অভিনেত্রী এবং জনহিতৈষী অ্যাঞ্জেলিনা জোলি আবারো বিশ্বে ন্যায়বিচারের অসম অনুসরণ চলছে বলে অভিযোগ তুলেছেন। বিভিন্ন সম্প্রদায়ের জন্য ন্যায়বিচার চাওয়ার ক্ষেত্রে বৈষম্য তুলে ধরেছেন তিনি। গত রোববার ডেইলি সাবাহর এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানানো হয়েছে। প্রতিবেদনে বলা হয়, সিরিয়ার সাংবাদিক এবং চলচ্চিত্র নির্মাতা ওয়াদ আল-কাতেবের সাথে আলাপকালে অ্যাঞ্জেলিনা জোলি বলেন, ২০ বছর আগে, যখন তিনি আন্তর্জাতিকভাবে কাজ শুরু করেছিলেন, তখন নির্দিষ্ট দেশ বা ব্যক্তির ক্ষেত্রে তার ‘খুব ভালো’ ধারণা ছিল, কিন্তু পরবর্তী অভিজ্ঞতা তাকে বলেছে যে- এটিই কেবল সত্য নয়। বিশ্বব্যাপী মানবাধিকার সমানভাবে ছড়িয়ে নেই বলে জোর দিয়ে তিনি বলেন, ‘মানবাধিকার কখনো কখনো এই (কিছু) মানুষের জন্য… (কিন্তু) কখনো এই (অন্যান্য) মানুষের জন্য নয়।’ জোলি বলেন, বাস্তবতা হলো যে- পৃথিবী ‘ব্যবসায়িক স্বার্থের উপর ভিত্তি করে কাজ করে।’
অ্যাঞ্জেলিনা জোলি জাতিসঙ্ঘের সাবেক শুভেচ্ছা দূত এবং গত বছর পর্যন্ত বিশেষ দূত হিসেবে কাজ করেন। বর্তমান বিশ্ব পরিস্থিতিকে তিনি একটি ‘কুৎসিত অবস্থা’ বলে অভিহিত করেছেন। তিনি এই অবস্থাকে ‘নিরাশকারী’ এবং ‘বিচলিত’ বলে মনে করেন বলে জানান, শুধু আমি নয় যে ব্যক্তি নিজে যুদ্ধাপরাধ প্রত্যক্ষ করেছেন তিনিও একই মনে করবেন। তিনি বলেন, সরকার, রাজনীতিবিদ এবং সিদ্ধান্ত গ্রহণকারীরা সবসময় অনেক অনেক প্রতিশ্রুতি দেয় এবং নতুন নতুন ঘোষণা করে, কিন্তু এটি প্রায়শই ‘কিছুই পরিবর্তিত হয় না এবং আলাদা কিছু হয় না’।
তিনি উল্লেখ করেছেন, যদিও এই সরকার, রাজনীতিবিদ এবং সিদ্ধান্ত গ্রহণকারীরা প্রায়শই এই ধারণা নিয়ে উত্থাপিত হয়েছিল যে- ‘ঔপনিবেশিকতার অবসান হয়েছে’, কিন্তু উন্নয়নশীল দেশগুলোর নিয়ন্ত্রণ এবং অপব্যবহার এখনো অব্যাহত রয়েছে।
গাজা বোমা হামলার নিন্দা: গত মাসে, জোলি গাজায় ইসরাইলের চলমান বোমাবর্ষণের নিন্দা করেন এবং ফিলিস্তিনি নাগরিকদের সম্মিলিত শাস্তির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার আহ্বান জানান। অনলাইনে গাজার ক্ষয়ক্ষতির একটি ছবি পোস্ট করে অভিনেত্রী লিখেন, ‘এটি একটি আটকে পড়া জনসংখ্যার উপর ইচ্ছাকৃত বোমা হামলা যাদের পালানোর জায়গা নেই। গাজা প্রায় দুই দশক ধরে একটি উন্মুক্ত কারাগার এবং দ্রুত গণকবরে পরিণত হচ্ছে।’
তিনি বলেন, ‘নিহতদের মধ্যে চল্লিশ শতাংশই নিষ্পাপ শিশু। পুরো পরিবারকে হত্যা করা হচ্ছে। যখন বিশ্ব দেখছে এবং অনেক সরকারের সক্রিয় সমর্থনে, লাখ লাখ ফিলিস্তিনি বেসামরিক নাগরিক, শিশু, নারী, পরিবারকে- সম্মিলিতভাবে শাস্তি দেয়া হচ্ছে। আন্তর্জাতিক আইনের বিরুদ্ধে গিয়ে তাদেরকে খাদ্য, ওষুধ এবং মানবিক সাহায্য থেকে বি ত করা হয়েছে।’ তিনি যোগ করেন, ‘মানবিক যুদ্ধবিরতির দাবি প্রত্যাখ্যান করে বিশ্ব নেতারা গাজায় সাধারণ মানুষ হত্যার অপরাধে জড়িত হয়ে পড়ছে।’ এদিকে গাজা যুদ্ধের ধ্বংসাত্মক সংখ্যা উপেক্ষা করা যায় না। ইতোমধ্যে ২০ হাজারেরও বেশি মানুষের প্রাণ গেছে, যাদের অধিকাংশ নারী ও শিশু। আহত হয়েছেন আরো অন্তত ৫৩ হাজার। গত মাস থেকে অবরুদ্ধ ছিটমহলে ইসরাইলের অবিরত বিমান ও স্থল হামলায় হাসপাতাল, মসজিদ এবং গির্জাসহ হাজার হাজার ভবন ক্ষতিগ্রস্ত বা ধ্বংস হয়েছে। ইসরাইলি সরকারি পরিসংখ্যান অনুসারে, ইতোমধ্যে ১ হাজার ২০০ ইসরাইলি নিহত হয়েছে।
উল্লেখ্য, গাজাভিত্তিক ফিলিস্তিনি প্রতিরোধ আন্দোলন হামাস ইসরাইলের বিরুদ্ধে সামরিক অভিযান শুরু করেছে বলে ঘোষণা করেছে। এর প্রতিরোধে পাল্টা হামলা শুরু করেছে ইসরাইল। এক বিবৃতিতে হামাসের সামরিক শাখার প্রধান মোহাম্মদ দেইফ বলেন, শনিবার সকালে ইসরাইলে পাঁচ হাজার রকেট বর্ষণের মাধ্যমে ‘অপারেশন আল-আকসা স্ট্রম’ শুরু হয়েছে। ইসরাইল গাজা থেকে অনুপ্রবেশের কথা স্বীকার করেছে। সূত্র : ডেইলি সাবাহ