রবিবার, ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ০৭:০৮ অপরাহ্ন

ধনবাড়ীতে তাপদাহে ‘কপাল পোড়ার’ শঙ্কায় কৃষক শুকিয়ে যাচ্ছে ধান ক্ষেত, মরছে সবজির বাগান

জহিরুল ইসলাম মিলন (ধনবাড়ী) টাঙ্গাইল
  • আপডেট সময় রবিবার, ২৮ এপ্রিল, ২০২৪

টাঙ্গাইলের ধনবাড়ী উপজেলায় প্রায় দুই সপ্তাহ ধরে তীব্র থেকে মৃদু তাপপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে সারা দেশের নেয় । পথ-ঘাট-মাঠ সবকিছুই উত্তপ্ত। এর বিরূপ প্রভাব দেখা যাচ্ছে ফসলের মাঠেও। কৃষকরা বলছেন, তীব্র রোদের প্রভাবে মাঠের ধান গাছ শুকিয়ে যাচ্ছে, মরছে সবজির গাছ। সেচের জন্য প্রয়োজনীয় পানিও মিলছে না গভীর নলকূপে। এতেকরে একদিকে ফলন ‘কমে যাবার’ আশঙ্কা অন্যদিকে উৎপাদন খরচ বেড়ে যাওয়ার দুশ্চিন্তায় আছেন ধনবাড়ী উপজেলার কৃষকরা। ধনবাড়ী উপজেলার বেশিরভাগ ক্ষেতে ধান গাছ শুকিয়ে যাচ্ছে। প্রতিদিন জমিতে পানি দিতে হিমসীম খেয়ে যাচ্ছে কৃষক। তাদের মনে শঙ্কাও তৈরি হয়েছে এমন রোদ আর গরমে যেন ধান নষ্ট হয়ে না যায়। ধনবাড়ী উপজেলার মুশুদ্দি ইউনিয়নের কৃষক জলিল বলেন, ‘ধানের জমিতে পানি ধরে রাখা যাচ্ছেনা। কিছু কিছু জমির ধান লাল হয়ে মরে যাচ্ছে। এখনতো পানির লেয়ারও অনেক নিচে। এলাকার টিউবলেও ঠিকমতো পানি ওঠে না, মেশিনেও কম পানি ওঠে, যাদের(ডিপটিউবয়েল) আছে তারা পানি দিবার দিতে পারছে। এতো রোদের কারণে এবার ধানত চিটা হওয়ার ভয়ে আছি। আর সবজির ক্ষেত সবজি রোদে-পুড়ে মরে যাচ্ছে।’ চলতি মৌসুমে সারাদেশে তীব্র তাপাদহের কারণে ধান ছাড়া বাকি সফলী জমি খেত ফেটে চৌচির। রোদে পুড়ছে রোপণ করা বোরো ধান। দিতে হচ্ছে বাড়তি সেচ। বৃষ্টি না হওয়ায় পানির অভাবে ধানের ফলন কম হওয়ার আশঙ্কা করছেন কৃষকেরা। কৃষি সংশ্লিষ্টরা বলছে, এই তাপদাহে ক্ষেতের ফসল বাঁচাতে অন্য বারের তুলনায় দ্বিগুন বেশি সেচ দিতে হচ্ছে, যার ফলে উৎপাদন খরচ বাড়বে। ধনবাড়ী উপজেলার পাইস্কা ইউনিয়নের রফিক মিয়া গভীর নলকূপ দিয়ে নিজের জমিতে পানি দেওয়ার পাশাপাশি অন্যর জমিতেও পানি বিক্রি করনে। তিনি বলেন,‘আমার মোটর ২৪ ঘন্টা চলে। গতবছর এই সময়ে দুইদিন পর পর একটা জমিতে পানি দিতে হতো। এবার দিতে হচ্ছে একদিন পর পর। এতে আমার খরচ বেড়ে যাচ্ছে।’ বানিয়াজান ইউনিয়নের কৃষক সিরাজ বলেন, ৩ বিঘা জমিতে বোরো চাষ করেছি। প্রচন্ড রোদের তাপ এ বছর ধান চিটা হওয়ার আশঙ্কা করছি।’ তিনি আরো বলেন, ‘সার, বীজ, তেল ও শ্রমিক খরচ বেড়ে যাওয়ায় এমনিতেই প্রতিমণ ধান উৎপাদন খরচ বাড়ছে এখন বাড়তি সেচও দেওয়ার কারণে খরচ আরো বেড়ে গেল।’ ধনবাড়ী উপজেলার কৃষি অফিসার মোঃ মাসুদুর রহমান বলেন, ‘তাপপ্রবাহের কারণে চাইলেও সেই পানির প্রবাহ ধরে রাখা সম্ভব হচ্ছে না। তাপমাত্রা বেশি থাকার কারণে ধানের ফুল পলিনেশন করতে পারছে না, অনেক ফুল ঝরে যাচ্ছে। একারণে ধান চাষে ক্ষতির মুখে পড়তে পারেন কৃষক।’ তীব্র তাপ প্রবাহের কারণে আম, লটকন, মাল্টা, অ্যাভাকাডার মতো গাছের গুটি ঝরে যাওয়ার কথাও জানান তিনি। তিনি বলেন, ‘ আমার যে ফলের বাগান আছে সে বাগান থেকে বৃষ্টির অভাবে গাছ পুষ্টি না পাওার কারণে ফল ফুল ঝরে পড়ছে, যখন বৃষ্টি হবে তখন গাছ পরিপুষ্ট হতে আরো ১৫ দিন সময় নিবে কিন্ত মাঝে যে সময় গেল সেটা তো ফিরে পাওয়া সম্ভবনা। এছাড়া, ক্ষেতে যে কৃষি শ্রমিকরা কাজ করে তারাও তো তাড়াতাড়ি হাপিয়ে ওঠে এতো আমার শ্রমের অপচয় হচ্ছে।’ সার্বিকভাবে বলা চলে, বৃষ্টি না হলে পরিস্থিতি আরও খারাপের দিকেই চলে যাবে বলে শঙ্কা প্রকাশ করেন তিনি। বিশেষ করে যেসব এলাকার তাপমাত্রা খুব বেশি সেসব এলাকার ধান নিয়ে ‘শঙ্কার’ কথা জানিয়ে তিনি বলেন, ‘আমরা সব কৃষককে পরামর্শ দিচ্ছি টেম্পারেচার বেশী থাকলেও যেন তারা সবসময় পানি ধরে রাখে। পানি ধরে রাখলে চিটা হওয়ার সম্ভবনা কম থাকে।’ যেসব এলাকায় ধান পেকে গেছে সেসব এলাকায় আমরা ধান তাড়াতাড়ি কেটে ফেলার পরমর্শও দিচ্ছি। এখনো কোন বিরুপ প্রভাব পড়েনি এবার ব্লাষ্টও কম। খবর এখন পর্যন্ত ভালো আছে।’




শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর









© All rights reserved © 2020 khoborpatrabd.com
Theme Developed BY ThemesBazar.Com