কক্সবাজারের চকরিয়া উপজেলার আলোচিত ঘটনা হারবাং ইউনিয়নের ৮নং ওয়ার্ড করমুহুরীপাড়া এলাকায় সম্প্রতি ২ যুবককে জুতার মালা পরিয়ে নির্যাতনের” ঘটনায় হওয়া মামলা থেকে রেহাই পেতে এবার অভিযুক্ত ব্যক্তিরাই মঞ্চস্থ করেছেন মানববন্ধন নাটকের! গত ১৬ই জানুয়ারী (মঙ্গলবার) বিকাল ৪ টার দিকে উপজেলার হারবাং ইউনিয়নের ৮নং ওয়ার্ড করমুহুরীপাড়া এলাকায় এ মানববন্ধন নাটকের মঞ্চস্থ করেন তারা। এ মানববন্ধন নাটকে অংশ নেয় ২যুবককে জুতার মালা পরিয়ে নির্যাতনের সাথে জড়িত মামলার অন্যতম অভিযুক্ত নেজাম উদ্দিন, জয়নাল আবেদীন, আলমগীরসহ অন্তত ১৫/২০ জন। এসময় চুরির অপবাদ দিয়ে ২ যুবককে জুতার মালা পরিয়ে নির্যাতনকারীদের শিখিয়ে দেওয়া কথার উপর ভিত্তি করে ভুক্তভোগীদের করা মামলায় অভিযুক্ত ব্যক্তিদের নিরপরাধ দাবি করে মামলা প্রত্যাহারের আহবান জানান তারা। কিন্তু, এ মানববন্ধন নাটকে যাদের নিরপরাধ দাবি করা হয়েছে বাস্তবতা বিশ্লেষণ করতে গেলে উঠে আসে ভিন্ন তথ্য। স্থানীয় প্রত্যক্ষদর্শীদের বরাত দিয়ে জানা যায়, ঘটনার দিন অর্থাৎ ১১ই জানুয়ারি ২ যুবক জাহেদুল ইসলাম ও মোঃ শাহাজাহান কে সকাল ৯টার দিকে একই এলাকার জামাল উদ্দিন নামের এক ব্যক্তির কনস্ট্রাকশন কাজের মালামাল চুরি করেছে বলে তাদের নিজ বসতবাড়ি থেকে জোরপূর্বক ডেকে নিয়ে হারবাং ইউনিয়নের ৮নং ওয়ার্ড ছগিরার দোকানস্থ এলাকায় এনে তাদের চুরির অপবাদ দিয়ে বৈদ্যুতিক খুঁটিতে বেঁধে বেদড়ক মারধর করে। যদিও বা আইনি জটিলতায় পড়ার ভয়ে মারধরের বিষয়টি কাউকে ছবি/ভিডিও করতে না দিলেও পরবর্তীতে জুতার মালা পরিয়ে ছগিরার দোকান থেকে করমুহুরীপাড়া স্টেশনে নিয়ে আসার সময় স্বয়ং অভিযুক্ত ব্যক্তিরাই তাদের ব্যবহৃত স্মার্টফোনে ছবি/ভিডিও ধারণ করে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে ছড়িয়ে দেয়। ওইসব ছবি/ভিডিও তে সরব উপস্থিতি দেখা যায় ভুক্তভোগী পরিবার কর্তৃক করা মামলার অভিযুক্ত ব্যক্তি যথাক্রমে বেলাল আহমেদ, নেজাম উদ্দিন, জয়নাল আবেদীন, আলমগীর, আব্দুল মালেক, ইদ্রিস আহমেদ সহ আরো অনেককে। এমনকি অভিযুক্ত ব্যক্তিদের দ্বারা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে ছড়িয়ে দেওয়া ভিডিওতে দেখা মেলে মামলার প্রধান অভিযুক্ত বেলাল উদ্দিনকে ক্যামেরার সামনে এসে কথা বলতে। এদিকে, এ বিষয়টি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হওয়ার পর পরই নিন্দার ঝড় উঠে নেটিজেনদের মাঝে। এসময় স্থানীয় প্রত্যক্ষদর্শীরা আরো বলেন, অভিযুক্ত ব্যক্তিরা মামলা থেকে রেহাই পেতে কৌশলে এ মানববন্ধন নাটকটি সাজিয়েছেন। এদিকে, এ মানববন্ধন নাটকটিতে হারবাংয়ের চেয়ারম্যান মেহেরাজ উদ্দিন ও জাতীয় শ্রমিকলীগ চকরিয়া উপজেলা শাখার সহসভাপতি ও বীর মুক্তিযোদ্ধার সন্তান মোঃ মিরান কে জড়িয়েও কুরুচিপূর্ণ বক্তব্য দেন তারা। এবিষয়ে জাতীয় শ্রমিকলীগ চকরিয়া উপজেলা শাখার সহসভাপতি ও বীর মুক্তিযোদ্ধার সন্তান মোঃ মিরান বলেন, আমাকে জড়িয়ে যে কুরুচিপূর্ণ বক্তব্য তারা দিয়েছে এবং যে অভিযোগ তারা তুলেছে তার কোনটিই আমার বোধগম্য নয়। ঘটনার দিন আমি এর কিছুই জানতাম না। পরবর্তীতে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকের বদৌলতে বিষয়টি জানতে পারি। আমি একজন ব্যবসায়ী ব্যক্তি। এখানে কোন কারণে আমাকে জড়িয়ে তারা আমার মানহানি করার চেষ্টা করছে তা আমার সঠিক জানা নেই। আমি এবিষয়ে দ্রুত আইনি পদক্ষেপ গ্রহণ করবো। অপরদিকে হারবাং ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মেহেরাজ উদ্দিন বলেন, গত ১১ই জানুয়ারি আমার ইউনিয়নের একটি চুরির ঘটনাকে কেন্দ্র করে আলোচনা-সমালোচনার সৃষ্টি হয়। সেদিন তাৎক্ষণিক এ বিষয়টি সম্পর্কে আমি কিছু না জানলেও পুলিশের কাছে সোপর্দ করার সময় জানতে পারি। পরবর্তীতে আদালত তাদের জেলহাজতে প্রেরণ করে। কিন্তু ঘটনাটি বৃহস্পতিবার হলেও তারই একদিন পর ১২ জানুয়ারী (শুক্রবার) সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বেশকিছু ছবি এবং ভিডিও ভাইরাল হয়। তখন এ বিষয়টি আমিও দেখতে পাই। পরবর্তীতে সাংবাদিকরা এঘটনার বিষয়ে সংবাদ করার জন্য আমার বক্তব্য চাইলে আমি সাংবাদিকদের কাছে দুঃখ প্রকাশ করে বলি, কতিপয় উশৃংখল কিছু লোকজন চুরির অভিযোগে তাদেরকে আটক করে এইধরনের অমানবিক শাস্তি দিয়েছে। সাংবাদিকদের এ কথাটি বলার কারণেই এসব কতিপয় ব্যক্তিরা আমার বিরুদ্ধে অপপ্রচার চালাচ্ছে এবং সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে কুরুচিপূর্ণ বক্তব্য দিয়ে যাচ্ছে। আমি এব্যাপারে যথাযথ আইনি ব্যবস্থা নিবো এবং সেই সাথে চকরিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মহোদয়ের হস্তক্ষেপ কামনা করছি।