ইরানের পাল্টা হামলার শঙ্কায় উত্তেজনা বাড়ছে মধ্যপ্রাচ্যে। ইসরাইলে কর্মরত নিজ দেশের নাগরিকদের প্রতি ভ্রমণ সতর্কতা জারি করেছে যুক্তরাষ্ট্র। যুক্তরাষ্ট্র দূতাবাস জানায়, ‘অধিকতর সতর্কতার অংশ হিসেবে’ দূতাবাস কর্মীদের জেরুজালেমের বাইরে যেতে নিষেধ করা হয়েছে। ১১ দিন আগে সিরিয়ায় ইরানি কনস্যুলেটে হামলা চালায় ইসরাইল। ওই হামলায় ১৩ জন নিহত হন। ইরান এর প্রতিশোধ নেয়ার ঘোষণা দিয়েছে।
বিবিসি নিউজের ক্রিস্টি কুনির এক রিপোর্টে বলা হয়েছে, যুক্তরাজ্যের পররাষ্ট্রমন্ত্রী লর্ড ক্যামেরন ইরানি পররাষ্ট্রমন্ত্রীকে ফোন করে বিষয়টিকে আর বেশিদূর গড়াতে না দেয়ার আহ্বান জানিয়েছেন। ইসরাইল অবশ্য কনস্যুলেটে হামলার দায় স্বীকার করেনি। কিন্তু, ব্যাপকভাবে ধারণা করা হচ্ছে তারাই এর নেপথ্যে ছিল।
মধ্যপ্রাচ্যে ইসরাইল বিরোধী বিভিন্ন গোষ্ঠীকে মদদ দিয়ে থাকে ইরান। হামাস তাদের অন্যতম। গাজায় ইসরাইলের সাথে যুদ্ধ করছে গোষ্ঠীটি।
আরও আছে, লেবাননের হেজবুল্লাহ। কনস্যুলেটে হামলায় বেশ কয়েকজন সামরিক কর্মকর্তা প্রাণ হারান। তাদের মধ্যে কুদস্ ফোর্সের একজন সিনিয়র কমান্ডার ছিলেন। সিরিয়া ও লেবাননে বাহিনীর কার্যক্রম দেখভাল করতেন তিনি।
হামলাটি এমন সময়ে হলো যখন গাজার যুদ্ধ যাতে পুরো অঞ্চলে ছড়িয়ে না পড়ে সেজন্য জোর কূটনৈতিক তৎপরতা চালানো হচ্ছে। বুধবার মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন সতর্ক করে বলেন, ইরানের দিক থেকে “তীব্র আক্রমণের” হুমকি আছে। হামলা থেকে রক্ষায় ইসরাইলকে ‘আয়রনক্ল্যাড’ দেয়ার প্রতিশ্রুতিও দেন তিনি।
মধ্যপ্রাচ্যে যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক কর্মকাণ্ড পরিচালিত হয় কমান্ডার এরিক কুরিল্লার নেতৃত্বে। তিনি ইতিমধ্যে নিরাপত্তা হুমকি নিয়ে কথা বলতে ইসরাইল সফরে গেছেন। পেন্টাগন বলছে, সফরটি পূর্ব নির্ধারিতই ছিল। কিন্তু, “সাম্প্রতিক ঘটনাপ্রবাহের কারণে” এগিয়ে আনা হয়েছে। ইরানি পররাষ্ট্রমন্ত্রী হোসেইন আমির আব্দুল্লাহিয়ানের সঙ্গে ফোনালাপের পর লর্ড ক্যামেরন জানান, “স্পষ্ট করে বলে দিয়েছি… ইরানের উচিত হবে না মধ্যপ্রাচ্যকে বড় সংঘাতের মধ্যে টেনে নিয়ে যাওয়া।” “হিসাব-নিকাশে কোথাও একটা ভুল হয়ে গেলে তা আর বড় সংঘাত ডেকে আনতে পারে, এটাই বেশি ভাবাচ্ছে আমাকে,” বলেন তিনি।
যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিনকেন চীন, সৌদি আরব ও তুরস্কের পররাষ্ট্রমন্ত্রীদের সাথে কথা বলেছেন। সংঘাত আর বাড়তে দিলে সেটা কারও জন্য মঙ্গল বয়ে আনবে না এটা জানানোই ছিল তার উদ্দেশ্য। পাল্টা আঘাতটা কী ধরনের হবে সেটা যেমন পরিষ্কার নয়, হামলা সরাসরি ইরানের দিক থেকেই আসবে নাকি কোনো প্রক্সির মধ্য দিয়ে আসবে সেটিও নিশ্চিত নয়। রোববার ইরানের কর্মকর্তাদের একজন হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করে বলেন, ইসরাইলে দূতাবাসগুলো “আর নিরাপদ নয়”। যা থেকে একটা অনুমান দাঁড় করানো যায় যে, হয়তো কোনো কনস্যুলেট ভবনই সম্ভাব্য লক্ষ্য হবে।
ইসরাইলের প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইয়োভ গ্যালান্ট মার্কিন প্রতিরক্ষামন্ত্রীর সঙ্গে আলাপে বলেছেন, ইসরাইলি ভূখন্ডে “সরাসরি কোনো ইরানি আক্রমণ” হলে তার প্রতিক্রিয়ায় “ইরানের বিরুদ্ধে যথাযথ জবাব দেবে ইসরাইল।” মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের মুখপাত্র ম্যাথিউ মিলারকে বৃহস্পতিবার এ ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞার ব্যাপারে প্রশ্ন করা হয়। তিনি বলেন, এই নিষেধাজ্ঞার পেছনে যে “বিশেষ পর্যালোচনা” রয়েছে সেটি তিনি প্রকাশ করবেন না। কিন্তু, এও বলেন, “মধ্যপ্রাচ্যে বিশেষ করে ইসরাইলে হুমকির পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণে রেখেছি আমরা।”
যুক্তরাজ্যের পররাষ্ট্র দপ্তরও ইসরাইলের জন্য ভ্রমণ সতর্কতা জারি করেছে। তাদের ভাষ্য, দেশটির সরকার “ইসরাইলি ভূখণ্ডে ইরানের দিক থেকে হামলার শঙ্কা প্রকাশ করছে এবং বলছে, এমন হামলা সংঘাতকে বড় পরিসরে ছড়িয়ে দিতে পারে।”
ইসরাইলে হামাসের সাতই অক্টোবরের হামলার সময় থেকেই, পররাষ্ট্র দপ্তরের পক্ষ থেকে ইসরাইলের বেশির ভাগ অংশ এবং দখলকৃত ফিলিস্তিন এলাকায় ভ্রমণে সতর্কতা জারি রয়েছে। এমন পরিস্থিতিতে, জার্মান বিমান পরিবহন সংস্থা লুফথানসা ইরানের রাজধানী তেহরানে তাদের ফ্লাইট স্থগিতের মেয়াদ শনিবার পর্যন্ত বাড়িয়েছে।
ওদিকে, দামেস্কের দূতাবাস কম্পাউন্ডে ইসরাইলি হামলার পর ইরানের পাল্টা জবাবের হুমকিতে মধ্যপ্রাচ্যজুড়ে উত্তেজনার মধ্যে মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোকে সংযত থাকার আহ্বান জানিয়েছে রাশিয়া ও জার্মানি। রাশিয়া নিজেদের নাগরিকদের মধ্যপ্রাচ্য ভ্রমণের বিষয়ে সতর্ক করেছে।