মাত্র কিছুক্ষণ আগেই আইসিসি বিশ্বকাপ ফাইনালে অস্ট্রেলিয়ার কাছে হেরেছে ভারত। টানা ১০ ম্যাচ জিতে দেশের মাটিতে ফাইনালে হেরে বিধ্বস্ত ভারতীয় ক্রিকেটারেরা বসে রয়েছেন সাজঘরে। হঠাৎ সেখানে গেলেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। শুধু গেলেনই না, ভারতীয় ক্রিকেটারদের উজ্জীবিত করার চেষ্টা করলেন। তাদের জড়িয়ে ধরলেন। দিল্লিতে নিমন্ত্রণও জানালেন বিরাটদের। এভাবে ভারতের সাজঘরে ঢুকে কি আন্তর্জাতিক ক্রিকেট কাউন্সিল তথা আইসিসি-র নিয়ম ভেঙেছেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী? অন্তত তেমনটাই অভিযোগ করেছেন কীর্তি আজাদ। ভারতের ১৯৮৩ সালের বিশ্বকাপজয়ী ক্রিকেটারের আর একটি পরিচয়ও রয়েছে। তিনবারের এমপি কীর্তি বিজেপি, কংগ্রেস হয়ে এখন তৃণমূলে।
নিজের এক্স হ্যান্ডলে কীর্তি লিখেছেন, ‘যেকোনো দলের কাছে সাজঘর সব থেকে পবিত্র জায়গা। সেখানে ক্রিকেটার ও সাপোর্ট স্টাফ ছাড়া কাউকে ঢোকার অনুমতি দেয় না আইসিসি। প্রধানমন্ত্রীর উচিত ছিল সাজঘরের বাইরে ক্রিকেটারদের সঙ্গে দেখা করা।’ কীর্তি জানিয়েছেন, একজন রাজনৈতিক নেতা হিসাবে নয়, ক্রীড়াবিদ হিসেবে এই প্রশ্ন তুলছেন তিনি। কীর্তি আরো লিখেছেন, ‘মোদি কি দলের সমর্থকদের অনুমতি দেবেন তার শোয়ার ঘর, বসার ঘর বা শৌচালয়ে গিয়ে দেখা করার? রাজনীতিবিদদের থেকে ক্রীড়াবিদেরা অনেক বেশি নিয়ম মেনে চলেন।’ শেষে মোদিকে ‘অপয়া’ বলেও উল্লেখ করেছেন আজাদ। মোদির নামাঙ্কিত স্টেডিয়ামে তার সামনে বিশ্বকাপ ফাইনাল হারায় সমাজমাধ্যমেও এই ধরনের বিদ্রুপ করা হচ্ছে মোদিকে নিয়ে।
এখন প্রশ্ন, কীর্তি যে অভিযোগ তুলেছেন তা কি যথাযথ? সত্যিই কি ক্যামেরাম্যানসহ ভারতীয় দলের সাজঘরে গিয়ে নিয়ম ভেঙেছেন মোদি? সাধারণত, দলের ক্রিকেটার ও সাপোর্ট স্টাফ ছাড়া সাজঘরে কেউ ঢোকেন না। বিভিন্ন দলের সাজঘরের অন্দরের যে ভিডিও সমাজমাধ্যমে বের হয় তা সেই ক্রিকেট বোর্ডের নির্দেশে হয়। বাইরের কেউ গিয়ে সেখানে ছবি বা ভিডিও তোলেন না।
তবে আইসিসি-র বিধিতে এই বিষয়ে কোনো সুস্পষ্ট নিয়ম লেখা নেই। দলের বাইরের কেউ সাজঘরে গেলে কোনো পদক্ষেপ করা হবে কি না সে বিষয়েও কিছু লেখা নেই। হতে পারে প্রধানমন্ত্রী বলেই আলাদা করে তাকে যাওয়ার অনুমতি দেয়া হয়েছিল। দেশ হেরে যাওয়ার পরে ক্রিকেটারদের উজ্জীবিত করার জন্য সাজঘরে গিয়েছিলেন মোদি। সেই কারণেই হয়তো তাকে কেউ নিষেধ করেননি। মোদির ভিডিও প্রকাশ হওয়ার পরে ভারতীয় ক্রিকেট বোর্ড বা আইসিসিও কিছু বলেনি। তার থেকে মনে করা হচ্ছে, বিসিসিআই ও আইসিসির এই ঘটনায় কিছু বলার নেই। ক্রিকেটে গড়াপেটার ছায়া পড়ার পর থেকে সাজঘরের নিরাপত্তা কড়া করেছে আইসিসি। ভারতীয় ক্রিকেটারদের দেখা যায়, কোনো স্টেডিয়ামে পা রাখার পরে প্রথমেই মোবাইল ফোন দিয়ে দিতে হয় ক্রিকেটারদের। খেলা শেষ না হওয়া পর্যন্ত ফোন জমা দেয়া থাকে। প্রধানমন্ত্রী বলেই হয়তো তাকে সাজঘরে ঢোকার অনুমতি দেয়া হয়েছে।
চলতি বিশ্বকাপে মুম্বইয়ের ওয়াংখেড়ে স্টেডিয়ামে ভারত-নিউজিল্যান্ড ম্যাচ শেষে যুজবেন্দ্র চহালকে দেখা গিয়েছিল ভারতীয় সাজঘরে ঢুকতে। সেখানে গিয়ে ক্রিকেটারদের সঙ্গে দেখা করেছিলেন তিনি। ভারতের আর এক ক্রিকেটার হার্দিক পা-্যও সে দিন স্টেডিয়ামে ছিলেন। তিনি কিন্তু সাজঘরে ঢোকেননি। চহাল সাজঘরে ঢোকাতেও অনেকে প্রশ্ন তুলেছিলেন। কিন্তু আইসিসির বিধিতে স্পষ্ট করে এই নিয়ে কিছু লেখা না থাকায় হয়তো সে ক্ষেত্রেও কোনো ব্যবস্থা নেয়া হয়নি চহালের বিরুদ্ধে। বিশ্বকাপ ফাইনালে আরো একটি ঘটনা ঘটেছে যা এর আগে কোনো বিশ্বকাপে দেখা যায়নি। যে দল চ্যাম্পিয়ন হয় সেই দলের হাতে সাধারণত ট্রফি তুলে দেন আইসিসির চেয়ারম্যান। কিন্তু রোববার দেখা গিয়েছে, অস্ট্রেলিয়ার উপপ্রধানমন্ত্রী রিচার্ড মার্লেসের সাথে মোদিই ট্রফি তুলে দিচ্ছেন প্যাট কামিন্সের হাতে। এ ক্ষেত্রেও কি নিয়ম ভাঙা হয়েছে? প্রশ্ন উঠছে, ক্রিকেটের সর্বোচ্চ নিয়ামক সংস্থার প্রধানের জায়গায় কোনো দেশের প্রধানমন্ত্রী কি এ ভবে ট্রফি তুলে দিতে পারেন! সূত্র : আনন্দবাজার পত্রিকা