শনিবার, ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ১১:২৬ পূর্বাহ্ন

সুপ্রিম কোর্ট বার নির্বাচনের ভোট আগামী ৬ ও ৭ মার্চ

খবরপত্র ডেস্ক:
  • আপডেট সময় রবিবার, ৩ মার্চ, ২০২৪

আগামী ৬ ও ৭ মার্চ দুদিনব্যাপী সুপ্রিম কোর্ট বার নির্বাচনের ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে। দেশের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ আইনজীবী সমিতির এই নির্বাচনের রেশ ছড়িয়ে যায় জাতীয় রাজনীতিতেও। তাই দেশের বড় রাজনৈতিক দলগুলো এই নির্বাচনকে অত্যন্ত ‘মর্যাদা’র বলেও মনে করেন। এবারের নির্বাচনে জয়ের ব্যাপারে প্রার্থীরা তাদের আশাবাদ প্রকাশ করেছেন। ২০২৪-২৫ মেয়াদে সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির নির্বাচনের জন্য গত ১১ ফেব্রুয়ারি তফসিল ঘোষণা করেন সমিতির সম্পাদক আব্দুন নূর দুলাল। সভাপতি, সম্পাদকসহ মোট ১৪টি পদে এই নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়ে থাকে। নির্বাচন পরিচালনা কমিটির আহ্বায়ক হিসেবে দায়িত্ব পালন করবেন সিনিয়র আইনজীবী আবুল খায়ের।
এবারের নির্বাচনে বঙ্গবন্ধু আওয়ামী আইনজীবী পরিষদ সমর্থিত (সাদা) প্যানেলের প্রার্থীরা হলেন, সভাপতি পদে আবু সাঈদ সাগর, সম্পাদক শাহ মঞ্জুরুল হক, দুই সহ-সভাপতি পদে রমজান আলী শিকদার ও দেওয়ান মোহাম্মদ আবু ওবায়েদ হোসেন সেতু, কোষাধ্যক্ষ পদে মোহাম্মদ নুরুল হুদা আনসারী, দুই সহ-সম্পাদক পদে হুমায়ুন কবির ও হুমায়ুন কবির পল্লব এবং সাত সদস্য পদে প্রার্থী হয়েছেন- সৌমিত্র সরদার রনী, মো. খালেকুজ্জামান ভূঁইয়া, রাশেদুল হক খোকন, মাহমুদা আফরোজ, বেলাল হোসেন শাহীন, খালেদ মোশাররফ রিপন ও রায়হান রনী।
জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ঐক্য (নীল) প্যানেল থেকে মনোনীত বিভিন্ন পদের প্রার্থীরা হলেন, সভাপতি পদে এ এম মাহবুব উদ্দিন খোকন, সম্পাদক পদে মো. রুহুল কুদ্দুস (কাজল), দুই সহ-সভাপতি পদে মো. হুমায়ুন কবির মঞ্জু ও সরকার তাহমিনা বেগম সন্ধ্যা, কোষাধ্যক্ষ পদে মো. রেজাউল করিম, দুই সহ-সম্পাদক পদে মাহফুজুর রহমান মিলন ও মো. আব্দুল করিম এবং সাত সদস্য পদে প্রার্থী হয়েছেন- ফাতিমা আক্তার, সৈয়দ ফজলে এলাহি অভি, মো. শফিকুল ইসলাম শফিক, মো. রাসেল আহমেদ, মো. আশিকুজ্জামান নজরুল, মহিউদ্দিন হানিফ ও মো. ইব্রাহিম খলিল। এছাড়া দুই প্যানেলের বাইরে সভাপতি পদে ইউনুছ আলী আকন্দ এবং এম কে রহমান, সম্পাদক পদে নাহিদ সুলতানা যুথী ও ফরহাদ উদ্দিন আহমেদ ভূইয়া এবং কোষাধ্যক্ষ পদে সাইফুল ইসলাম প্রার্থী হয়েছেন।

সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির (বার) সভাপতি, সম্পাদকসহ মোট ১৪টি পদ রয়েছে। ২০২৪-২০২৫ সেশনের নির্বাচনে প্রার্থী পরিচিতি ৪ মার্চ অনুষ্ঠিত হবে। সভাপতি প্রার্থী ব্যারিস্টার এ এম মাহবুব উদ্দিন খোকন বলেন, ‘নির্বাচন কমিশন বলেছে সুষ্ঠু ও সুন্দর নির্বাচন হবে। তাই আমি বলবো, নির্বাচন যদি সুষ্ঠু হয়, যিনি ভোট পাবেন তিনিই নির্বাচিত হবেন, সে ব্যক্তি আমি হই বা অন্য কেউ। আমরা চাই সুষ্ঠু নির্বাচন। এর বাইরে আপাতত কিছু বলবো না।’
সম্পাদক প্রার্থী ব্যারিস্টার রুহুল কুদ্দুস কাজল বলেন, ‘সরকারি কর্মকর্তাদের দিয়ে যারা গত ২ বছর সমিতির ভোট ও ফলাফল ডাকাতির সঙ্গে জড়িত তাদের নির্বাচন কমিটিতে রাখা হয়েছে। এই নির্বাচন সুষ্ঠু করার উদ্দেশ্য তাদের নেই, এটা স্পষ্ট। তবে নির্বাচন অবাধ ও সুষ্ঠু হলে আমি জয়ী হওয়ার বিষয়ে শতভাগ নিশ্চিত। আইনজীবীরা আমাকে অবশ্যই নির্বাচিত করবেন। তিন বছর আমাকে আইনজীবীরা নির্বাচিত করেছেন। কিন্তু প্রশ্ন হচ্ছে সারা দেশে নির্বাচনের কোনও পরিবেশ নেই, এই পরিবেশ সুপ্রিম কোর্ট বারেও যা বিরাজমান। যারা অবৈধভাবে বারকে বর্তমানে ধরে রেখেছে তাদের দিয়েই বিতর্কিত নির্বাচন সাব-কমিটি গঠন করা হয়েছে এবং তারা একই প্রক্রিয়ার দিকে যাচ্ছে।’
সুষ্ঠু নির্বাচনের মাধ্যমে জয়ী হয়ে সমিতির জন্য নিবেদিত হতে চান সম্পাদক প্রার্থী নাহিদ সুলতানা যুথি। তিনি বলেন, ‘আমরা আমাদের নির্বাচনে কোনও আইনশৃঙ্খলা বাহিনী চাই না। আমরা সুষ্ঠু নির্বাচন চাই, যেখানে বাইরের কারও হস্তক্ষেপ থাকবে না। বারের গৌরব ফিরিয়ে আনার জন্য নির্বাচন করছি। আমরা আইনজীবীরা সবাই সবাইকে চিনি। আশা করি নির্বাচন কমিশন একটি সুষ্ঠু নির্বাচন উপহার দেবে। হার-জিত থাকবে, সুষ্ঠু ভোটের মাধ্যমে যোগ্য প্রার্থী বিজয়ী হয়ে আসবে, সেটাই প্রত্যাশা করছি।’

সম্পাদক পদের নির্বাচনকে বড় চ্যালেঞ্জ মনে করছেন বঙ্গবন্ধু আওয়ামী আইনজীবী পরিষদ সমর্থিত (সাদা) প্যানেলের প্রার্থী অ্যাডভোকেট শাহ্ মঞ্জুরুল হক। তিনি বলেন, ‘আমি মনে করি এই পদে আমার প্রতিদ্বন্দ্বী তিন জনই শক্তিশালী প্রার্থী। আমি উপলব্ধি করছি, এই পদে (সম্পাদক) খুব কঠিন প্রতিদ্বন্দ্বিতা হবে। আমি নিয়মিত প্র্যাকটিশনার। বিগত সময়ে সবসময় আইনজীবীদের পাশে থেকেছি। তারা আমাকে পছন্দ করেন। তারাই আমার শক্তি। আশা করছি সেই ভোটশক্তি আমাকে বিজয়ী করবে।’
প্রচার-প্রচারণায় আইনজীবীদের উষ্ণ অভিবাদন পেয়েছেন বলে নির্বাচনে জয়ী হওয়ার বিষয়ে আশাবাদী সহ-সম্পাদক পদের প্রার্থী ব্যারিস্টার হুমায়ুন কবির পল্লব। তিনি বলেন, ‘আমি একজন নিয়মিত প্র্যাকটিশনার। গুরুত্বের সঙ্গে দীর্ঘদিন ধরে আইন পেশায় যুক্ত রয়েছি। বিগত সময়ে আইনজীবীদের পাশে থেকেছি। অসংখ্য আইনজীবী ভোটার আমাদের বারে। সবার কাছে যাওয়ার চেষ্টা করেছি। যতদূর যেতে পেরেছি সবাই আমাকে উষ্ণ অভিবাদন জানিয়েছেন। আমার প্রতি তাদের ভালোবাসা আছে। তারা আমাকে সাহস জুগিয়েছেন। তাই আমি আমার বিজয়ের বিষয়ে আশাবাদী।’

আইনজীবীদের ভালোবাসার ওপর আস্থা রেখে প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছেন সদস্য প্রার্থী রাশেদুল হক খোকন। তিনি বলেন, ‘আমাদের বিজ্ঞ আইনজীবীদের কাছে ভোট প্রার্থনা করে যাচ্ছি। সবাই আমাকে ভালোবাসার হাত বাড়িয়ে দিচ্ছেন। সবার কাছে যাওয়ার চেষ্টা করছি। এটা অনেক কঠিন কাজ। তবু সবাই আমাকে আপন করে নিয়েছেন। আমি এক যুগের বেশি সময় ধরে সুপ্রিম কোর্টের উভয় বিভাগে প্র্যাকটিস করছি। সবার সঙ্গে কোর্টে, বারান্দায় দেখা হয়। সবার ভালোবাসা পেয়েছি। সবার ভালোবাসার প্রতি আমার আত্মবিশ্বাস রয়েছে। তাদের ভালোবাসার প্রতি আস্থা রেখেছি।’
করোনাকালে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে কাজ করায় আইনজীবীদের কাছে ভালোবাসার মানুষে পরিণত হয়েছেন বলে মনে করেন সহ-সম্পাদক প্রার্থী অ্যাডভোকেট হুমায়ুন কবির। তিনি বলেন, ‘বিজয়ী হওয়ার ব্যাপারে আমি শতভাগ আশাবাদী। যত দিন ধরে আইন-অঙ্গনে আছি, সব আইনজীবীর সঙ্গে সুসম্পর্ক ও ভ্রাতৃত্বের বন্ধনে আবদ্ধ হয়ে চলার চেষ্টা করেছি। আইনজীবীদের বিপদে সবসময় সাধ্যমতো পাশে থাকার চেষ্টা করেছি। এর আগে করোনা মহামারির সময় ২০২০-২১ মেয়াদের কমিটিতে দায়িত্ব পালনকালে আমাদের সিনিয়র নেতাদের নির্দেশনায় জীবনের ঝুঁকি নিয়ে আইনজীবীদের আর্থিক অনুদান-ভার্চুয়াল কোর্ট পরিচালনাসহ বেশ কিছু বিষয়ে কাজ করেছি। তাই আমি আশাবাদী, নির্বাচিত হয়ে আবারও আইনজীবীদের সেবা করার সুযোগ পাবো।’
সুষ্ঠু নির্বাচন হওয়া নিয়ে শঙ্কা প্রকাশ করেছেন সদস্য পদের প্রার্থী মো. ইব্রাহিম খলিল। তিনি বলেন, ‘যদি সুষ্ঠু স্বাভাবিক নির্বাচন হয়, আইনজীবীরা ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে পারেন, ইনশাআল্লাহ আমি বিজয়ী হবো। ইতোমধ্যে ঢাকা আইনজীবী সমিতিতে কার্যনির্বাহী সদস্য থাকাকালে আইনজীবীদের জন্য কাজ করেছি। আইনজীবীদের স্বার্থে আদালত থেকে টাউট-দালাল-আদালতের দুর্নীতির বিরুদ্ধে আমি অনেক সাহসী ভূমিকা রেখেছি। তাই আইনজীবীরা আমার আগের কাজকে মূল্যায়ন করে ভোট দিয়ে বিজয়ী করবেন বলে আশা রাখছি।’




শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর









© All rights reserved © 2020 khoborpatrabd.com
Theme Developed BY ThemesBazar.Com