ফরিদপুরের বোয়ালমারী উপজেলার সাতৈর ইউনিয়নের মহিশালায় অবস্থিত হিরু মুন্সীর মালিকানাধীন ‘ব্যাটারি প্রসেসিং ইন্ডাস্ট্রি নামের একটি কারখানা। কারখানাটি যথাযথ কর্তৃপক্ষের অনুমতি ছাড়াই অবৈধভাবে পরিচালিত হচ্ছে বলে অভিযোগ উঠেছে। কারখানাটির বিরুদ্ধে স্থানীয় ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকরা বেশ কয়েকবার মানববন্ধনও করেছে। বিভিন্ন অভিযোগে কারাখানাটিকে ভ্রাম্যমাণ আদালতে দুইবার দুই লাখ টাকা জরিমানা করা হয়েছে।
যথাযথভাবে পুরাতন ব্যাটারি না ভাঙায় এবং সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের অনুমতি না থাকায় বাংলাদেশ পরিবেশ সংরক্ষণ আইনে ভ্রাম্যমাণ আদালতে অবৈধ কারখানাটিকে বন্ধ রাখতে নির্দেশনা দেন। তারপরও থেমে নেই কারখানাটির অবৈধ কার্যক্রম। অনুসন্ধানে দেখা যায়, সাতৈর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো. রাফিউল আলম মিন্টু চারিদিকে ফসলি জমি থাকা সত্বেও স্থানীয় কৃষকদের কৃষিপণ্য উৎপাদনের কথা চিন্তা না করে ২০২৪ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি ওই প্রতিষ্ঠানের পক্ষে একটি অনাপত্তিপত্র দেন। ওই অনাপত্তিপত্রকে পুঁজি করে ব্যাটারি প্রসেসিং ইন্ডাস্ট্রির মালিক হিরু মুন্সী তার কারখানায় পুরনো ব্যাটারি পুড়িয়ে সীসা তৈরি করছে। এতে সৃষ্ট কালো ধোঁয়ায় পরিবেশের মারাত্মক ক্ষতি হচ্ছে, সেই সাথে রয়েছে স্বাস্থ্য ঝুঁকি। এছাড়া ব্যাটারির এসিড বৃষ্টির পানিতে ধুয়ে আশেপাশের ফসলের এবং মৎস্য সম্পদের ক্ষতি সাধিত হচ্ছে। এদিকে যে অনাপত্তিপত্রকে পুঁজি করে ব্যাটারি প্রসেসিং ইন্ডাস্ট্রির কার্যক্রম চালু রয়েছে সেই অনাপত্তিপত্রে ‘ব্যবসার ধরণ’ ঘরটি ফাঁকা রয়েছে। কি ধরনের ব্যবসার জন্য ওই অনাপত্তিপত্র প্রদান করা হয়েছে তার কোন উল্লেখ নেই। এছাড়া ওই অনাপত্তিপত্রে বেশ কয়েকটি শর্ত উল্লেখ করা হয়েছে। শর্তগুলোর মধ্যে রয়েছে- কোন অবৈধ কর্মকা- দ্বারা কোনভাবেই পরিবেশ দূষণ করা যাবে না; সকল বর্জ্য পরিকল্পিত উপায়ে সংগ্রহ করে অপসারণের ব্যবস্থা করতে হবে; পরিবেশগত ছাড়পত্র গ্রহণ ব্যতিরেকে উৎপাদন কার্যক্রম পরিচালনা করা যাবে না; কোন প্রকার দূষণের অভিযোগ সৃষ্টি হলে অনাপত্তিপত্র বাতিল বলে গণ্য হবে ইত্যাদি। সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, উল্লিখিত ওইসব শর্তের কোনটিই সঠিকভাবে প্রতিপালিত হচ্ছে না। এছাড়া পরিবেশগত কোন ছাড়পত্রও নেই। অথচ ইউনিয়ন পরিষদ কর্তৃক প্রদানকৃত অনাপত্তিপত্রে স্পষ্ট উল্লেখ করা হয়েছে ‘পরিবেশগত ছাড়পত্র গ্রহণ ব্যতিরেকে উৎপাদন কার্যক্রম পরিচালনা করা যাবে না’। তাহলে কোন ক্ষমতাবলে কারখানাটির মালিক নব্য আওয়ামীলীগার হিরু মুন্সী ওই ব্যাটারি প্রসেসিং কারখানা চালু রেখেছেন? এ ব্যাপারে সাতৈর ইউনিয়ন আ’লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সাবেক চেয়ারম্যান মো. মজিবর রহমান বলেন, হিরু মুন্সীর কারখানার কারণে ৫ গ্রামের কৃষকদের ফসলের ব্যাপক ক্ষতি সাধিত হচ্ছে। কৃষকরা প্রায়ই আমাকে সীসা কারখানাটি বন্ধ করার জন্য বলেন। তাই আমিও চাই, কারখানাটি বন্ধ হোক। জানতে চাইলে সাতৈর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো. রাফিউল আলম বলেন, আমি তাকে ইন্ডাস্ট্রি করার অনাপত্তিপত্র দিয়েছি। কিন্তু পরিবেশের ক্ষতি হয় কিনা- এটা দেখার দায়িত্ব পরিবেশ অধিদপ্তরের। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, কয়েকদিন আগে হিরু মুন্সীর সাথে আমার দেখা হলে তাকে বলেছি পরিবেশ বা ফসলের ক্ষতি হয় এমন কোন কারখানা চালানো যাবে না। এ ব্যাপারে ফরিদপুর জেলা পরিবেশ অধিদপ্তরের উপপরিচালকের মোবাইল ফোনে শুক্রবার ও শনিবার একাধিকবার কল দেয়া হলেও রিসিভ না করায় তাঁর বক্তব্য নেয়া সম্ভব হয়নি।