত্তরে অবস্থিত। এর অবস্থান এমন এক জায়গায়, যে জায়গা দিয়ে গত ১৩ অক্টোবর বেসামরিকদের দক্ষিণে সরে যাওয়ার নির্দেশ দিয়েছিল ইসরাইল। এরপর তারা গাজাকে লক্ষ্য করে একের পর এক বোমা হামলা চালাতে থাকে। গত ৭ অক্টোবর শত শত হামাস বন্দুকধারী ইসরাইলের সীমান্ত এলাকা জুড়ে তা-ব চালায়। এতে ইসরাইলি ভূখ-ে ১৪ শ’ জনেরও বেশি নিহত হন, যাদের বেশিরভাগই শিশুসহ বেসামরিক নাগরিক। পরে ইসরাইলের দুই শতাধিক মানুষকে বন্দী করে নিয়ে যায় হামাস। হামাস মূলত দক্ষিণ ইসরাইলের সীমান্ত ঘেঁষা একটি গ্রামে তরুণদের সঙ্গীত উৎসবে হামলা চালিয়েছিল, যা সেখানকার মানুষদের মর্মাহত করে। এর প্রতিক্রিয়ায় গাজায় টানা হামলা চালাতে শুরু করে ইসরাইল বিবিসি যাদের সাথে কথা বলেছে তারা প্রত্যেকেই জোর দিয়ে বলেছে যে তাদের জানামতে, এই এলাকাটি হামাস এবং এর কার্যক্রম থেকে অনেক দূরে ছিল।
গাজা উপত্যকা ২০০৭ সাল থেকে শাসন করে আসছে হামাস। আল জাহরার এক বাসিন্দা বিবিসিকে বলেন, ‘এখানে কোনো সেনা ছিল না, আমি মনে হয় না যে এখানে কোন হামাস সমর্থক ছিল।’ নাশওয়া রেজেক ১৮ বছর ধরে আল-জাহরায় বসবাস করেছেন। তার কাছে ওই এলাকাটি ছিল, ‘সব শহরের সেরা শহর’। নাশওয়া ওই এলাকার নানা কমিটি এবং স্থানীয় যুব পরিষদের সাথে ব্যাপকভাবে সম্পৃক্ত ছিলেন। তিনি এক দশকেরও বেশি সময় ধরে একটি কমিউনিটি ফেসবুক গ্রুপ পরিচালনা করছেন। আপনি যদি তাকে নির্দিষ্ট কোনো বাসিন্দা সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করেন, তবে তিনি সম্ভবত তাদের চিনবেন এমনকি তাদের ফোন নম্বরও বলতে পারবেন।
ফেসবুক পেজটির ফলোয়ার সংখ্যা ছিল প্রায় ১০ হাজারের মতো। যুদ্ধ বাধার আগে তার ফেসবুক পেইজে সবশেষ পোস্টটি ছিল স্থানীয় একটি ক্যাফেতে এক বিলিয়ার্ড টুর্নামেন্ট নিয়ে। ওই টুর্নামেন্টে একজন স্নাতক ছাত্র জয়ী হওয়ায় তাকে অভিনন্দন বার্তা দেন তিনি। এখন ওই ফেসবুক গ্রুপে তারা তাদের আশেপাশে ধ্বংসযজ্ঞের আপডেট শেয়ার করে। সেখানে যারা বসবাস করতো তাদের নিহতের খবরও জানানো হয়। এর আগে নাশওয়া কখনোই এতটা ব্যস্ত সময় পার করেননি। ওই গ্রুপের সাম্প্রতিক এক পোস্টে তিনি, একটি ইতালীয় রেস্তোরাঁয় ইসরাইলি বোমার আঘাতে পুরো একটি পরিবার নিহতের ঘটনায় শোক প্রকাশ করেন। যখন যুদ্ধ ঘোষণা করা হয়, তখন নাশওয়া তার স্বামী এবং চার সন্তানের সাথে দক্ষিণের দিকে চলে যান। ওই অ লে উত্তেজনা ঘনীভূত হলে পরিবারটি সবসময় তাই করে থাকে। যাওয়ার সময় তিনি তার প্রতিবেশীর কাছে একটি চাবি তুলে দিয়ে বলেন বলেন, যেন তিনি তার অনুপস্থিতিতে তারা প্রিয় গাছগুলো দেখভাল করেন। প্রথম বোমা হামলার দুই দিন পর আল-জাহরার সবচেয়ে উঁচু ভবন, যেখানে তিনি বসবাস করতেন সেটি ভোরবেলা বোমা হামলায় ধ্বংস হয়ে যায়। ‘কেউ আমাকে ফোন করে জানায়, আমি এইমাত্র তোমার টাওয়ারের পাশ দিয়ে হেঁটে গেলাম এবং পুরোটাই মাটিতে মিশে গেছে।’ তিনি তার প ম তলার বাসার বর্ণনা দিতে গিয়ে বলেন সেটা “খুব বড় এবং প্রশস্ত” ছিল।
তার পরিবার বাসাটি কেনার পর এক দশক ধরে এর সৌন্দর্য বাড়াতে কাজ করেছে। তারা সম্প্রতি নতুন এক ইউনিট এয়ার কন্ডিশনার, একটি টেলিভিশন এবং নতুন কিছু আসবাবপত্র কিনেছিলেন। ‘অনেকে বলতে পারে আমরা শুধু অর্থ হারিয়েছি। কিন্তু আমার কাছে আমার বাসা ছিল আমার আত্মার মতো।’ এখন দক্ষিণ গাজায়, তিনি ও তার পরিবার বিপদের মুখেই আছেন। ‘তিন দিন আগে তারা আমাদের পাশের বাড়িতে বোমা হামলা চালায়। সেই বোমা হামলার ধোঁয়া আমাদের দম বন্ধ করে দিয়েছিল।’ নাশওয়ার সন্তানরা এখন প্রশ্ন করছে, ‘তারা আল-জাহরা থেকে পালিয়ে যাওয়ার সময় নতুন এয়ার কন্ডিশনার ইউনিট এবং টেলিভিশন কেন সাথে আনতে পারেনি?।’ তারা জানতে চায়, কখন তারা বাড়িতে ফিরে তাদের খেলনা দিয়ে খেলতে পারবে।
নাশওয়ার জন্য, তার বাসার গাছপালার কথা মনে করে বলেন, ‘আমি ওদের সবাইকে ভালোবাসতাম।’ বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক আহমেদ হাম্মাদ, যিনি নাশওয়ার কাছে একটি ভবনে থাকতেন, তিনি ছিলেন ওই কমিউনিটির আরেক প্রতিষ্ঠিত সদস্য। তিনি তাদের মধ্যে একজন, যিনি হামলার মধ্যেও সেখানে থাকার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন। আহমেদ হাম্মাদ ছিলেন গাজার উত্তরা লের এক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক। ৫০ বছর বয়সী এই ব্যক্তি ছিলেন মিডিয়া এবং যোগাযোগ বিষয়ক অধ্যাপক। তিনি বেশ আগ্রহের সাথে আমাদের কাছে তার গবেষণাপত্র পাঠাতেন। তার আট থেকে ২৭ বছর বয়সী ছয় সন্তানকে নিয়ে বেশ গর্ব করতেন।
‘তার সন্তানদের মধ্যে একজন ডেন্টিস্ট, একজন আইটি কর্মকর্তা, একজন বিশ্ববিদ্যালয়ে ইংরেজি সাহিত্যের শিক্ষার্থী এবং বাকি তিনজন স্কুলছাত্র ছিল,’ তিনি জানান। গত মাসে যখন আমরা ফোনে কথা বলছিলাম, আহমেদ এবং তার পরিবার তাদের আল-জাহরার বাড়িতেই আশ্রয় নিয়েছে।
হামলার পর তাদের বাড়িতে কোনো দরজা জানালা অক্ষত নেই। তারা আর কাজে যেতে পারে না, স্কুলে যেতে পারত না। এখন তাদের সময় কাটে কাঠের টুকরোর যোগাড় করতে। যেন তারা সেগুলো পুড়িয়ে খাবার রান্না করে খেতে পারে। তারা সেখানেই থেকে যান। কারণ তারা সরে যেতে খুব ভয় পাচ্ছিলেন। দক্ষিণের দিকে যাওয়ার সময় হামলার মুখে পড়তে পারেন- এমন আতঙ্কের মধ্যে ছিলেন তিনি। কিন্তু ২৭ অক্টোবর রাতে, ইসরাইল বিমান হামলা জোরদার করে এবং তাদের স্থল অভিযানের প্রসার ঘটায় এবং এতে আহমেদের সাথে আমাদের যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। কয়েকদিন পরে আহমেদ আমাদের সাথে যোগাযোগ করে বলেন যে তারা ‘খুব, খুব ভয়াবহ একটি রাত’ এবং তার চেয়েও খারাপ সকাল কাটানোর পর ওই এলাকা ছেড়ে গিয়েছেন। তিনি দক্ষিণে যাওয়ার পথে ‘অবিরাম বোমা হামলা’ এড়িয়ে যাওয়ার কথা বর্ণনা দেন। ‘যতবারই বোমা পড়ে, আমরা মাটিতে লুটিয়ে পড়ি।’
আল-জাহরার যতো উদ্যোক্তা: অন্যদিকে তুরস্কে বসবাসরত হানা গাজায় তার পরিবারের একটি আপডেটের অপেক্ষায় প্রতিনিয়ত ফোনের সাথে জুড়ে ছিলেন। অপেক্ষায় থাকা এই নারী গাজার কথা ব্যাখ্যা করতে গিয়ে বলেন, সেটি ‘পৃথিবীর সবচেয়ে সুন্দর, উষ্ণতম স্থান।’ আল-জাহরার বাসিন্দারা সমুদ্র সৈকতের কাছে জড়ো হতেন। সূর্যোদয় এবং সূর্যাস্তের সময় সেখানকার প্রধান রাস্তাটি মানুষে মানুষে পূর্ণ হয়ে যেতো। শুক্রবার, হানা এবং তার বন্ধুরা সেখানে জড়ো হয়ে সারা সপ্তাহের গল্প করতেন, হাসিতে মেতে উঠতেন। যুদ্ধ এখানকার জীবন এখন কতটা বদলে দিয়েছে সেটা তাদের বন্ধুদের সাথে কথাবার্তা থেকেই ধারণা করা যায়।
হানা জানান, তিনি যে বন্ধুদের সাথে একসময় হাসিতে মেতে থাকতেন, আজ ঠিক তাদের থেকেই ভয়াবহ সব বার্তা পান। এক বন্ধু তার কাছে এটাও জানতে চায় যে সে মারা গেলে হানা তার সন্তানদের দেখাশোনা করবে কি না, অন্যরা ‘মাসিকের সময় বিকল্প কী ব্যবহার করা যেতে পারে সে বিষয়ে পরামর্শ চাইছিলেন’। আরেকজন আফসোস করে বলছিলেন, তাদের কাছে অন্তত খাওয়ার জন্য যদি বিশুদ্ধ পানি থাকত! অনেক দিন অপেক্ষার পর, হানা অবশেষে তার ভাই ইয়াহিয়াসহ তার পরিবারের সাথে যোগাযোগ করতে পারে। যাকে সে তার সোলমেট বা ‘আত্মার বন্ধু’ বলে বর্ণনা করেছেন। ইয়াহিয়া আল-জাহরার নতুন প্রজন্মের উদ্যোক্তাদের মধ্যে একজন ছিলেন। এই ৩০ বছর বয়সী ফ্যাশন ডিজাইনার বর্তমানে গাজার দক্ষিণে একটি স্থানে আরো অনেকের সাথে গাদাগাদি করে থাকছেন। তিনি এই বর্তমান পরিস্থিতির পরিবর্তে তার ফেলে আসা জীবন সম্পর্কে কথা বলতেই বেশি স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করেন। তিনি পরিবারকে নিয়ে ওই বাসা থেকে বের হয়ে আসার কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই সেটি ইসরাইলি হামলায় ধ্বংস হয়ে যায়। তিনি তার অ্যাপার্টমেন্ট ভবনের ছাদ থেকে আশেপাশে তাকিয়ে পাখির কলকাকলি শুনতেন, সেই কথা তার বারবার মনে পড়ে। সূত্র : বিবিসি




শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর









© All rights reserved © 2020 khoborpatrabd.com
Theme Developed BY ThemesBazar.Com