দিনাজপুরে বেদানা, বোম্বাই, মাদ্রাজি, কাঁঠালি, চায়না থ্রি জাতের লিচুর সঙ্গে নতুন করে চাষ হচ্ছে গোলাপি ও এলাচি জাতের লিচু। রসে ভরপুর এ লিচুর শাঁস মোটা। তাই খেতে সুস্বাদু। মন মাতানো ঘ্রাণে একেকটি লিচুর আকার রসগোল্লার মতো।
কৃষি বিভাগ জানায়, জেলায় এবার লিচু চাষ হওয়া জমির পরিমাণ ৫ হাজার ৭৮৭ হেক্টর। যা গত বছরের তুলনায় ১০৭ হেক্টর বেশি। জেলায় লিচু বাগান আছে ৫ হাজার ৪১৮টি। এবার প্রায় ৩৫ হাজার মেট্রিক টন লিচু উৎপান হবে। লিচু বিক্রি হাজার কোটি টাকা ছাড়িয়ে যাবে।
স্থানীয়রা জানান, সদর উপজেলার আইলিয়াপুর ইউনিয়নের মহব্বতপুর গ্রামের অ্যাডভোকেট জাকির হোসেনের বাগানে গোলাপি লিচুর ৭টি ও এলাচি লিচুর ৩টি গাছ আছে। এ লিচু আর কোথাও চাষ হয় কি না, তা কেউ নিশ্চিত করতে পারেননি। দেশে এ লিচু চাষের কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি। ১৩ বছর আগে লাগানো ১০টি গাছে ৩ বছর ধরে ফলন পাচ্ছেন তিনি।
অ্যাডভোকেট জাকির হোসেন জানান, তার বাগানে সব জাতের লিচু গাছ আছে। তবে ১৩ বছর আগে সদর উপজেলার সিকদারহাটের নার্সারি ব্যবসায়ী সানোয়ার হোসেন বেনাপোল সীমানা দিয়ে ভারতের নতুন জাতের ১০টি চারা আনেন। যে লিচু বাংলাদেশের কোথাও চাষ হয় না। জাতের নাম গোলাপি ও এলাচি। গাছগুলো লাগানোর দীর্ঘদিনেও ফলন না পেয়ে কেটে ফেলার সিদ্ধান্ত নেন। কিন্তু বাগানের মালি গাছগুলো কাটতে দেননি।
এরপর গত ৩ বছর ধরে গাছগুলোতে লিচু ধরছে। বোম্বাই ও বেদানা লিচুর সঙ্গে এ লিচু পাকে। সাধারণত ৫০ ও ১০০ লিচুর আঁটি বাঁধা হয়। কিন্তু গোলাপি ও এলাচি লিচুর আকার এত বড় যে, ২৫টির বেশি আঁটি বাঁধা যায় না। দামও অনেক বেশি। গত বছর একেকটি লিচু বিক্রি করেছেন ২৩ টাকা পিস হিসেবে।
এবারও তার বাগানে ১০টি গাছে প্রচুর লিছু এসেছে। বিভিন্ন কোম্পানি লিচুগুলো কেনার জন্য আগ্রহ দেখাচ্ছে। এর আগে একটি কোম্পানি সব লিচু কিনে নিয়েছিল। আগামী ৭-৮দিনের মধ্যে এ লিচু গাছ থেকে নামিয়ে নেওয়া হবে। অ্যাডভোকেট জাকির হোসেন বলেন, ‘এই জাতের লিচু দেশের কোথাও চাষ হয় বলে আমার জানা নেই। গোলাপি ও এলাচি লিচু চাষে ধৈর্য লাগে। কারণ অন্য জাতের লিচু তিন-চার বছরের মধ্যে ফলন পাওয়া গেলেও এর ফল পেতে কমপক্ষে ১০ বছর অপেক্ষা করতে হয়। যদি কেউ চারা চান, তাহলে আমি সরবরাহ করবো।’
এ ব্যাপারে দিনাজপুর কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের অতিরিক্ত উপ-পরিচালক (শস্য) মো. আনিছুজ্জামান বলেন, ‘আমরা গোলাপি ও এলাচি লিচু চাষের খবর শুনেছি। দেশে গোলাপি ও এলাচি জাতের লিচু কোথাও চাষ হয় কি না জানা নেই। খুব দ্রুতই আমরা এ লিচু সম্পর্কে খোঁজ-খবর নেবো।’