বৃহস্পতিবার, ১৩ জুন ২০২৪, ০৬:৫২ অপরাহ্ন

শিক্ষার্থীদের দাবির সঙ্গে আমরাও সহমত, কিন্তু সময় প্রয়োজন: বুয়েট উপাচার্য

নিজস্ব প্রতিবেদক :
  • আপডেট সময় শনিবার, ৩০ মার্চ, ২০২৪

বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) উপাচার্য সত্য প্রসাদ মজুমদার বলেছেন, ‘শিক্ষার্থীদের দাবিগুলোর সঙ্গে আমরাও সহমত। কিন্তু এগুলো পূরণে যথাযথ প্রক্রিয়া অনুসরণের জন্য সময় প্রয়োজন।’

গতকাল শনিবার বেলা সোয়া একটার দিকে নিজ কার্যালয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে বুয়েট উপাচার্য এ কথা বলেন। এর আধঘণ্টা আগে বুয়েট শিক্ষার্থীরা তাঁদের আজকের বিক্ষোভ কর্মসূচি শেষ করেন। বিক্ষোভ শেষ করার আগে শিক্ষার্থীরা আগামীকাল রোববারও টার্ম ফাইনাল পরীক্ষাসহ সব একাডেমিক কার্যক্রম বর্জন করার ঘোষণা দেন। ক্যাম্পাসে ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীদের প্রবেশ ও রাজনৈতিক কর্মকা- চালানোর প্রতিবাদসহ পাঁচ দফা দাবিতে আজ দ্বিতীয় দিনের মতো বিক্ষোভ করেন বুয়েট শিক্ষার্থীরা। সকাল সাতটায় তাঁরা বিক্ষোভ শুরু করেন। বিক্ষোভ চলে দুপুর সাড়ে ১২টা পর্যন্ত।
শিক্ষার্থীরা বলছেন, আবরার ফাহাদ হত্যার পর বুয়েট ক্যাম্পাসে ছাত্ররাজনীতি নিষিদ্ধ থাকার পরও গত বুধবার মধ্যরাতের পর বহিরাগত কিছু নেতা-কর্মী বুয়েট ক্যাম্পাসে প্রবেশ করে রাজনৈতিক কার্যক্রম চালান। বুধবার মধ্যরাতের পর ক্যাম্পাসে ‘বহিরাগতদের’ প্রবেশ ও রাজনৈতিক সমাগমের মূল সংগঠক পুরকৌশল বিভাগের ছাত্র ইমতিয়াজ হোসেন, যিনি ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য। প্রতিবাদে শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভে গতকাল শুক্রবার উত্তাল ছিল বুয়েট ক্যাম্পাস। পাঁচ দফা দাবিতে গত শুক্রবার বেলা আড়াইটা থেকে রাত আটটা পর্যন্ত টানা বিক্ষোভ করেন তাঁরা। তাঁরা দাবি আদায়ে ৩০ ও ৩১ মার্চ পরীক্ষাসহ সব একাডেমিক কার্যক্রম বর্জনের ঘোষণা দেন। শিক্ষার্থীরা যে পাঁচ দফা দাবি জানিয়েছিলেন, সেগুলো কিছুটা হালনাগাদ করে আবার জানানো হয়। শিক্ষার্থীদের হালনাগাদ দাবিগুলো হলো, বিশ্ববিদ্যালয়ের সুস্পষ্ট বিধিমালা লঙ্ঘনের দায়ে বুধবার মধ্যরাতে রাজনৈতিক সমাগমের মূল সংগঠক ইমতিয়াজকে আজ বেলা দুইটার মধ্যে বুয়েট থেকে স্থায়ী বহিষ্কার; তাঁর সঙ্গে জড়িত পাঁচ শিক্ষার্থীকে (এ এস এম আনাস ফেরদৌস, হাসিন আরমান নিহাল, অনিরুদ্ধ মজুমদার, জাহিরুল ইসলাম ও সায়েম মাহমুদ) বুয়েট থেকে স্থায়ী—একাডেমিক ও হল থেকে বহিষ্কার, জড়িত অন্যদের অবিলম্বে শনাক্ত করে শাস্তি দেওয়া; ক্যাম্পাসে প্রবেশ করা বহিরাগত রাজনৈতিক ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থার বিষয়ে প্রশাসনের লিখিত নোটিশ ও বাস্তবায়ন; দায়িত্ব পালনে ব্যর্থ ছাত্রকল্যাণ পরিদপ্তরের পরিচালক (ডিএসডব্লিউ) পদত্যাগ; আন্দোলনরত বুয়েট শিক্ষার্থীদের বিরুদ্ধে কোনো রকম হয়রানিমূলক ব্যবস্থা না নেওয়ার বিষয়ে লিখিত প্রতিশ্রুতি। শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভ শেষ হওয়ার পর সাংবাদিকদের মুখোমুখি হন উপাচার্য। তিনি বলেন, ‘ইমতিয়াজকে হল থেকে বহিষ্কার আমরা করতে পারি। কিন্তু টার্ম বহিষ্কার শৃঙ্খলা কমিটির বৈঠক ডেকে নিয়মতান্ত্রিক উপায়ে করতে হবে। শৃঙ্খলা কমিটির সভার জন্য তদন্ত প্রতিবেদন লাগবে। তদন্ত প্রতিবেদন ছাড়া শৃঙ্খলা কমিটি কোনো ব্যবস্থা নিতে পারবে না। এভাবে শাস্তি দেওয়া হলে আদালতে গিয়েও টিকবে না। ফলে তদন্ত লাগবে এবং তদন্তে অভিযুক্তকেও আত্মপক্ষ সমর্থনের সুযোগ দিতে হবে। আমাদের আইন ও নিয়ম অনুযায়ী চলতে হবে। আমরা তদন্ত কমিটি গঠন করেছি। আজকে তদন্ত কমিটি কাজ শুরু করেছে। ছয় সদস্যবিশিষ্ট এই কমিটিকে আগামী ৮ এপ্রিল পর্যন্ত সময় দেওয়া হয়েছে। প্রতিবেদন পাওয়ার পর এর সদস্যদের মতামতও আমরা শুনব।’ শিক্ষার্থীদের পরীক্ষা বর্জনের বিষয়ে উপাচার্য বলেন, ‘আমরা পরীক্ষা স্থগিত করিনি। তাঁরা (শিক্ষার্থী) বর্জন করেছেন। তাঁরা পরীক্ষা স্থগিতের আবেদনও করেননি। তাঁরা আবেদন করলে আমরা বিবেচনা করতাম। তাঁরা এখানে ভুল করেছেন। পরীক্ষা হয়েছে। কিন্তু তাঁরা পরীক্ষায় অনুপস্থিত ছিলেন। নিয়ম অনুযায়ী ঘণ্টা বাজবে, ছাত্ররা আসুক না আসুক—এমন ঘটনা বুয়েটে আগেও ঘটেছে। পরে তাঁরা পরীক্ষার জন্য আবেদন করলে একাডেমিক কাউন্সিল বিবেচনা করতে পারে।’

ডিএসডব্লিউর পদত্যাগের দাবির বিষয়ে উপাচার্য বলেন, ‘ডিএসডব্লিউর পদত্যাগের বিষয়ে এখন আমরা চিন্তা করছি না। কারণ, এটা নরমাল একটা প্রসিডিউর। নিয়ম অনুযায়ী যখন হওয়ার হবে। ডিএসডব্লিউ বলেছেন, তাঁর পক্ষ থেকে কোনো গাফিলতি ছিল না। শিক্ষার্থীরা দাবি করতেই পারেন। কিন্তু দাবির মুখে আমরা ব্যবস্থা নিতে পারি না। সময় হলে আমরা নতুন ডিএসডব্লিউ নিয়োগ দেব।’
মধ্যরাতে ক্যাম্পাসে ছাত্রলীগের প্রবেশের দায় কার এক সাংবাদিকের এমন প্রশ্নের জবাবে সত্য প্রসাদ মজুমদার বলেন, ‘নিরাপত্তা কর্মকর্তাকে আমরা কারণ দর্শানোর নোটিশ দেব যে কেন তিনি ঢুকতে দিলেন। তাঁর তো ঢুকতে দেওয়া উচিত হয়নি। গভীর রাতে কেউ (ক্যাম্পাসে) ঢুকলে এটা অবশ্যই অমানবিক বা অনিয়মতান্ত্রিক। কে ঢুকেছে, তাঁকে তো আগে চিহ্নিত করতে হবে। চিহ্নিত না করে তো শাস্তি দেওয়া যাবে না। তার জন্য সময় প্রয়োজন। যদি কোনো নিরাপত্তারক্ষী বহিরাগত ব্যক্তিদের ঢুকতে দিয়ে থাকেন, তাঁর বিরুদ্ধে আমরা ব্যবস্থা নেব।’
শিক্ষার্থীদের দাবিগুলোর সঙ্গে সহমত পোষণ করছেন, এমন মন্তব্য করে বুয়েট উপাচার্য বলেন, ‘কিন্তু সকাল ৯টা, বেলা ২টা—এভাবে ব্যবস্থা নেওয়া সম্ভব নয়। দাবি পূরণ করার জন্য যা যা করার, করা হয়েছে। তদন্ত প্রতিবেদন এলে আমরা নিয়ম অনুযায়ী ব্যবস্থা নেব। নিয়মের বাইরে আমি কিছু করতে পারব না। নিয়মবহির্ভূতভাবে একজনকে বহিষ্কার করলে সেটা আদালতে টিকবে না। নিয়মের মধ্যে সবকিছু করার জন্য সময়ের প্রয়োজন। যেহেতু রোজার মাস, সময় একটু বেশি দেওয়া উচিত ছিল।’




শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর









© All rights reserved © 2020 khoborpatrabd.com
Theme Developed BY ThemesBazar.Com