হবিগঞ্জের মাধবপুর থানার পশ্চিম বাজার এলাকার রুক্কু মিয়ার ছেলে সিরাজুল ইসলাম ওরফে সজিব (৩৩)। পেশায় ইলেকট্রিক মেকানিক। তবে অনলাইন থেকে বিশেষ কিছু যন্ত্র সংগ্রহ করে ডিজিটাল ওজন মেশিন তৈরি করতো সে। ওই মেশিনে রিমোট কন্ট্রোলের মাধ্যমে ওজন কম-বেশি করা যায়। সজিব এসব মেশিন বিক্রি করতো রাজধানীর পাইকারি বাজারের অসাধু ব্যবসায়ীদের কাছে। ব্যবসায়ীরা ওই মেশিন ব্যবহার করে খুচরা বা পাইকারি ক্রেতাদের ওজনে কম দিতো। গতকাল রবিবার (১৭ মার্চ) দুপুরে রাজধানীর মিন্টো রোডে নিজ কার্যালয়ে সাংবাদিকদের এ সব তথ্য জানান ডিএমপির অতিরিক্ত কমিশনার (গোয়েন্দা) মোহাম্মদ হারুন অর রশীদ। তিনি বলেন, ‘সম্প্রতি ভুক্তভোগী ব্যবসায়ীদের অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে রাজধানীর কাপ্তান বাজারে অভিযান চালিয়ে রিমোট কন্ট্রোল ওজন মেশিন চক্রের চার সদস্যকে গ্রেফতার করেছে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) মতিঝিল বিভাগ। গ্রেফতার ব্যক্তিরা হলো– সিরাজুল ইসলাম ওরফে সজিব (৩৩), মো. মনির (৩৫), মো. লিটন (৩৮), মো. আলাউদ্দিন খান (২৮)। তাদের কাছ থেকে উদ্ধার করা হয়েছে, পাঁচটি ডিজিটাল ওজন মেশিন, সাতটি রিমোট কন্ট্রোল, ওজন মেশিন কারসাজির বিভিন্ন সরঞ্জাম।’ ডিএমপির গোয়েন্দা প্রধান বলেন, ‘সজিব বিভিন্ন অসাধু ব্যবসায়ীর কাছে তার তৈরি মেশিন বিক্রি করে মোটা অঙ্কের টাকা হাতিয়ে নিতো। সে প্রতিটি মেশিন ৭০ থেকে ৮০ হাজার টাকায় বিক্রি করতো। এই চক্রের কাছে ওজন কম দেওয়ার সাংকেতিক শব্দ হলো ‘গাপসি’। এর অর্থ ওজনে কম দিতে হবে। কাপ্তান বাজারের অসাধু পাইকারি মুরগি বা মাংস বিক্রেতারা এ সব মেশিন বেশি ব্যবহার করতো।’
মোহাম্মদ হারুন অর রশীদ বলেন, ‘রিমোট কন্ট্রোলের মাধ্যমে দূরে বসে ওজন নিয়ন্ত্রণ করা একটি অভিনব ও নতুন ধরনের প্রতারণা! আমরা শুনতাম, পাইকারি পণ্য কিনতে এসে অনেকেই ওজনে গড়মিল পেতেন। অনেক সময় খুচরা ক্রেতারাও এমন অভিযোগ করতেন। অভিযোগকে সামনে রেখে কাজ শুরু করে ডিবির মতিঝিল বিভাগ। পরে ওই প্রতারকদের হাতেনাতে গ্রেফতার করা হয়।’
তিনি বলেন, ‘রমজান মাস চলছে। সামনে ঈদ। ডিবিসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনী দ্রব্যমূল্য স্থিতিশীল রাখতে কাজ করে যাচ্ছে। বাজার মোটামুটি নিয়ন্ত্রণে আছে। আমরা অভিযানে নেমে দেখলাম, ঢাকার পাইকারি বাজারগুলোতে ওজনে কম দেওয়া হচ্ছে। পরে রিমোট কন্ট্রোলের মাধ্যমে ওজন নিয়ন্ত্রণ মেশিন তৈরি চক্রের চার জনকে গ্রেফতার করা হয়। তদন্ত করতে গিয়ে আমাদের মনে হয়েছে, এটি প্রতারণার নতুন ধরন।’ রমজানে বাজারে পণ্যের মূল্যের কারসাজি প্রতিরোধের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘পণ্যের মূল্য কারসাজির বিষয়ে গোয়েন্দা পুলিশ মাঠে কাজ করছে। পাশাপাশি আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে সঙ্গে নিয়ে মাঠে আছে ভোক্তা অধিদফতর। কোথাও অনিয়মের অভিযোগ পেলেই গোয়েন্দা পুলিশ জড়িতদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিচ্ছে।’