সিরাজগঞ্জের তাড়াশে হাটিকুমরুল-বনপাড়া মহাসড়কের পাশে সরিষা ফুলের খাঁটি মধু বেচাকেনা হচ্ছে। মৌ খামারীদের মধু বেচার এমন পদ্ধতি বেশ নজর কেড়েছে লোকজনের। অনেকে যানবাহন থামিয়ে মধু কিনে নিচ্ছেন এ সড়ক দিয়ে আসা-যাওয়ার সময়। মৌ খামারী আব্দুল মজিদ, নুর হোসেন, খোকন, ইসরাফিল, মিঠু, জাহাঙ্গীর ও আব্দুর রহমান বলেন, মূলত সরিষা ক্ষেতের মধু সংগ্রহের শুরুর দিকে খামারের ব্যয়েভার মেটাতে মহাসড়কের পাশে মধু বেচা হয়। কারণ অল্প মধু কোম্পানীতে দেওয়া যায়না। কিন্তু খামারে শ্রমিকদের টাকা দিতে হয়, খাওয়ার দিতে হয় প্রতিদিন। সরেজমিনে দেখা গেছে, হাটিকুমরুল-বনপাড়া মহাসড়কের দুই পাশে তাড়াশের হামকুড়িয়া গ্রাম এলাকার বিস্তীর্ণ মাঠের সরিষা ক্ষেতের ধার ঘেঁষে ভ্রাম্যমান মৌ খামার স্থাপন করেছেন মৌ খামারীরা। পার্শ্ব রাস্তা পেড়িয়ে মহাসড়কের পাশে টেবিলের উপর বোতলে মধু রেখে বেচাকেনা করছেন। এদিকে ক্রেতারা জানিয়েছেন খাঁটি মধু’র নিশ্চয়তায় মহাসড়কের পাশ থেকে মধু কিনে নিচ্ছেন। তাড়াশের নাদো সৈয়দপুর গ্রামের রিয়াজ উদ্দীন বলেন, আমি মহাসড়কের পার্শ্ব রাস্তা দিয়ে ১০ নাম্বার সেতু থেকে মহিষলুটি বাজার পর্যন্ত অটোভ্যান চালাই। আমার ভ্যানে করে যাওয়া-আসার সময় যাত্রীদের মধ্যে কেউ কেউ রাস্তার পাশ থেকে মধু কিনে নেয়। আমি নিজেও ১ বোতল কিনেছি। খাইরুল ইসলাম বলেন, আমি প্রতিদিন রাজশাহী থেকে তাড়াশের মহিষলুটি মৎস্য আড়তে মাছ কিনতে আসি। বিশেষ করে, মহাসড়কের আশপাশ দিয়ে মাঠকে মাঠ সরিষার আবাদ করা হয়েছে। সরিষা ফুল থেকে প্রচুর পরিমাণে মধু সংগ্রহ করেন মৌ খামারীরা। চাকের মধুতে ভেজাল পাওয়া যায়। কিন্তু সরিষা ফুলের মধু পরোপুরি খাঁটি। আমিও দুই বোতল (দুই কেজি) মধু কিনে নিয়েছি মহাসড়ক দিয়ে যাতায়াতের সময়। জানা গেছে, এ বছর অধিকাংশ মৌ খামারে ৫০ মণ করে মধু সংগ্রহ করতে পেরেছেন ইতোমধ্যে। গতবার মধুর দাম ছিলো ৩৮শ টাকা মণ। এবারে ৮ হাজার টাকা মণ মধু বেচা হচ্ছে কোম্পানীর কাছে। মৌ খামারীরা আরো বলেন, আগে উল্লাপাড়া উপজেলায় মধু সংগ্রহ করতেন রবিশস্য মৌসুমে। এখন স্থানীরাই মৌ খামার গড়ে তুলে মধু সংগ্রহ করছেন। তাড়াশ উপজেলা থেকে খামারীরা চলে যাবেন শরীয়তপুর, মাদারীপুর, গোপালগঞ্জ ও ফরিদপুর অঞ্চলে ধনিয়া-কালোজিরার মধু সংগ্রহ করতে। এরপর আঁটির লিচু ফুলের মধু সংগ্রহ করবেন গাজিপুর, নাটোর ও মাগুড়াতে। তারপর পাবনায় যাবেন বোম্বাই লিচু ফুলের বাগানে। সেখান থেকে দিনাজপুর যাবেন চায়না লিচু ফুলের মধু সংগ্রহ করতে। সর্বপরি ৭ মাস মৌ খামারীরা মধু সংগ্রহ করতে পারেনা। তখন ডুবো অঞ্চলে শাপলা ও ধইঞ্চার ফুলের আশপাশে উঁচু স্থানে মৌ খামার রেখে দেন। চিনি খাওয়ায় মৌমাছি বাঁচিয়ে রাখেন। এ প্রসঙ্গে তাড়াশ উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. আব্দুল্লাহ আল মামুন বলেন, এ বছর সরিষার আবাদ বেশি হয়েছে চার হাজার হেক্টর জমিতে। আবহাওয়া ভালো ছিলো। এজন্য মধু সংগ্রহ বেশি হয়েছে।