সোমবার, ০৭ অক্টোবর ২০২৪, ০৮:২৭ অপরাহ্ন

আজ বিশ্ব সামাজিক ন্যায়বিচার দিবস

খবরপত্র ডেস্ক:
  • আপডেট সময় সোমবার, ১৯ ফেব্রুয়ারী, ২০২৪

আজ ২০ ফেব্রুয়ারি ‘বিশ্ব সামাজিক ন্যায়বিচার দিবস’। দিবসটির এবারের প্রতিপাদ্য বিষয় হচ্ছে- ‘সামাজিক ন্যায়বিচার অর্জনের জন্য বৈষম্যমূলক গ্যাপ বন্ধ করা’। ২০০৭ সালের ২৬ নভেম্বর জাতিসংঘের সাধারণ অধিবেশনে ঘোষণা করা হয় যে, ২০ ফেব্রুয়ারি বিশ্ব সামাজিক ন্যায়বিচার দিবস হিসেবে পালিত হবে। এরপর ২০০৯ সালে দিবসটি প্রথমবার পালিত হয়। এ দিবস পালনের ধারণা আসে ১৯৯৫ সালে ডেনমার্কের কোপেনহেগেনে সামাজিক উন্নয়নের ওপর অনুষ্ঠিত শীর্ষ সম্মেলনে গৃহীত কোপেনহেগেন ঘোষণাপত্র এবং কর্মপরিকল্পনাটি যখন ২০০৫ সালের ফেব্রুয়ারিতে জাতিসংঘের সদস্য রাষ্ট্রগুলো সামাজিক উন্নয়ন কমিশনের বৈঠকে পর্যালোচনা করে। জাতিসংঘ মনে করে যে, অন্তঃরাষ্ট্র ও আন্তঃরাষ্ট্র শান্তি এবং সমৃদ্ধিময় অগ্রগতির জন্য সামাজিক ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা করাকে অন্তর্নিহিত মূলনীতি হিসেবে বিবেচনা করা একান্ত প্রয়োজন।
আর এ জন্য ক্ষমতার বিচারে লিঙ্গ, বয়স, বর্ণ, জাতিকতা, ধর্ম বা সংস্কৃতিগত কারণে জনসমষ্টির প্রান্তিক অংশটির স্বার্থ সংরক্ষণ করতে বিষয়টি বিশ্বায়নের এই যুগে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। সামাজিক ন্যায়বিচারের জন্য বিশ্বায়নের ইতিবাচক দিকগুলোর সঙ্গে সঙ্গে বিপজ্জনক দিকগুলোর ওপরে দৃষ্টি ফেলার বিষয়টিকেও আবশ্যক মনে করে জাতিসংঘ।
প্রাবন্ধিক আজহার মাহমুদ ‘ন্যায়ভিত্তিক সমাজের প্রত্যাশা’ শিরোনামে লিখেছেন,‘ ২০ ফেব্রুয়ারি বিশ্ব সামাজিক ন্যায়বিচার দিবস। ২০০৭ সাল থেকে জাতিসংঘের উদ্যোগে দিবসটি পালিত হচ্ছে বিশ্বব্যাপী। সামাজিক ন্যায়বিচারের জন্য বিশ্বায়নের ইতিবাচক দিকগুলোর সঙ্গে সঙ্গে বিপজ্জনক দিকগুলোর ওপর দৃষ্টি দেওয়ার বিষয়টিকে আবশ্যক মনে করে জাতিসংঘ। ন্যায়, যার ব্যাখ্যা করতে গেলে পাওয়া যাবে সুবিচার, মানবতা, মনুষ্যত্ব, দুর্নীতিমুক্ত সমাজ-এসব প্রতিষ্ঠা করা গেলে প্রতিষ্ঠা করা যাবে ন্যায়ভিত্তিক সমাজ। আয়বৈষম্য কমানো, সামাজিক সাম্য প্রতিষ্ঠা ইত্যাদি একটি ন্যায়ভিত্তিক সমাজ প্রতিষ্ঠার অন্যতম শর্ত। কিন্তু এসবের কোনোটাই এখন আমাদের চারপাশে দেখা যায় না।
আমরা বর্তমানে এমন একটি সময়ে বসবাস করছি, যে সময়কে জ্ঞান-বিজ্ঞানের শ্রেষ্ঠ যুগ বলা যায়। জীবনযাপনের প্রতিটি ক্ষেত্রে বিজ্ঞানের আশীর্বাদে আমরা নানাবিধ সুবিধা ভোগ করছি। কিন্তু সমাজের এত উন্নতিতে আমাদের জীবন মানে অনেক পরিবর্তন আসার কথা ছিল। আধুনিক শিক্ষায় শিক্ষিত মানুষের দ্বারা একটি ন্যায়ভিত্তিক উন্নত সমাজব্যবস্থাও প্রতিষ্ঠার কথা ছিল। কিন্তু আমরা তা পারিনি। কেন পারছি না? এত জ্ঞান-বিজ্ঞানের ধারক-বাহক আধুনিক মানুষ একটি ন্যায়ভিত্তিক সমাজ প্রতিষ্ঠায় কেন বারবার ব্যর্থ হচ্ছে, তা কেউ কি কখনো ভেবে দেখেছেন? আসলে সমস্যাটা কোথায়?
সমস্যা হচ্ছে আমাদের চিন্তায়, চেতনায়, মননে, বিবেকে, বুদ্ধিতে! আমরা ন্যায়ভিত্তিক সমাজে বাস করার আশা বুকে পোষণ করি; কিন্তু পৃথিবীর ইতিহাসে ন্যায়ভিত্তিক সমাজব্যবস্থা কখন, কোথায়, কীভাবে প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল এবং কোন গুণাবলির কারণে সেই সভ্যতা বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে পড়েছিল, তা জানার চেষ্টাও কখনো করি না। একটি ন্যায়ভিত্তিক সমাজ প্রতিষ্ঠার জন্য অবশ্যই সামাজিকভাবে ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা করা জরুরি। যেখানে ন্যায়বিচার থাকবে না, সেখানে ন্যায়ভিত্তিক সমাজ কল্পনা করা হাস্যকর। বর্তমান সময়ে ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা করা মুখের কথা নয়। এই সমাজে এখন অন্যায়, অনিয়ম, দুর্নীতি বাসা বেঁধেছে। এখানে ন্যায়বিচার আশা করা অনেকটা আকাশকুসুমের মতো।
তারপরও ন্যায়ভিত্তিক সমাজের বিকাশ, উদার গণতন্ত্র আমাদের সবার প্রত্যাশা। কিন্তু এটি হঠাৎ করেই আসবে না। আমাদের সবাইকেই এই স্বাভাবিক বিকাশের দীর্ঘ পথ পাড়ি দিতে হবে এবং স্ব স্ব অবস্থানে থেকে প্রচেষ্টা চালিয়ে যেতে হবে যাতে প্রক্রিয়াটি ত্বরান্বিত হয়। এজন্য তাড়াহুড়ো করলে চলবে না। তবে শুধু সুশাসন প্রতিষ্ঠিত হলেই হবে না, এর সঙ্গে নৈতিকতা, মানবতা ও মনুষ্যত্বও থাকতে হবে। সমাজের সব নাগরিককে থাকতে হবে ঐক্যবদ্ধ। তবে ভিন্নমত থাকতে পারে। এজন্য কারও ওপর আঘাত হানা যাবে না। বর্তমান সময়ে আমরা ভিন্নমতের মানুষকে সহ্য করতে পারি না। তাদের ওপর অন্যায়-অবিচার করা হয়। এ ধরনের মানসিকতা থেকে বেরিয়ে আসতে পারলেই ন্যায় প্রতিষ্ঠা হবে।
আমাদের একটা বিষয় মাথায় রাখতে হবে, ন্যায়বিচার আর ন্যায়ভিত্তিক সমাজ প্রতিষ্ঠার জন্য ন্যায় থাকাটা জরুরি। আর ন্যায় থাকতে হলে অবশ্যই অন্যায়ের বিরুদ্ধে লড়তে হবে। অন্যায়মুক্ত, দুর্নীতিমুক্ত, মাদকমুক্ত সমাজ প্রতিষ্ঠা করা গেলে ন্যায়ভিত্তিক সমাজ প্রতিষ্ঠা যেমন সহজ হয়ে আসবে, তেমনি ন্যায়বিচারও সব ক্ষেত্রে প্রতিষ্ঠিত হবে। এসব যদিও সহজ বিষয় নয়, তবুও মানুষ পারে না এমন কিছু নেই। এ দেশকে যারা ভালোবাসে, তারাই পারবে এ সমাজকে ন্যায়ভিত্তিক সমাজে রূপান্তর করতে।’




শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর









© All rights reserved © 2020 khoborpatrabd.com
Theme Developed BY ThemesBazar.Com