দেশ ছাড়ার আগে নাজমুল হোসেন শান্ত বলে গিয়েছিলেন, ‘বিশ্বাস রাখতে, আগে যা হয়নি কখনো তাই করে দেখাবেন এবারে। সাদা বলের ক্রিকেটে আরাধ্য জয় ছিনিয়ে আনবেন ছিনিয়ে, জয় করবেন কিউই দূর্গ।’
পেরেছেন শান্ত, রেখেছেন কথা। লিখেছেন রূপকথা। নেপিয়ারে ইতিহাস গড়া জয় পেয়েছে বাংলাদেশ। সাকিব-তামিমরা যা করে দেখাতে পারেননি গত দেড় যুগে, তাই এলো শান্তর হাত ধরে। নিউজিল্যান্ডের দূর্গ চুর্ণ করে, তাদেরই ঘরের মাঠে প্রথম জয় তুলে নিয়েছে বাংলাদেশ। ঘরের মাঠে যেন অপরাজেয় হয়ে উঠেছিল নিউজিল্যান্ড। হারেনি আগের ১৭ ম্যাচের একটাতেও। সুযোগ ছিল ঘরের মাঠে টানা ১৮ জয়ে। ইতিহাসের পাতায় নাম লেখানোর। ঘরের মাঠে সর্বোচ্চ জয়ের কীর্তি গড়ার। তবে তা আর হলো না! বলা যায়, হতে দিলো না বাংলাদেশ। হারতে হারিয়ে দেয়ালে পিঠ ঠেকে যাওয়া টাইগাররা ভেঙে দিল কিউইদের জয়যাত্রা। কিউইদের বিপক্ষে তাদের ঘরের মাঠে টানা ১৮ ওয়ানডেতে হারের পর প্রথমবার জয়ের দেখা পেল লাল-সবুজের প্রতিনিধিরা।
প্রথম ২ ম্যাচে হারের পর শেষ ম্যাচে বাংলাদেশ জিততে পারে, এমনটা হয়তো ভাবেনি সমর্থকরাও। হয়তো দলের বিদঘুটে আত্মসমর্পণ দেখার জন্যে ভোরের ঘুম নষ্ট করেননি অনেকেই। তবে যারা জেগে উঠেছিলেন, তারা যা দেখেছেন, বাংলাদেশের ইতিহাসে তা বিরলই বটে।
নেপিয়ারে বাংলাদেশ এর আগে শেষবার খেলেছিলো ১৪ বছর আগে, ২০১০ সালে। এক যুগেরও বেশি সময় পর আবার বাংলাদেশ যেভাবে ফিরলো এখানে, ইতিহাস গড়েই ফিরলো তবে। নিউজিল্যান্ডকে নেপিয়ারের মাঠে দিলো সর্বনি¤œ সংগ্রহের লজ্জা। মাত্র ৯৮ রানে বেঁধে ফেললো কিউইদের। বাংলাদেশের বিপক্ষেও যা তাদের সর্বনি¤œ সংগ্রহ। কিউইদের ব্যাটিং লাইনআপে এদিন আগুন ধরান পেসাররা। ভালো মাঠে কতটা ভয়ঙ্কর তারা প্রমাণ করেন তানজিম সাকিব, শরিফুলরা। হাতের তালুর মতো চেনা কন্ডিশনেও বাংলাদেশী পেসারদের কাছে খাবি খেলো কিউই ব্যাটাররা। বলা যায়, তাদের দাঁড়াতেই দেননি শান্ত বাহিনী।
নিউজিল্যান্ডের হয়ে এদিন মাত্র চারজন পারেন দুই অঙ্কের ঘরে পৌঁছাতে। তবে কেউ পারেননি ৩০ রানের গ-ি পেরোতে। সর্বোচ্চ ২৬ রান আসে উইল ইয়ংয়ের ব্যাটে। নেপিয়ারের সাপের মতো ফণা তোলা সুইং বেশ ভালোই কাজে লাগান পেসাররা। শুরুটা করেন তানজিম সাকিব, মাঝে ইনিংসের মেরুদ- ভাঙেন শরিফুল ইসলাম ও শেষের লেজ কাটেন সৌম্য সরকার। তিনজনেই নেন সমান ৩টা করে উইকেট।
ম্যাকলিন পার্কে দশবারের দশবারই উপলক্ষ আনেন পেসাররা। অর্থাৎ সবগুলো উইকেটই ঝুলিতে পুড়েছেন তারা। বাংলাদেশের ইতিহাসে এমন ঘটনা মাত্র দ্বিতীয়বার। ব্যাটাররাই কম যান কিসে, বোলারদের গড়ে দেয়া ভিতে দাঁড়িয়ে বিজয় নিশান উড়িয়েছেন তারাই। সৌম্য সরকার চোখের সমস্যায় মাঠ ছাড়লেও এনামুল হক ও নাজমুল হোসেন মিলে টের পেতে দেননি। সম্ভাবনা ছিল ১০ উইকেটের জয়ের। তবে এনামুল ৩৭ রানে ফিরলে শেষ হয় সেই স্বপ্ন। তবে ৫০ রান তুলে জয় নিশ্চিত করতে ভুল হয়নি শান্তের।
গত বছরের ডিসেম্বরে দুর্ভেদ্য কিউই দূর্গে প্রথম জয়ের স্বাদ পায় বাংলাদেশ। তবে সেটা ছিল টেস্ট ক্রিকেটে। এবার সাদা বলের ক্রিকেটেও জয় তুলে নিল লাল সবুজের প্রতিনিধিরা। তাও গত ১৬ বছরের ইতিহাসে ১৮টি ওয়ানডে ও ৯টি টি-টোয়েন্টিতে টানা হারের পর। আর এই জয় কিনা এসেছে দেশের ক্রিকেটের সবচেয়ে বড় তারকাদের ছাড়াই। ৯৯ রান তাড়ায় নেমে বাংলাদেশের জয় নিশ্চিত হয় ১৫ দশমিক ১ ওভারে ৩৪ দশমিক ৫ ওভার হাতে রেখেই। ওভারের হিসেবে এটি টাইগারদের তৃতীয় বড় জয়। এর আগে ২০০৯ সালে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে ৩৮ দশমিক ১ ওভার হাতে রেখে আর আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে চলতি বছরের মার্চে ৩৬ দশমিক ৫ ওভার হাতে রেখে জয় তুলে নিয়েছিল লাল সবুজের প্রতিনিধিরা।
এই জয়ে ম্যাচ সেরার পুরস্কার উঠেছে তানজিম সাকিবের হাতে। শুরুতেই কিউদের ব্যাটিং লাইনআপে ধস নামিয়ে এই পুরস্কারের প্রাপ্য তিনি। জাতীয় দলে ৬ ম্যাচের ছোট্ট ক্যারিয়ারে এই প্রথম ম্যাচ সেরার পুরস্কার জিতেছেন এই পেসার।
শেষ ম্যাচে বড় জয় পেলেও প্রথম ২ ম্যাচ হেরে আগেই সিরিজ খুইয়েছে বাংলাদেশ। তাতে সিরিজ শেষ হলো ২-১ ব্যবধানে। এবার বুধবার ৩ ম্যাচ সিরিজের প্রথম টি-টোয়েন্টিতে মুখোমুখি হবে বাংলাদেশ। টেস্ট ও ওয়ানডের পর এবার নিউজিল্যান্ডের মাটিতে টি-টোয়েন্টিতে ডেডলক ভাঙার চ্যালেঞ্জ টাইগারদের সামনে।