চট্টগ্রাম মহানগরীর সংরক্ষিত মহিলা
চট্টগ্রাম মহানগরীর সংরক্ষিত মহিলা আসনের সংসদ সদস্য হিসেবে মনোনয়ন পাওয়ার রানিং ট্র্যাকে এবার আলোচনায় কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের অর্থ ও পরিকল্পনা উপ-কমিটির বিশেষজ্ঞ সদস্য অধ্যাপিকা জান্নাতুন নুর তানিয়া। তাকে নিয়ে আলোচনা চলছে দলটির মাঠ পর্যায়ের তৃণমূল এবং তরুণ নেতা-কর্মীদের মাঝেও। বাবা বীর মুক্তিযোদ্ধা, একাধারে শিল্পপতি ও মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সংগঠক নূর মোহাম্মদ। অন্যদিকে স্বামী শহিদুল ইসলাম পিন্টুও আওয়ামী লীগের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত। ২০০৩ থেকে ২০১৩ সাল পর্যন্ত আওয়ামী যুবলীগের কেন্দ্রীয় কমিটির (নানক-মির্জা আজম) কেন্দ্রীয় নির্বাহী সদস্য ছিলেন তিনি। ২০০৫ সাল থেকে স্বামী সহিদুল ইসলাম পিন্টু সাবেক ছাত্র নেতার সাথে আওয়ামীলীগ এর যে কোন সাংগঠিনিক কার্যক্রমে অগ্রণী ভূমিকা পালন করে। তবে সব পরিচয়কে ছাপিয়ে অধ্যাপিকা জান্নাতুন নুর তানিয়া এবার হাল ধরার দায়িত্ব পেতে চান নিজের বিগত দিনের সাংগঠনিক কর্মকাণ্ডের মূল্যায়নে। দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনসহ একাধিক সংসদ নির্বাচনে দলের পক্ষে অগ্রণী ভূমিকা পালন করেছেন তিনি। এর আগে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সংরক্ষিত নারী আসন চট্টগ্রাম মহানগর থেকেও মনোনয়ন প্রত্যাশী ছিলেন তিনি। দলীয় সূত্র জানায়, নতুনদের সুযোগ করে দেওয়ার নীতিতে গত জাতীয় সংসদের প্রতিটিতেই আওয়ামী লীগের পাওয়া ‘সংরক্ষিত মহিলা আসনগুলোতে’ বেশিরভাগই নতুন মুখ দেখা গেছে। এবারও ব্যতিক্রম হচ্ছে না। নবম, দশম ও একাদশের ধারাবাহিকতায় দ্বাদশ জাতীয় সংসদেও সরকার দলের পাওয়া সংরক্ষিত আসনে বেশিরভাগ নতুন মুখ আসছে। এক্ষেত্রে সংগঠনের ত্যাগী, বঞ্চিত, মুক্তিযোদ্ধা ও শহীদ পরিবার, পেশাজীবী ও সাংস্কৃতিক অঙ্গনের প্রভাবশালী নারী নেত্রীদের প্রাধান্য দেওয়া হচ্ছে। চট্টগ্রাম থেকে এবার ৭৪ জনের বেশি মনোনয়ন ফরম সংগ্রহ করেছেন। এই প্রসঙ্গে জান্নাতুন নুর তানিয়া বলেন, ‘অনেক বছর ধরে বঙ্গবন্ধুর আদর্শের রাজনীতি করে আসছি। দল থেকে যখন যেখানে দায়িত্ব দিয়েছে সুনামের সাথে পালন করেছি। দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনসহ একাধিক সংসদ নির্বাচনে দলের মনোনীত প্রার্থীকে বিজয়ী করতে নিজের সর্বোচ্চটুকু দিয়ে কাজ করেছি। অতীতের আমার ভালো কাজের মূল্যায়ন করে গত বছর আমাকে কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের অর্থ ও পরিকল্পনা উপ-কমিটির সদস্য করা হয়। সেই দায়িত্বও সঠিকভাবে পালন করে যাচ্ছি। মনোনয়ন পাওয়ার বিষয়ে আশাবাদ ব্যক্ত করে তিনি বলেন, পাহাড়, নদী, সবুজে ঘেরা চট্টগ্রাম নগরকে ঘিরে আমার অনেক পরিকল্পনা আছে। এই নগরবাসীর একজন সেবক হিসেবে আমি কাজ করতে চাই। তাই দলের উর্ধ্বতন নেতৃবৃন্দের গ্রিণ সিগন্যালের প্রেক্ষিতে আমি সংরক্ষিত মহিলা সংসদ সদস্য হিসেবে মনোনয়ন ফরম নিয়েছি। আশা করছি দল আমার দীর্ঘ রাজনৈতিক জীবন ও দলের জন্য আমার ত্যাগ মূল্যায়ন করবে এবার।’ এই প্রসঙ্গে আরও বলেন, ‘আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক দায়িত্ব পালন ছাড়াও শিক্ষা ও ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান, সামাজিক সংগঠনসহ আর্তমানবতার সেবায় নিয়োজিত সংগঠনের সাথে যুক্ত থেকে সমাজ ও মানব কল্যাণে অনেক বছর ধরে কাজ করে যাচ্ছি। বঙ্গবন্ধু কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সোনার বাংলা ও ঘোষিত ভিশন-২০৪১ এ উন্নত বাংলাদেশ তথা স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মাণের দৃঢ় প্রত্যয়ে নিষ্ঠার সাথে কাজ করে যাচ্ছি।’ উল্লেখ্য, অধ্যাপিকা জান্নাতুন নুর তানিয়া চট্টগ্রাম প্রিমিয়ার ইউনিভার্সিটিতে অধ্যায়নকালীন সময়ে ২০০৩-২০০৭ সাল পর্যন্ত প্রয়াত চসিক মেয়র চট্টল বীর, এবিএম মহিউদ্দিন চৌধুরীর প্রয়াত কন্যা টুম্পার সাথে ছাত্রলীগের সকল কর্মসূচী পালন করেন এবং ছাত্রলীগকে সংগঠিত করতে বড় ভূমিকা রাখেন। তিনি আগ্রাবাদ মা ও শিশু হাসপাতাল, চট্টগ্রাম মহিলা ওমেন্স চেম্বারের সদস্যসহ বেশকিছু সংগঠনে গুরুত্বপূর্ণ পদে দায়িত্বে আছেন। আন্তর্জাতিক ইসলামিক বিশ্ববিদ্যালয় চট্টগ্রামে অধ্যাপক হিসেবেও কর্মরত ছিলেন। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, সরকার গঠনের পরপরই সংরক্ষিত আসনে দলের মনোনয়ন প্রত্যাশীরা (আওয়ামী লীগ এবং এর অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের পদধারী এবং বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার নারীরা) দৌড়ঝাঁপ শুরু করেছেন। ক্ষমতাসীন দলের সংসদীয় মনোনয়ন বোর্ডের সদস্যদের কাছে নিজের এবং পরিবারের সদস্যদের নানা ত্যাগ ও অর্জনের কথা তুলে ধরে বায়োডাটা জমা দিচ্ছেন। প্রধানমন্ত্রীর দৃষ্টি আকর্ষণে কেউ কেউ বায়োডাটা গণভবনেও জমা দিচ্ছেন। কেউ কেউ প্রধানমন্ত্রীর সাক্ষাৎ চেয়েও আবেদন করেছেন। নির্বাচন কমিশনের ঘোষিত তফসিল অনুযায়ী সংরক্ষিত নারী আসনের ভোট গ্রহণ আগামী ১৪ মার্চ। এই প্রসঙ্গে আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম সাংবাদিকদের বলেন, ‘সংরক্ষিত নারী আসনে দলের মনোনয়ন দেওয়ার ক্ষেত্রে মহিলা আওয়ামী লীগ ও যুব মহিলা লীগসহ দলের ও সহযোগী সংগঠনের ত্যাগী নেত্রীরা প্রাধান্য পান। প্রার্থীর যোগ্যতা ও গ্রহণযোগ্যতা বিবেচনায় নেওয়া হয়। এ ছাড়া অগ্নিসন্ত্রাস ও বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের আমলে ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারের সদস্যা এবং শহিদ পরিবারের সদস্যরাও থাকেন। এবারও এ বিষয়গুলো বিবেচনায় নিয়ে দল মনোনয়ন দেবে।’