যার বিশ্বকাপে খেলা নিয়েই ছিল শঙ্কা, সেই তাসকিন আহমেদ পেলেন সহ-অধিনায়কের দায়িত্ব। বিশ্বকাপ দলে চমক বলতে কেবল এটাই। বাদ-বাকি আর সবই ছিল অনুমেয়। সাইফুদ্দীনের বাদ পড়াটা আলোচনার বিষয় হলেও, ‘ফিটনেস’ বিবেচনায় এমনটাই হবার ছিল।
পূর্বাভাস অনুযায়ীই আজ টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের দল ঘোষণা করেছে বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড। মিরপুর শেরে বাংলা স্টেডিয়ামে মঙ্গলবার প্রধান নির্বাচক গাজী আশরাফ হোসেন ১৫ সদস্যের দল ঘোষণা করেন। যেখানে রাখা হয়েছে ২ জন রিজার্ভও। একই দল খেলবে যুক্তরাষ্ট্রের বিপক্ষে সিরিজেও।
এক আসর পর আবারো বিশ্বকাপে যাচ্ছেন মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ। আর প্রথমবারের মতো টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের দলে আছেন তানভীর ইসলাম, তাওহীদ হৃদয়, জাকের আলী, রিশাদ হোসেন, তানজিম হাসান সাকিব ও তানজিদ হাসান তামিম।
বিশ্বকাপ দল আগেই প্রস্তুত ছিল। ঘোষণা হবার কথা ছিল আরো ৪৮ ঘণ্টা আগেই। তবে তাসকিন আহমেদের হঠাৎ পাওয়া চোট অপেক্ষা বাড়ায় সমর্থকদের। তবে শেষ পর্যন্ত তাকে নিয়েই যুক্তরাষ্ট্রে যাচ্ছে বাংলাদেশ। এমনকি সহ-অধিনায়কত্বের দায়িত্বও দেয়া হয়েছে তাকে।
দীর্ঘদিন থেকেই টি-টোয়েন্টি দলের সহ-অধিনায়কের পদটা ফাঁকা পড়ে ছিল। অবশেষে তাসকিনের কাঁধেই দায়িত্ব সঁপে দিলো বিসিবি। বলা যায়- সাম্প্রতিক সময়ে বল হাতে দারুণ সময় পার করার পুরস্কার পেলেন তিনি। যদিও চোটের কারণে ঠিক কবে থেকে খেলতে পারবেন তিনি তা নিয়ে আছে অনিশ্চয়তা। তার নেতৃত্ব পাওয়া সম্পর্কে প্রধান নির্বাচক বলেন, ‘অবশ্যই সে আরেক প্রজন্মের উদীয়মান খেলোয়াড়। একটা ডিপারমেন্টকে লিড করছে সে। দীর্ঘদিন জাতীয় দলে খেলেছে বিভিন্ন ফরম্যাটে। তাকে যোগ্য মনে করেই এই দায়িত্ব দিয়েছে বোর্ড।’
তবে যুক্তরাষ্ট্রের বিপক্ষে সিরিজে যে তাসকিনের খেলা হচ্ছে না, তা অনেকটা নিশ্চিতই। হাসান মাহমুদকে রাখা সে জন্যই। তবে জিম্বাবুয়ে সিরিজে খেলা সাইফুদ্দীনকে রিজার্ভেও রাখেনি বিসিবি। চার ম্যাচে ৮ উইকেট পেলেও তার ওপর সন্তুষ্ট নয় নির্বাচকরা। মূলত ১২ ইকোনমিই তাকে দূরে রাখার কারণ।
অথচ বিশ্বকাপ দলে তার জায়গা অনেকটা নিশ্চিত ছিল বলা যায়। এমনকি তার উচ্ছ্বসিত প্রশংসাও শোনা যায় বোর্ড কর্তাদের মুখে। তবে ফেরার সুযোগটা কাজে লাগাতে পারেননি তিনি। ১৮ মাস পর জাতীয় দলে ফিরলেও জায়গাটা ধরে রাখতে পারলেন না ফিটনেসের কারণে।
এই নিয়ে প্রধান নির্বাচক বলেন, ‘জিম্বাবুয়ে সিরিজে দুটো রাস্তা ছিল আমাদের সামনে। দলে থাকা ফিট ক্রিকেটারদের মধ্যে থেকে নির্বাচন, দ্বিতীয়ত বাকিদেরও পরখ করে দেখা। আমরা চোট থেকে ফেরা সাইফউদ্দিনের পারফরম্যান্স দেখতে চেয়েছিলাম। তার ওপর অবশ্যই আমাদের আস্থা ছিল।’
‘তবে এই সিরিজে আমাদের আস্থার জায়গায় কিছুটা এগিয়ে তানজিম সাকিব। সে কারণে সাইফউদ্দিনকে রাখা হয়নি। সাকিবের একাগ্রতা ও আগ্রাসন খুব ভালো। তার সাথে সাইফউদ্দিনের প্রতিযোগিতা চলছিল। সে জায়গায় সাকিব উৎরে গেছে।’- যোগ করেন তিনি।
বিশ্বকাপ দল নিয়ে অবশ্য আলোচনার জায়গা আছে আরো একটা, লিটন দাসের থেকে যাওয়া। যেখানে শেষ ছয় ম্যাচে গড় ১৩, তবুও কেন কিভাবে বিশ্বকাপ দলে তিনি? প্রশ্ন ওঠাই স্বাভাবিক। তবে এক্ষেত্রে প্রধান নির্বাচকের দাবি, বিকল্প না থাকাতেই বিশ্বকাপ বহরে লিটন। এই প্রসঙ্গে লিপু বলেন, ‘লিটন কেবল ওপেনারই নয়, তার বিষয়টা তুললে উইকেটকিপিং সামর্থ্যের কথাও চলে আসে। আমাদের দুটো উইকেটকিপার নিয়ে যেতেই হবে। এক্ষেত্রে আবার আমরা বিজয়কে নিয়েও আলোচনা করেছিলাম।’ ‘তবে ফর্মহীন থাকার পরও আমাদের লিটনের ওপর আস্থা রাখতে হয়েছে। কারণ তাকে নিয়ে কাজ করা হচ্ছে এবং দুটো ম্যাচ যে তিনি খেলেননি সে সময়ও তার আস্থার জায়গা কিভাবে পুনরুদ্ধার করা যায়, সেই চেষ্টা করে যাচ্ছেন কোচিং স্টাফরা।’ তবে বাকি যারা ঠাঁই পেয়েছেন দলে তাদের নিয়ে কোনো মাথাব্যথা নেই। যুক্তরাষ্ট্র ও ওয়েস্ট ইন্ডিজে স্পিন সহায়ক মাঠ হওয়ায় স্পিনাররাই পেয়েছেন প্রাধান্য। সাকিব আল হাসান তো বটেই, আছেন শেখ মেহেদী, রিশাদ হোসেন, তানভির ইসলামও। পেস বিভাগও সমৃদ্ধ। তাসকিন ছাড়াও আছেন মোস্তাফিজুর রহমান, তানজিম সাকিব ও শরিফুল ইসলাম। সৌম্য সরকারও কাজ চালাতে পারেন প্রয়োজনে। আর রিজার্ভ বেঞ্চে থাকছেন হাসান মাহমুদ। ব্যাট হাতে তাওহীদ হৃদয়, মাহমুদউল্লাহরা ভরসার নাম। আছেন তানজিদ তামিম, জাকের আলিও। ১ জুন থেকে শুরু হওয়া বিশ্বকাপে বাংলাদেশ আছে ‘ডি’ গ্রুপে। যেখানে তাদের প্রতিপক্ষ দক্ষিণ আফ্রিকা, শ্রীলঙ্কা, নেদারল্যান্ডস ও নেপাল। ৭ জুন শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে বিশ্বকাপের প্রথম ম্যাচ খেলবে বাংলাদেশ, যুক্তরাষ্ট্রের ডালাসে হবে ম্যাচটি। বাকি তিন ম্যাচ ১০, ১৩ ও ১৬ জুন যথাক্রমে দক্ষিণ আফ্রিকা, নেদারল্যান্ডস ও নেপালের বিপক্ষে। দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে ম্যাচটি হবে নিউইয়র্কে। শেষ দুটি ম্যাচের ভেন্যু সেন্ট ভিনসেন্টে।