দেখতে দেখতে গরম এসে গেল। আর গরমে অনেকেরই প্রিয় খাবার পান্তা ভাত। শুধু বাঙালিরাই নন। দেশের বিভিন্ন অ লে এর প্রচলন আছে। খালি নামটা বদলে যায়। সে সব না হয় হল। কিন্তু এটা কি জানেন, পান্তাভাত পুষ্টিগুণের দিক দিকে একশোয় একশো! হ্যাঁ, আমাদের পরিচিত, সাধারণ খাবারেরই অজস্র উপকারিতা।
পান্তাভাতের এই উপকারিতার দিকটাই তুলে ধরলেন পুষ্টিবিদ দেবরূপা ভট্টাচার্য্য। পান্তাভাতের বিভিন্ন গুণের বিষয়ে জানালেন তিনি:
ভিটামিন বি টুয়েলভ: ফার্মেন্টেশনের(গাঁজন) ফলে পান্তা ভাতে জন্য ভিটামিন বি টুয়েলভ বেড়ে যায়। এটি ক্লান্তি দূর করে। কিছু ক্ষেত্রে অনিদ্রা দূর করতেও সাহায্য করে।
অ্যাসিডিটি থেকে মুক্তি: বিজ্ঞানীদের মতে পান্তাভাত পিএইচ ব্যালেন্স করতে সাহায্য করে। আলসার রোগীদেরও সুফল দেয় ।
নতুন মায়েদের জন্য: ফারমেন্টেশনের ফলে ল্যাকটিক অ্যাসিড তৈরি হয়। এটি স্তন্যপান করানো মায়েদের দুগ্ধ উৎপাদনে সাহায্য করে।
কোষ্ঠকাঠিন্যের সমস্যা: ন্যাচারাল ল্যাক্সেটিভ হিসেবে কাজ করে। কোষ্ঠকাঠিন্য কমাতে সহায়তা করে।
রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ: রক্তচাপের রোগীদের ক্ষেত্রে এটি বেশ কার্যকরী। সাধারণ ভাতের তুলনায় এতে সোডিয়ামের পরিমাণ কম। অন্যদিকে পটাশিয়ামের পরিমাণ যথেষ্ট বেশি।
রিহাইড্রেশন: পান্তা ‘বডি রিহাইড্রেটিং ফুড’ হিসেবে পরিচিত।গরমকালের খাবার হিসেবে পান্তার জুরি মেলা ভার।
ওজন কমাতে সহায়ক: ফারমেন্টেশনের কারণে পান্তায় কার্বোহাইড্রেট এবং ফ্যাটের পরিমাণ অনেকটাই কমে যায়। তাই অনেক ক্ষেত্রে ওয়েট লসে কার্যকরী হয়।তবে অবশ্যই সেটা সীমিত পরিমাণে খেতে হবে।
ঝকঝকে ত্বক: পান্তা ভাতকে ‘বিউটি সিক্রেট অফ এশিয়া’ বলা হয়। কারণ এটি কোলাজেন তৈরিতে সাহায্য করে। এটি ত্বকের ইলাস্টিসিটি বৃদ্ধি করে। ফলে ত্বক মসৃণ, টানটান ও উজ্জ্বল দেখায়।
মাইক্রোনিউট্রিয়েন্টে ভরপুর: পান্তা ভাতে অনেক মাইক্রোনিউট্রিয়েন্টের প্রাপ্যতা অনেক বেড়ে যায়। উদাহরণস্বরূপ – ম্যাগনেসিয়াম, ক্যালসিয়াম, আয়রনের মতো উপাদানের প্রাপ্যতা বৃদ্ধি পায়। ১০০ গ্রাম সাধারণ ভাতে ৩.৪ সম আয়রন থাকে। অন্যদিকে পান্তা ভাতের ক্ষেত্রে সেটাই দাঁড়ায় প্রায় ২১ গুণ, ৭৩.৯১সম।
কোলেস্টেরল হ্রাস: পান্তায় কিছু রেজিস্ট্যান্স স্টার্চ তৈরি হয়। এটি অনেক ক্ষেত্রে সিরাম কোলেস্টেরল কমাতে সাহায্য করে।
উপকারি ব্যাকটেরিয়া: প্রোবায়োটিক্সে ভরপুর পান্তা ভাত। এটি হজমশক্তি রক্ষায় সাহায্য করে। সেই সঙ্গে পান্তা সারাদিন কাজ করার জন্য শক্তি যোগাতে সাহায্য করে ।
কীভাবে পান্তা বানাবেন? কী? ভ্রু কোঁচকাচ্ছেন? ভাবছেন, ‘এ আর এমন কী ব্যাপার। ভাতে জল ঢেলে দিলেই হল।’ হ্যাঁ, কিছুটা তাই-ই। তবে মনে রাখবেন, জল ঢেলে সঙ্গে সঙ্গে খেলে কিন্তু সেটা পান্তা নয়। সেটাকে অন্তত ১৬-১৮ ঘণ্টা সাধারণ তাপমাত্রায় রেখে দিতে হবে। তবেই ফার্মেন্টেশন হবে। তৈরি হবে পান্তা। তার বেশি সময় ধরে আবার রাখতে যাবেন না যেন! তাতে হিতে বিপরীত হতে পারে। ডিনারের পর অতিরিক্ত ভাতে জল ঢেলে সারারাত রেখে দেওয়া যেতে পারে। পরের দিন সকালেই সেটা খেতে পারেন। তাহলে আর দেরি কিসের, কাল থেকেই শুরু করুন পান্তা ভাত খাওয়া। সঙ্গে কাঁচা লঙ্কা, পেঁয়াজ, লেবু নিতে ভুলবেন না কিন্ত।