মঙ্গলবার, ১৭ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০২:৩৫ পূর্বাহ্ন

জোটেই কি কপাল পুড়বে আওয়ামী লীগ প্রার্থীর

মাহমুদ আল আজাদ হাটহাজারী (চট্টগ্রাম) :
  • আপডেট সময় শনিবার, ২৫ নভেম্বর, ২০২৩

জটিল সমীকরণে হাটহাজারী!

আসন্ন দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে চট্টগ্রাম-৫ (হাটহাজারী-বায়েজিদ) আংশিক আসনে ১৪ জন আওয়ামী লীগের দলীয় মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করে জমা দিয়েছেন। হাটহাজারীর ইতিহাসে এবারই সবচেয়ে বেশি সংখ্যক প্রার্থী দলীয় মনোনয়ন চাইছেন। সর্বশেষ এই ১৪ জনের মধ্যে কে পাচ্ছে দলীয় মনোনয়ন তথা “সোনার হরিণ নৌকা তা নিয়েই চলছে নানা জল্পনা কল্পনা। আবার অনেকেই বলছে দলীয় মনোনয়ন নৌকা প্রতীক পেলেও ১৫/২০দিনের মধ্যেও নাকি সেটি প্রত্যাহার করতে হবে।জোটের মধ্যে জাতীয় পার্টির আনিস বা কৌশলে কল্যাণ পার্টির মেজর জেনারেল (অবঃ) ইবরাহীমকে হাটহাজারীর আসন ছেড়ে দিতে পারে। এ জটিল সমিকরণে রাজনীতির মাঠ উত্তপ্ত।এমনকি চায়ের দোকানেও চলছে আলোচনা সমালোচনা। যার কারনে সবার দৃষ্টি ঢাকার দিকে হলেও কে পাচ্ছে দলীয় প্রতীক সোনার হরিণ।আবার সমীকরণ মেলাতে কেড়ে নেয় নাকি সেটি নিয়েও হতাশ নেতাকর্মীদের মাঝে।দলীয় এমপি না থাকায় হাটহাজারী উপজেলা আওয়ামী লীগের অন্তকোন্দলে বিভক্তি।যার কারনে বিগত দিনেও দলীয় কার্যক্রম একেবারেই কোণঠাঁসা হয়ে পড়েছিল।নির্বাচনের পূর্বে গত দেড় মাস আগে থেকে বিভিন্ন ব্যানারে জামায়াত বিএনপির হরতাল অবরোধের প্রতিবাদে মাঠে নেমেছে ক্ষমতাসীন দলের নেতাকর্মীরা। দলের দুই গ্রুপ চলছিল বর্তমান এমপি আনিসের সাথে অন্য গ্রুপ একক ভাবে। মেজর জেনারেল ইবরাহীম হঠাৎ বিএনপির যুগপৎ আন্দোলন ছেড়ে দলীয় সরকারের অধিনে নির্বাচনে আসার ঘোষণা দেয়ার পরেই নিজ এলাকা হাটহাজারীতে অবাঞ্ছিত ঘোষণা করেছে উপজেলা বিএনপি ও অঙ্গ সংগঠন। ঝিঁমিয়ে থাকা ইবরাহীম হঠাৎ রাজনীতিতে আলোচনায়। এদিকে বাংলাদেশ স্বাধীনতার পর ১৯৭৩ সাল থেকে ২০২৩ সাল পর্যন্ত দীর্ঘ ৫০ বছরে চট্টগ্রাম-৫ আসন হাটহাজারীতে এমপি হিসেবে দায়িত্বে ছিলেন মাত্র তিনজন ব্যক্তি। এই ৫০ বছর ধরে এলাকায় জনপদ ও শিক্ষা ব্যবস্থাসহ অবকাঠামো উন্নয়নে যথেষ্ট ভূমিকা রেখেছেন চট্টগ্রাম জেলা আওয়ামী লীগের তৎকালীন সহ-সভাপতি মরহুম এম আবদুল ওয়াহাব, জাতীয় পার্টির কো-চেয়ারম্যান ব্যারিস্টার আনিসুল ইসলাম মাহমুদ ও বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের (বিএনপি) চেয়ারপার্সনের তৎকালীন উপদেষ্টা মরহুম সৈয়দ ওয়াহিদুল আলম। দেশের প্রথম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পেয়ে নৌকা প্রতীক নিয়ে প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীদের হারিয়ে বিজয়ী হন চট্টগ্রাম জেলা আওয়ামী লীগের তৎকালীন সহ-সভাপতি মরহুম এম আবদুল ওয়াহাব।এর পর থেকে হাটহাজারীতে দলীয় প্রতীকে নির্বাচন করলেও বিজয়ী হয়নি আওয়ামী লীগ। আওয়ামী লীগ থেকে ১৯৭৯ মরহুর জামাল উদ্দিন, ১৯৮৬-৯০ সালে মরহুম আলহাজ্ব নাজিম উদ্দিন,১৯৯৬ সালে বর্তমান উত্তর জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি এম এ সালাম, ২০০১সালে এড.ইবরাহিম হোসেন বাবুল।সকলেই চার দলীয় জোটের বিএনপি প্রার্থীর কাছে নির্বাচনে পরাজিত হয়।তবে ২০০৮সালে মহাজোট গঠন করে জোট প্রাথী জাতীয় পার্টির ব্যারিস্টার আনিসুল ইসলাম মাহমুদ বিজয়ী হয়ে টানা তিনবার এমপি নির্বাচিত হন। এদিকে ২০১৮ সালে একাদশ জাতীয় নির্বাচনে দলীয় মনোনয়ন আলহাজ্ব ইউনুছ গনি চৌধুরী মনোনয়ন নিলেও জোটের কারনে নেত্রীর নির্দেশে তা প্রত্যাহার করে নেন।আগামী দ্বাদশ নির্বাচনে হাটহাজারীতে জোটগত নয় দলীয় একক প্রার্থী চাই উপজেলা আওয়ামী লীগের নেতা ও তৃণমূল কর্মীরা। এনিয়ে গত কয়েক মাস সভা মিটিং মিছিলেও সরগম ছিল হাটহাজারীর রাজপথ। দলীয় নির্বাচনে একক প্রার্থী এম এ সালামকে মনোনয়ন দিতে মিটিং মিছিলে প্রকাশ্যে দাবি জানালেও অনেক নেতা পর্দার আড়ালে নিজেও মনোনয়নের জন্য প্রস্তুত ছিলেন। যার মধ্যে দলীয় মনোয়ার নিয়েছেন ১৪জন প্রার্থী। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক আরো দুই নেতা মনোনয়ন নেয়ার কথা থাকলেও অদৃশ্য কারনে নেয়নি। এদিকে দীর্ঘদিন আওয়ামী লীগ থেকে তাদের মনোনয়ন প্রত্যাশীদের নৌকার প্রার্থী না দেওয়াই নেতাকর্মীরা হতাশ হয়ে পড়েন। এবার দলের মনোনয়ন প্রত্যাশী নেতাকর্মীদের যাচাই-বাছাই করে নৌকার প্রার্থী দিবেন বলেও আশা করেন মনোনয়ন প্রত্যাশীদের অনুসারীরা। তারা বলেন,একজন ইউনিয়নের নেতাকে মনোনয়ন দিলেও তার জন্য নির্বাচনী মাঠে কাজ করব। ফেসবুক সোশ্যাল মিডিয়ায় ১৪ প্রার্থীর নিজ নিজ সমর্থকরা নানা ভাবে প্রচারণা চালালেও নেতাকর্মীদের দৃষ্টি ঢাকার দিকে। কে পাচ্ছে দলীয় মনোনয়ন তা নিয়েই আগ্রহ তৃণমূল নেতাকর্মীদের? হাটহাজারীর আওয়ামী লীগের সাধারণ নেতাকর্মীদের অধিকাংশই যিনি নৌকা পাবেন তার পক্ষেই কাজ করবেন। তবুও নিজ নিজ পছন্দের নেতা যাতে মনোনয়ন পায় তার জন্যই চেষ্টা তদবীর তাদের। হাটহাজারী ৫ আসন থেকে নৌকা প্রতীক চেয়ে ১৪ জন আওয়ামী লীগের দলীয় মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করেছেন। তারা হলেন, চট্টগ্রাম উত্তর জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও জেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান মোহাম্মদ আবদুস সালাম, চট্টগ্রাম উত্তর জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক যুগ্ম সম্পাদক ইউনুস গনি চৌধুরী, চট্টগ্রাম উত্তর জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক যুব ও ক্রীড়া বিষয়ক সম্পাদক মঞ্জুরুল আলম চৌধুরী, চট্টগ্রাম উত্তর জেলা শ্রমিক লীগের সভাপতি এডভোকেট মোহাম্মদ শামীম, চট্টগ্রাম উত্তর জেলা মহিলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এডভোকেট বাসন্তী প্রভা পালিত, আওয়ামী লীগ নেতা মো. ইব্রাহিম হোসেন চৌধুরী, মাহমুদ সালাউদ্দিন চৌধুরী, যুবলীগ নেতা নাছির হায়দার করিম বাবুল,মোহাম্মদ মইনুদ্দিন, মুহাম্মদ শাহাজাহান ডা. নূর উদ্দীন জাহেদ, মো. রাশেদুল ইসলাম, চৌধুরী, আওয়ামী লীগের জাতীয় কমিটির সদস্য মোহাম্মদ ইউনুছ ও মাসুদুল আলম। দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার পর সরগরম হয়ে উঠেছে হাটহাজারীর রাজনীতি। বিএনপি ও সমমনা দলগুলো নিরব থাকলেও আওয়ামী লীগ লবিংতে চলছে জোর নির্বাচনী প্রস্তুতি। নির্বাচনের দিন যতই ঘনিয়ে আসছে রাজনীতিতে ততই হচ্ছে উত্তপ্ত। একই সাথে সাধারণ মানুষের মাঝে তৈরি হচ্ছে নানা প্রশ্ন, কৌতুহল! চা দোকান থেকে শুরু করে অফিস, আদালতসহ সর্বত্রই চলছে নির্বাচনী আলাপ আলোচনা। সারাদেশের মতো এর ব্যতিক্রম নয় নানা ঘটনাপ্রবাহে দেশের আলোচিত উপজেলা চট্টগ্রামের হাটহাজারীও। চুড়ান্তভাবে দলীয় মনোনয়ন কার ভাগ্যে জুটবে তা হয়তো দু,এক দিনের মধ্যেই পরিস্কার হয়ে গেলেও নাকি আবারো সোনার হরিণ প্রত্যাহার করে সমীকরণ মেলাতে আনিস বা মেজর ইবরাহিমকে সমর্থন করতে হচ্ছে উপজেলা আওয়ামী লীগকে। গত ২০১৮ সালের ৩০ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে জোট প্রার্থী ব্যারিস্টার আনিসের কাছে নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী বিএনপির প্রার্থী বর্তমান কল্যাণ পার্টির চেয়ারম্যান মেজর জেনারেল (অবঃ) সৈয়দ মুহাম্মদ ইব্রাহিমকে হারিয়ে বিজয়ী হন।তবে এবার দলীয় সরকারের অধিনে বিএনপির নির্বাচনে অংশ নেবে না বলে ঘোষণা দেয়ায় হাটহাজারীর আসনে বিএনপির কোন প্রার্থী দাঁড়ায়নি নির্বাচনে। স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে কারা দাঁড়িয়েছে তাও কয়েকদিনের মধ্যে জানা যাবে। চট্টগ্রাম উত্তর জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আলহাজ্ব ইউনুস গণি চৌধুরী বলেন, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী আমাকে ২০১৮ সালের নির্বাচনে মনোনয়ন দিয়েছেন এবং তিনিই আমাকে জোটগত কারণে প্রত্যাহার করতে বলেছেন তা আমি করেছি। আমি দলীয় সিদ্ধান্তের উপর অটল। চট্টগ্রাম উত্তর জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি এমএ সালাম বলেন, আমি ১৯৯৬ সালে মনোনয়ন পেয়েছি। কিছু গোষ্ঠীর ধর্মীয় অপপ্রচার ও ষড়যন্ত্রের কারনে বিএনপির প্রার্থীর কাছে পরাজিত হয়েছি।ওই সময় জাতীয় পার্টির প্রার্থীর ব্যারিস্টার আনিস জামানত হারান। ২০০৮ সালে দলীয় মনোনয়ন পেয়েছি,দলীয় সিদ্ধান্ত ও নেত্রীর নির্দেশে প্রত্যাহার করি। আমি দলিয় সিদ্ধান্তের বাইরে যেতে পারি না।দল যাকে মনোনয়ন দেবেন আমরাই তার পক্ষে কাজ করব।




শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর









© All rights reserved © 2020 khoborpatrabd.com
Theme Developed BY ThemesBazar.Com