মালদ্বীপের পর এবার বাংলাদেশেও ‘ইন্ডিয়া আউট’ প্রচারণা জোরদার হয়ে উঠেছে। ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস জয়শঙ্করকে জিজ্ঞাসা করা হয়েছিল যে, ভারতের পররাষ্ট্র নীতি ব্যর্থ হচ্ছে। যার জেরে মালদ্বীপ এবং বাংলাদেশের মতো প্রতিবেশীরা চীনের দিকে ঝুঁকছে, এটি ভারত মহাসাগর অঞ্চলে চীনের প্রভাব বাড়াতে সহায়ক ভূমিকা নিতে পারে । এরকম কোনো সম্ভাবনার কথা প্রত্যাখ্যান করেছেন ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী। এই অঞ্চলে প্রতিযোগিতা রয়েছে বলে জানিয়ে জয়শঙ্কর বলেন, “দুটি বাস্তবতা আমাদের অবশ্যই স্বীকার করতে হবে। চীনও একটি প্রতিবেশী দেশ এবং বিভিন্নভাবে প্রতিযোগিতামূলক রাজনীতির অংশ হিসেবে বাংলাদেশ, মালদ্বীপ, শ্রীলঙ্কা’র মতো দেশগুলিকে প্রভাবিত করবে।”
ইন্ডিয়ান ইনস্টিটিউট অফ ম্যানেজমেন্ট (আইআইএম) মুম্বই-এর ছাত্রদের সাথে আলাপকালে এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘আমি মনে করি না আমাদের চীনকে ভয় পাওয়া উচিত। বরং আমাদের মনে করা উচিত বিশ্ব রাজনীতি একটি প্রতিযোগিতামূলক খেলা। আপনি আপনার সেরাটা করুন এবং আমি আমার সেরাটা করব। চীন একটি প্রধান অর্থনীতি, সে তার মতো চেষ্টা করছে। চীন যা করছে তা নিয়ে অভিযোগ না করে বরং আমাকে এর চেয়ে ভাল করতে দিন।’ জয়শঙ্কর উপস্থিত ছাত্রদের শ্রীলঙ্কায় যাবার পরামর্শ দিয়ে বলেন, আমি আপনাদের সবাইকে এটা বলছি।
শ্রীলঙ্কার সাধারণ মানুষের সাথে মিশুন এবং তাদের জিজ্ঞাসা করুন ভারত সম্পর্কে আপনার কী ধারণা। তাদের উত্তরে আপনি নিজেকে বড় অনুভব করবেন।
পররাষ্ট্রমন্ত্রীর কথায়, অর্থনৈতিক সংকটের সময় বিশ্ব শ্রীলঙ্কার দিক থেকে মুখ ফিরিয়েছিল। পেট্রোলের ঘাটতি ছিল, লোকেরা জ্বালানি পেতে তাদের গাড়িগুলিকে নিয়ে পেট্রোল পাম্পে দীর্ঘক্ষণ দাঁড়িয়েছিল, দেশে খাবার, প্রয়োজনীয় পণ্য শেষ হয়ে যাচ্ছিলো। এমন এক সময়ে যখন বিশ্ব মুখ ফিরিয়ে নিয়েছিল, একমাত্র ভারতই এগিয়ে এসেছিল। জয়শঙ্কর জানান, ভারত শ্রীলঙ্কাকে ৪.৫ বিলিয়ন ডলার প্রদান করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। আমাদের প্যাকেজটি আইএমএফ যা দিয়েছে তার থেকে ৫০ শতাংশ বেশি। কাছে আসেনি কোনো দেশ। তাই যখন প্রতিবেশীরা আমাদের বিরুদ্ধে যাচ্ছে এই ধারণা মনে আসবে, তখন আমাদের নিজেদের উপর আরও আস্থা রাখতে হবে।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী নেপালের সাথে দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের বিষয়েও কথা বলেন, আরেকটি প্রতিবেশী দেশ যেটি চীনের সাথে সীমান্ত ভাগ করে নিয়েছে। মন্ত্রীর কথায়- শ্রীলঙ্কার ছুটি শেষ করার পর, নেপালে যান। নেপাল আবিষ্কার করেছে যে ভারতে বিদ্যুত রপ্তানি কাঠমান্ডুর জন্য একটি অত্যন্ত ফলপ্রসূ লেনদেন।
কথায় কথায় ওঠে বাংলাদেশের প্রশ্ন। জয়শঙ্কর বলেন, আপনি যদি আজ বাংলাদেশে যান, তাহলে দেখবেন দুই দেশের মধ্যে ট্রেন চলছে। বাস চলছে। এই প্রথম ভারতীয়দের বাংলাদেশের বন্দরগুলো ব্যবহারের অনুমতি দেয়ায় এটি দেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চলে (অর্থনীতিতে) বিশাল প্রভাব ফেলবে।
তার মতে, এর ফলে ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলের অর্থনীতি বদলে যাবে। জয়শঙ্কর বলেন, উত্তর-পূর্বাঞ্চলের মানুষকে অতীতে শিলিগুড়ি দিয়ে এসে তারপর ভারতের পূর্বাঞ্চলের বন্দরগুলোতে যেতে হতো। তারা এখন চট্টগ্রাম ও মোংলা বন্দর ব্যবহার করতে পারবে। তিনি যোগ করেন ‘আগরতলা-আখাউড়া রেললাইনের ফলে বাংলাদেশ এবং ভারতের উত্তর-পূর্ব রাজ্যগুলোর মধ্যে ভ্রমণের সময় ও দূরত্ব কমে যাবে। বৃহত্তর বাজারে প্রবেশাধিকার, পণ্য পরিবহন ও (দুই দেশের) মানুষে মানুষে যোগাযোগ বৃদ্ধি পাবে।’ ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রীর কথায়- প্রতিযোগিতায় ভয় পাওয়া উচিত নয়, প্রতিযোগিতাকে স্বাগত জানানো উচিত এবং আমাদের প্রতিযোগিতা করার ক্ষমতা আছে।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার অধীনে ভারতের সাথে বাংলাদেশের সুসম্পর্ক থাকলেও, মালদ্বীপে চীনপন্থী প্রেসিডেন্ট মোহাম্মদ মুইজ্জু নির্বাচিত হওয়ার পর মালের সাথে তার সম্পর্ক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। মুইজ্জু ভারতবিরোধী তক্ত নিয়ে ক্ষমতায় আসেন। তিনি ‘ইন্ডিয়া আউট’ প্রচারাভিযান চালান । প্রেসিডেন্ট হিসাবে দায়িত্ব নেয়ার পরপরই, মুইজ্জু ভারতকে তার সামরিক কর্মীদের প্রত্যাহার করতে বলেন এবং ভারত মহাসাগরে তার একচেটিয়া অর্থনৈতিক অঞ্চলে টহল দেয়ার জন্য তুর্কি ড্রোন কেনার জন্য একটি চুক্তি স্বাক্ষর করেন। মালদ্বীপ চীনকে তার নৌ জাহাজ মালেতে ডক করার অনুমতি দিয়েছে। এখন, বাংলাদেশের রাজনীতিতে ভারতের হস্তক্ষেপের অভিযোগে অনুরূপ একটি ‘ইন্ডিয়া আউট’ প্রচারাভিযান মাথাচাড়া দিয়েছে, এশিয়া নিক্কেই ২৬ জানুয়ারি এ সংক্রান্ত একটি রিপোর্ট করে। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, প্রচারণাটির পেছনে রয়েছেন প্রবাসী বাংলাদেশিরা এবং দেশের মধ্যে কিছু বিরোধী এতে গলা মিলিয়েছেন। পিনাকি ভট্টাচার্য, দেশের একজন নির্বাসিত ব্লগার, একটি পোস্টার শেয়ার করেছেন, যেখানে লেখা আছে: “বয়কট ইন্ডিয়ান প্রোডাক্টস”। সূত্র : বিজনেস টুডে