বৃহস্পতিবার, ০৯ মে ২০২৪, ১০:১৫ অপরাহ্ন

বিএফইউজে’র কর্মকর্তাদের সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে গয়েশ্বর: ভারতের কারণে দেশের মানুষ গণতন্ত্র বঞ্চিত

খবরপত্র ডেস্ক:
  • আপডেট সময় বুধবার, ২০ মার্চ, ২০২৪

ভারতের কারণে দেশের মানুষ গণতন্ত্র বঞ্চিত হয়েছে জেনেই ভারতীয় পণ্য বর্জন করছে জানিয়ে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায় বলেছেন, যেভাবে ভারতীয় পন্য বয়কটের রব ওঠেছে তা মোকাবেলা করাই দায় হয়ে পড়েছে। তিনি বলেন. দেশের সরকারের মধ্যে ভূতের ভয়ে আছে। ষ্লিপিং ট্যাবলেট খেয়েও এই ভুতের ভয়ে তাদের ঘুম আসে না ।
আজ মঙ্গলবার জাতীয় প্রেস ক্লাবের তফাজ্জল হোসেন মানিক মিয়া হলে ‘গণতন্ত্র ও গণমাধ্যমের স্বাধীনতা: প্রেক্ষিত বাংলাদেশ’ শীর্ষক আলোচনা ও বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়নের নবনির্বাচিত কর্মকর্তাদের সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এই মন্তব্য করেন।

গয়েশ্বর চন্দ্র রায় বলেন,পাকিস্তানের স্বৈরশাসকদেরও লজ্জাবোধ ছিল। কিন্তু বর্তমানে বাংলাদেশে যারা ক্ষমতায় আছে তাদের লজ্জাবোধ নেই।শুধু কাপড় দিয়ে শরীর আবৃত করলেই লজ্জা নিবারণ হয় না। এটা হচ্ছে নৈতিকতার লজ্জাবোধ। তাদের সেটা নেই। আর এরশাদ ছিল প্রাতিষ্ঠানিক স্বৈরাচার। এরা তার চেয়েও খারাপ।
গয়েশ্বর চন্দ্র রায় বলেন, আমরা চিৎকার করি, অনেক কিছু বলি, আমাদের দুঃখ-কষ্ট মানুষ দেখে। এখন মানুষ বোঝে আমরা ইদানিংকালে কোন অবস্থানে আছি। কিন্তু সরকার যে কোন অবস্থানে আছে ওটা মানুষ দেখে না। এটা ওরাও (সরকার) জানে, ওরা বোঝে। ওরা যে সুখে আছে তা না। তারা বুঝে জনবিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে। যে কোনো সময় গণবিস্ফোরণ ঘটতে পারে। তাই ওরাও ভূতের ভয়ে আছে। শ্লিপিং ট্যাবলেট খেলেও এই ভুতের ভয়ে তাদের ঘুম আসে না।
গণমাধ্যমের স্বাধীনতা নেই মন্তব্য করে গয়েশ্বর বলেন, সবাই তো গণতন্ত্রের কথা বলছে, গণমাধ্যমের কথা বলছে। কিন্তু গণমাধ্যম কী স্বাধীন? আমি তো তা মনে করি না। আজকাল টেলিভিশনের টকশোতে যেভাবে নির্লজ্জভাবে কথা বলে এটা সাংবাদিকতা নয়। কিছু কিছু সাংবাদিকের দালালী দেখে আমাদের লজ্জা হয়। এখন সাংবাদিকদের স্বাধীনতা নেই, আছে মালিকদের।। প্রতিটা হাউজই কোন সংবাদ যাবে, কোনটা যাবে না সেটাও বাছাই করা হয়। এখন সরকারের প্রশংসা আর চাটুকারিতা করতে করতে অনেকে শত কোটি টাকার মালিক হয়েছেন। সাংবাদিকের স্বাধীনতা থাকলে তারা লিখতে পারবেন।তাই আমি মালিকদের নয়, সাংবাদিকদের স্বাধীনতা চাই।
তিনি আরও বলেন, ২০০৮ সাল থেকে জনগণ প্রতারিত হচ্ছে। ভোট কিন্তু একটা উৎসব। ঈদ-পূজার থেকেও বড় উৎসব। কিন্তু আজ সেটা ধবংস করে দেয়া হয়েছে। এখন ভোট উৎসব নেই। ভোটই নেই। এখন বহু সাংবাদিক, রাজনীতিবিদ আছেন যারা স্বার্থের জন্য গণতন্ত্রকে স্বৈরতন্ত্র করে ফেলেন। আবার স্বৈরতন্ত্রকে গণতন্ত্র বানিয়ে ফেলেন।
নির্বাচন নিয়ে তিনি বলেন, ‘যারা ভোটের দিন ভোট দিতে গেছে তারা ভোট দিতে পারে নাই। লাইনে শুধু দাঁড়িয়ে থেকেছে। টাকা আর বিরিয়ানির প্যাকেট দিয়ে লাইনে দাঁড় করিয়ে রেখেছে। আমরা সব সময় যেটা বলি, ফুল ফুটুক আর না ফুটুক আজ বসন্ত। ঠিক একইভাবে আজকে ভোট হোক বা না হোক শেখ হাসিনা প্রধানমন্ত্রী।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আরো বলেন, আমরা গত ১৫ বছর ধরে ঐক্যের ডাক দিচ্ছি। ঐক্যের জন্য সংগ্রাম করছি। ঐক্য যখন নিশ্চিত হয়, তখন সংগ্রামটা সহজ হয়ে যায়। এই কাজটা যদি আমরা করতে না পারি তাহলে সরকার বিভেদকে নানাভাবে ব্যবহার করবে।
গত দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের প্রসঙ্গ তুলে তিনি আরো বলেন, নির্বাচনে ৬-৭ শতাংশের বেশি ভোটার ভোট দিতে যায়নি। আর যারা কেন্দ্রে গেছে বা যেতে বাধ্য হয়েছে, তারাও ভোট দিতে পারেনি। ফটোসেশানের জন্য লাইনে দাঁড় করিয়ে রেখেছে। আজকে বলতে হচ্ছে, ফুল ফুটুক আর না ফুটুক আজ বসন্ত। তেমনি শেখ হাসিনা ভোট পাক বা না পাক, পছন্দ করেন আর না করেন, ভোট দেন বা বা না দেন, তিনি প্রধানমন্ত্রী। এই প্রবাদ থেকে আমাদের বেরিয়ে আসতে হবে।
আলোচনা সভায় গয়েশ্বর চন্দ্র রায় বলেন, আমরা কি পাকিস্তানের চেয়ে ভালো আছি? পাকিস্তানের শাসক গোষ্ঠীর বিরুদ্ধে ১৯৬২ থেকে ১৯৭১ এ রণাঙ্গণে যুদ্ধ করেছি। কিন্তু এমন নিষ্ঠুরতা দেখিনি। আইয়ুব স্বৈরাচার ছিল, এতে কোনো সন্দেহ নেই। কিন্তু স্বৈরাচার হলেও রাষ্ট্র পরিচালনায় এতটা বেপোরোয়া ছিল না।
গণতন্ত্র প্রাতিষ্ঠানিক রূপ না দিতে পারলে সংবাদপত্রের স্বাধীনতা আসবে না মন্তব্য করে বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়নের (বিএফইউজে) সভাপতি রুহুল আমীন গাজী বলেন, সরকার একদলীয় শাসন পাকাপূক্ত করার জন্য যা যা করা দরকার সবই করেছে। সাগর রুনির হত্যার ঘটনা উল্লেখ করে তিনি বলেন, পুলিশ অনেক আসামি ধরে ফেলে। কিন্তু সাগর রুনির আসামিদের ধরতে পারে না। বার বার তদন্ত রিপোর্ট দেওয়ার জন্য সময় চাওয়া হয। প্রধানমন্ত্রীর সাংবাদিক সম্মেলনে বাছাই করা কিছু সাংবাদিক অংশ নিতে পারে। দীর্ঘ দিন একটা জাতিকে দাবিয়ে রাখা যাবে না বলেও মন্তব্য করেন এই সাংবাদিক নেতা। গণতন্ত্র ও মিডিয়ার স্বাধীনতার জন্য আমি আপনি যিনিতিনি সবাইকে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহ্বান জানান রুহুল আমিন গাজী। ১৯৭৫ সালেই সংবাদপত্রের স্বাধীনতা গর্ব করা হয়েছে জানিয়ে তিনি আরও বলেন তখন থেকেই সাংবাদিকরা ১৬ ই জুনকে সংবাদপত্রের কালো দিবস পালন করা হয়।

কাদের গনি চৌধুরী বলেন, উন্নয়নকে অর্থবহ করতে হলে গণতন্ত্র অপরিহার্য। আর গণতন্ত্র নিশ্চিত করে মানুষের বাক্-স্বাধীনতা, গণমাধ্যমের স্বাধীনতা, মতপ্রকাশের স্বাধীনতা।তাই গণতন্ত্রের জন্য গণমাধ্যমের স্বাধীনতা অপরিহার্য। কারণ মানুষের মৌলিক অধিকারেএ অন্যতম হাতিয়ার হচ্ছে গণমাধ্যম। দুভাগ্যজনক হলে সত্য আজ গণমাধ্যমের স্বাধীনতা কেড়ে নেয়া হয়েছে। গত ১৫ বছরে ৬০জন সাংবাদিককে হত্যা করা হয়েছে। ৪ শতাধিক গণমাধ্যম বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। সরকারের নিপীড়নের মুখে অবেক সম্পাদক ও সাংবাদিককে দেশান্তরি হতে হয়েছে।গণমাধ্যমের স্বাধীনতা কিংবা বাক্স্বাধীনতা নিশ্চিত করার জন্য আইন হচ্ছে না, আইন হচ্ছে নিয়ন্ত্রণ করার জন্য। বাক্, মত ও চিন্তার স্বাধীনতার বিকল্প শুধু এর পূর্ণ স্বাধীনতাই হতে পারে। কোনো বিরুদ্ধ মত দমনের মাধ্যমে কখনোই কোনো উন্নত ও সমৃদ্ধিশালী রাষ্ট্র গড়ে উঠতে পারে না। বাক্, মত ও চিন্তার শর্তহীন স্বাধীনতা নিশ্চিতে সাংবাদিক, নাগরিক সমাজসহ সরকার, রাষ্ট্রসংশ্লিষ্ট সবার যা যা করণীয় দরকার, তাই করতে হবে।
সাংবাদিকদের এনেতা বলেন, একটি রাষ্ট্রব্যবস্থা কতটা গণতান্ত্রিক, কতটা বিরুদ্ধমত সহনীয়, তা পরিমাপের মাপকাঠি গণমাধ্যমের স্বাধীনতা। গণতান্ত্রিক চর্চাকে নিশ্চিত করতে হলে মতের বহুত্ব, পথের বিবিধতা, আচরণিক বৈচিত্র্যের প্রতি সম্মান দেখাতে হলে, গণমাধ্যমের মুক্ত ও নিরাপদ পরিসর অপরিহার্য। সমালোচনা বন্ধ হলে গণতন্ত্র সৌন্দর্য হারাবে, বিকল্প তথ্যপ্রবাহ চালু হওয়ার আশঙ্কা থেকে যাবে। তাই সরকার শুধু ভিন্নমতকে সহ্য করবে তা নয়, প্রতিস্পর্ধী কণ্ঠকে নিরাপত্তাও দেয়া উচিত।গণতন্ত্রের এই প্রহরীকে (ওয়াচ্ ডগ) রক্ষা করা জীবন্ত (ভাইব্র্যান্ট) সমাজের অস্তিত্বের জন্য ভীষণ জরুরি। অথচ সরকার এর ঠিক উল্টো পথে হাঁটছে। গণমাধ্যমের স্বাধীনতা ততটুকু আছে যতটুকু সরকারের পক্ষে যায়।
সত্য বলতে না পারার কারণে অনেকে সাংবাদিকতা বাদ দিয়ে কোম্পানির জনসংযোগ কর্মকর্তার কাজ করছে। বর্তমান সময়টা সাংবাদিকদের জন্য হাত-পা বেধে সাঁতার কাটতে বলার মতো অবস্থা।

বাংলাদেশ ইয়ূথ ফোরামের সভাপতি মুহাম্মদ সাইদুর রহমানের সভাপতিত্বে আলোচনা সভায় আরো বক্তব্য রাখেন বিএনপির জাতীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য আ.ক.ম মোজাম্মেল হক, বাংলাদেশ ইয়ূথ ফোরামের উপদেষ্টা রোটারীয়ান এম নাজমুল হাসান বিএফইউজের সহসভাপতি একে এম মহসিন,ওবায়দুর রহমান শাহীন,সহকারী মহাসচিব বাছির জামাল, ড.সাদিকুল ইসলাম স্বপন, এরফানুল হক নাহিদ , আবু বকর, শাহজান সাজু বক্তব্য রাখেন।
আলোচনা সভা শেষে বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়নের (বিএফইউজে) নির্বাচিত নেতাদের বাংলাদেশ ইয়ূথ ফোরামের পক্ষ থেকে সংবর্ধনা দেওয়া হয়।




শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর









© All rights reserved © 2020 khoborpatrabd.com
Theme Developed BY ThemesBazar.Com