জাতিসংঘের সাবেক স্পেশাল র্যাপোর্টিয়ার টমাস উজেয়া কুইন্টানা
রোহিঙ্গা মুসলিমদের ওপর সেনাবাহিনীর চরম নির্যাতনের ঘটনায় মিয়ানমারের কয়েকজন শীর্ষ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে আর্জেন্টিনার আদালতে ২০১৮ সালে মামলা হয়েছিল। রোহিঙ্গা ও লাতিন আমেরিকার মানবাধিকার গোষ্ঠীর করা ওই মামলায় দেশটির তৎকালীন সেনাপ্রধান মিন অং হ্লাইয়াংসহ শীর্ষ সামরিক কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে বিচার দাবি করা হয়েছিল। আর্জেন্টিনায় ‘ইউনিভার্সাল জুরিসডিকশন’ এর নীতিতে মামলাটি করা হয়েছিল, যা মূলত একটি আইনি ধারণা, বিভিন্ন দেশের আইনের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ। যুদ্ধাপরাধ, মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধের মতো ঘটনায় এ ধরনের মামলা করা যায়। এসব বিষয়ে নিয়ে সম্প্রতি রেডিও ফ্রি এশিয়া’র (আরএফএ) মুখোমুখি হয়েছিলেন মিয়ানমারে (২০০৮-২০১৪) জাতিসংঘের সাবেক স্পেশাল র্যাপোর্টিয়ার টমাস উজেয়া কুইন্টানা। উত্তর কোরিয়া বিষয়েও (২০১৬-২০২২) তিনি উক্ত দায়িত্ব পালন করেছিলেন। মিয়ানমারের শীর্ষ কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে আর্জেন্টিনায় দায়ের করা মামলায় আদৌ কোনো অগ্রগতি হয়েছে কিনা এমন প্রশ্নের জবাবে কুইন্টানা বলেন, আমিতো বলবো মামলাটি এগোচ্ছে। আর্জেন্টিনার প্রসিকিউটর গুরুত্বপূর্ণ প্রমাণ পেশ করছেন। ফাইলটিতে এখন (বাংলাদেশের) কক্সবাজারে অবস্থান করা বেঁচে যাওয়াদের বেশ কিছু সাক্ষ্য রয়েছে। আসলে তারা সারা দুনিয়া ঘুরে আর্জেন্টিনা পরিদর্শন করেছে এবং আর্জেন্টিনার আদালতে ব্যক্তিগতভাবে সাক্ষ্য দিয়েছে। সার্বজনীন এখতিয়ারের মামলার জন্য যা কিনা খুবই গুরুত্বপূর্ণ কারণ, ভুক্তভোগীরা এখন আদালতে নিজেদের গল্প বলার সুযোগ পেয়েছে। একই সময়ে, আর্জেন্টিনার আদালত মিয়ানমার থেকে আসা প্রকৃত ভুক্তভোগীদের সাথে যোগাযোগ রেখেছিল। সুতরাং, আমি বলবো যে এখন আমরা তদন্ত পর্যায়ে আছি। আমরা বিশ্বাস করি যে, আদালত অভিযুক্ত ব্যক্তিদের বিষয়ে সারগর্ভ সিদ্ধান্ত নেবে।
মামলার সিদ্ধান্তের জন্য সময়সূচী নির্ধারণ করা হয়েছে কিনা? জানতে চাইলে কুইন্টানা বলেন, গত বছরের ডিসেম্বর মাসে এই ফৌজদারি তদন্তের বাদী- বার্মিজ রোহিঙ্গা অরগানাইজেশন ইউকে, আন্তর্জাতিক গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারির জন্য আদালতে একটি অনুরোধপত্র জমা দেয়। ওই আবেদনটি এখন আদালতের বিবেচনাধীন। আমরা আশা করি যে, এই বছরের মধ্যে কোনো একটা সময়েই আর্জেন্টিনার আদালত সিদ্ধান্ত নেবে যে, আন্তর্জাতিক গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করার মতো অবস্থা রয়েছে কি না।
মিয়ানমারের সামরিক জান্তার জবাবদিহির জন্য চলতি বছরই গুরুত্বপূর্ণ বার্তা আসতে পারে- এমন আশাবাদ ব্যক্ত করে কুইন্টানা বলেন, এটা সমগ্র আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের জন্যও গুরুত্বপূর্ণ হবে এ কারণে যে, রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে গণহত্যার মতো অত্যন্ত নাটকীয় আন্তর্জাতিক অপরাধের বিষয়ে পদক্ষেপ নেওয়া প্রয়োজন।
কক্সবাজারে রোহিঙ্গা শরণার্থী ক্যাম্পগুলোতে নারীদের অবস্থার কোনো উন্নতি হয়েছে কিনা জানতে চাইলে কুইন্টানা বলেন, সেখানকার জীবনমান পর্যাপ্ত নয়। এ বিষয়েও আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের মনোযোগ দেওয়া জরুরি। অন্যান্য আন্তর্জাতিক ইস্যুর কারণে মিয়ানমার ইস্যু বিশ্ব নজর থেকে এখন বহু দূরে। রোহিঙ্গা ইস্যুতে ফের আকর্ষণ ফেরাতে কি করতে হবে? কুইন্টানার জবাব: আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের এখন পদক্ষেপ নেওয়ার সময়। জাতিসংঘ মানবাধিকার পরিষদ মিয়ানমার পরিস্থিতি নিয়ে কাজ করলেও আরও কিছু করা বাকি। মিয়ানমারের সেনাবাহিনী একুশ শতকের প্রথম গণহত্যার জন্য দায়ী- এটাই সত্য। আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালত (আইসিসি) এবং আন্তর্জাতিক বিচার আদালতেও (আইসিজে) রোহিঙ্গা নিয়ে অন্যান্য আইনি প্রক্রিয়া দেখতে পাচ্ছি। কিন্তু, ইউনিভার্সাল জুরিসডিকশন’ এর অধীনে মামলা দায়ের করে উপযুক্ত শাস্তি পাওয়ার ঘটনা অত্যন্ত বিরল। কুইন্টানা বলেন, এই সমস্ত আইনি মামলা এই সর্বজনীন ধারণাকে শক্তিশালী করতে সহায়তা করে যে- যেখানেই গণহত্যা সংঘটিত হোক না কেন আমাদের গণহত্যা মেনে নেওয়া উচিত নয়।