রবিবার, ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ০৮:৩১ পূর্বাহ্ন

বরিশালে প্রচন্ড তাপদাহে বাড়ছে তালপাখার চাহিদা

শামীম আহমেদ বরিশাল
  • আপডেট সময় শনিবার, ১৮ মে, ২০২৪

বরিশালে নারীদের বানানো প্রায় লাখ লাখ তালপাখা প্রতিবছর দেশের বিভিন্ন জেলায় সরবরাহ হচ্ছে। তালপাখা তৈরি করে শতাধিক পরিবারে এসেছে সচ্ছলতা। পাশাপাশি তালপাখা তৈরিকে পেশা হিসেবে বেছে নিয়েছে একাধিক গ্রামের নারীরা। সরেজমিন দেখা গেছে, বাঙালির ঐতিহ্যবাহী এ তালপাখায় বিভিন্ন রংয়ের টুকরা কাপড়, সূতা ও রং ব্যবহার করে আনা হচ্ছে আধুনিকতার ছোঁয়া। প্রচন্ড তাপদাহ ও ভ্যপসা গরমে বিভিন্ন জেলার বিভিন্ন স্থানে খুচরা এবং পাইকারী দোকানগুলোয় বিক্রি করা হচ্ছে এ তালপাখা। একটু বেশি অর্থের আশায় তৈরি করা হচ্ছে রং-বেরঙের বিভিন্ন সাইজের ঐতিহ্যবাহী এ তালপাখা। দেশের বিভিন্ন স্থানে সরবরাহ হচ্ছে চিরচেনা এ তালপাখা। তাই এখন ব্যস্থ সময় পার করছেন পাখা পল্লীর তালপাখা তৈরীর কারিগররা। বরিশাল জেলার গৌরনদী উপজেলার চাঁদশী গ্রামের পাখা পল্লীর একাধিক কারিগর জানায়, এ পাখা পল্লীর তালপাখা বর্তমানে বিক্রি হচ্ছে দেশের বিভিন্ন মেলা, হাট-বাজার, বাসষ্ঠ্যান্ডসহ বিভিন্ন পাইকারি ও খুচরা দোকানে। গরম এলেই প্রচন্ড তাপদাহ থেকে একটু আরাম পেতে সকলের হাতেই দেখা যায় তাল পাতার হাত পাখা। আর এসব পাখা তৈরি করে জিবীকা নির্বাহ করছেন শতাধিক পরিবার। এবিষয়ে পাখা পল্লীর নারী কারিগর শেফালী, সুমা ও আশা জানায়, দীর্ঘ ৩০ বছর ধরে তাদের পরিবারের সদস্যরা তাল পাতা দিয়ে হাত পাখা তৈরি করে আসছেন। গৌরনদী উপজেলায় গ্রামটির নাম ‘চাঁদশী’ হলেও পাখা তৈরির এলাকাটি ‘পাখা পল্লী’ নামেই সবার কাছে পরিচিত। সংসারের কাজের পাশাপাশি তালপাতা দিয়ে হাত পাখা তৈরিকে পেশা হিসেবে নিয়েছে গ্রামটির অনেক নারী। গরমের সঙ্গে তাল মিলিয়ে কর্মচাঞ্চল্যও বাড়ে ‘পাখা পল্লী’-এর মানুষদের। এ সময় তালপাতা দিয়ে তাদের বানানো পাখার চাহিদা বেড়ে যায় বহুগুণ। তালপাতার পাখা বানিয়ে অনেকের সংসারে ফিরেছে সচ্ছলতা। এসব নারী কারিগররা আরাও জানায়, পাতা সংগ্রহ, ধোয়া, শুকানো এবং পরিষ্কার করার কাজটা করে পুরুষরা। বাকি কাজ নারীদের। পাখা আকৃতির মতো পাতাগুলো কেটে রং দেয়া, বাঁশের কাঠি যুক্ত করা, সুই ও সুতা দিয়ে বাঁধায়ের পর পাতাগুলো হয়ে ওঠে সুন্দর হাত পাখা। একজন নারী প্রতিদিন ৭০ থেকে ৮০ পিস পর্যন্ত পাখা তৈরি করতে পারেন। ৮০টি হাত পাখা সুই-সুতা দিয়ে সেলাই ও সৌন্দর্য বর্ধনের কাজের বিনিময়ে পেয়ে থাকেন ২০০ থেকে ২৫০ টাকা। এদিকে বরিশাল জেলার আগৈলঝাড়া উপজেলার তালপাখা তৈরির কারিগর কাসেম খলিফা, আবুল হোসেন, শাহজাহান খলিফা,স্বপন খলিফাসহ একাধিক হস্তশিল্পী (কারিগর) জানান, সপ্তাহে একদিন পাইকারা এসে বাড়ি থেকে হাত পাখা ক্রয় করে নিয়ে যায়। পাখা তৈরি করাই হচ্ছে তাদের গ্রামের প্রধান আয়ের উৎস। তাদের হাতে তৈরিকৃত হাত পাখা বিক্রি হচ্ছে দক্ষিণাঞ্চলের বিভিন্ন মেলা, হাট-বাজার, বাসষ্ট্যান্ডসহ দেশজুড়ে। কারিগররা আরও জানান, উপকরণের মূল্য বৃদ্ধির পর অর্থাভাবে এ পেশার সঙ্গে জড়িত আরো প্রায় পঞ্চাশটি পরিবার পেশা পরিবর্তন করেছেন। বাকি পরিবারগুলোকে টিকিয়ে রাখতে হলে সহজ শর্তে সুদ মুক্ত ঋণ দেয়ার জন্য তারা সরকারের সংশ্লিষ্ট দপ্তরের আশু হস্থেক্ষেপ কামনা করেছেন। এ বিষয়ে গৌরনদী উপজেলার চাদঁশী ইউপি চেয়ারম্যান সৈয়দ নজরুল ইসলাম বলেন, গ্রামের বহু নারী সংসারের পাশাপাশি তাল পাতার পাখা তৈরির সঙ্গে যুক্ত। প্রায় ৩০-৩৫ বছর ধরে এ গ্রামে পাখা তৈরি করা হচ্ছে। তেমন কোনো সরকারি সহয়তা পাননি পাখা তৈরির কারিগর ও ব্যবসায়ীরা। সরকারি ভাবে সহযোগিতা করা হলে এ ক্ষুদ্রকুটির শিল্পের আরও প্রসার ঘটবে। এ ব্যপারে বাংলাদেশ ক্ষুদ্রও কুটির শিল্প করর্পোরেশন (বিসিক) বরিশালের উপমহাব্যবস্থাপক (ভাঃ) মো. জালিস মাহমুদ বলেন, পাখা পল্লীর পাখা দেশের বিভিন্ন জেলায় স্থানীয় পাখা ব্যবসায়ীদের মাধ্যমে পোঁছে যায়। এখানকার ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্পের সঙ্গে যুক্ত হস্থশিল্পী ও কারিগরদের সব ধরনের সহায়তা দিতে প্রস্তুত বিসিক কর্তৃপক্ষ। সমস্যা সমাধানে আমাদের সঙ্গে যোগাযোগ করলে সমস্যাগুলোর সমাধান করা হবে। ভবিষ্যতে যাতে আরও বড় পরিসরে কাজ চালিয়ে যেতে পারে, সে বিষয়ে উদ্যোগ নেয়া হবে। এ ব্যাপারে বরিশাল জেলা প্রশাসক শহিদুল ইসলাম জানান, তালপাখার এ শিল্পকে ধরে রাখতে হবে। প্রকৃতপক্ষে তাদের জীবন মানের উন্নয়ন দরকার। চাদঁশী পাখাপল্লীর বাসিন্দাদের নিয়ে সমিতি গঠন করে তাদের মাঝে টাকা প্রদানের জন্য আমার বাড়ি আমার খামার প্রকল্পকে বলা হয়েছে। এ ছাড়া তাদের মধ্যে নগদ অর্থ প্রদানসহ উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে সার্বিক সহযোগিতার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।




শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর









© All rights reserved © 2020 khoborpatrabd.com
Theme Developed BY ThemesBazar.Com