শনিবার, ২৮ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০৬:২৫ পূর্বাহ্ন

সংবাদপত্রে কালো দিবস উপলক্ষে বিএফইউজে-ডিইউজের বিবৃতি

খবরপত্র ডেস্ক:
  • আপডেট সময় শনিবার, ১৫ জুন, ২০২৪

১৬ জুন সংবাদপত্রের কালো দিবস। ১৯৭৫ সালের এ দিনে বাকশাল সরকার চারটি পত্রিকা সরকারি ব্যবস্থাপনায় রেখে সকল সংবাদপত্র বন্ধ করে দেয়। এতে হাজারো সাংবাদিক রাতারাতি বেকার হয়ে দুঃসহ জীবনে পতিত হন। জনগণ সঠিক তথ্য ও বস্তুনিষ্ঠ খরব জানা থেকে বঞ্চিত হয়। গোটা দেশে যেন অন্ধকার নেমে আসে। জবরদস্তিমূলকভাবে তখন সাংবাদিক ও অন্যান্য পেশাজীবীকে বাকশালে যোগদানে বাধ্য করা হয়। অনেক সাংবাদিক সেদিন জীবন-জীবিকার ভয়ে বাকশালের ফরম পূরণ করেন। তাই সংবাদমাধ্যম ও বাক-স্বাধীনতা হরণের ক্ষেত্রে বাংলাদেশের ইতিহাসে এটি একটি কালো দিন হিসেবে চিহ্নিত।

১৯৭৫ সালের ৭ নভেম্বর সিপাহী জনতার অভাবনীয় বিপ্লবের মধ্য দিয়ে শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান রাষ্ট্র পরিচালনার দায়িত্ব নেয়ার পরই সাংবাদিকদের লেখার ও মতপ্রকাশের স্বাধীনতা অবারিত করেন। জিয়াউর রহমান দায়িত্ব গ্রহণের পর প্রথমে সংবাদপত্র প্রকাশের ক্ষেত্রে প্রতিবন্ধক সব কালাকানুন শিথিল করে দেশের সব জায়গা থেকে সংবাদপত্র প্রকাশে উৎসাহ প্রদান করেন। শুধু তাই নয়, প্রকাশিত সংবাদপত্র টিকিয়ে রাখা সরকারেরই দায়িত্ব বলেই তিনি মনে করতেন।
তিনি রাজশাহী থেকে ‘দৈনিক বার্তা’ নামে একটি প্রথম শ্রেণির পত্রিকা প্রকাশের ব্যবস্থা করেন। এ পত্রিকা ঘিরে সমগ্র উত্তরাঞ্চলে তথ্যপ্রবাহের ক্ষেত্রে বিপ্লব ঘটে। বহু সাংবাদিকের কর্মসংস্থান হয়। ডিক্লারেশনের শর্ত শিথিল করার কারণে সে সময় ঢাকা থেকে শুরু করে বিভাগীয়, জেলা- এমনকি থানা পর্যায় থেকে দৈনিক, সাপ্তাহিক, পাক্ষিক ও মাসিক পত্রিকা প্রকাশ হতে থাকে।
এসব পত্রিকা টিকিয়ে রাখতে জিয়াউর রহমান সরকারি বিজ্ঞাপন বণ্টননীতিও শিথিল করেন। বিভিন্ন সরকারি, আধাসরকারি ও স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠানের বিজ্ঞাপন বণ্টন ব্যবস্থা কেন্দ্রীয় নিয়ন্ত্রণমুক্ত করেন। একইসাথে সরকারি বিজ্ঞাপনের ৬০ ভাগ ঢাকা থেকে প্রকাশিত পত্রিকায় এবং বাকি ৪০ ভাগ মফস্বল থেকে প্রকাশিত পত্রিকায় বণ্টনের ব্যবস্থা করেন। এর ফলে সারা দেশে সংবাদপত্র প্রকাশনায় নতুন উদ্দীপনা সৃষ্টি হয়।
জিয়াউর রহমান যখন বন্ধ করে দেয়া সব সংবাদপত্র চালুর ব্যবস্থা করেন, তখন প্রবীণ সাংবাদিক ও বিএফইউজের সাবেক সভাপতি নির্মল সেন লিখেছিলেন, ‘পাখা ভারী হয়ে গেছে, এত দিনের দলননীতির পর মুক্ত পাখা মেলে উড়তে কষ্ট হচ্ছে সাংবাদিকদের।’
এ উপলক্ষে বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়ন-বিএফইউজে ও ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়ন-ডিইউজে’র উদ্যোগে শনিবার সকাল ১০টায় এক আলোচনা সভার আয়োজন করা হয়। বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর এতে প্রধান অতিথি ছিলেন। জাতীয় প্রেস ক্লাবের তফাজ্জল হোসেন মানিক মিয়া হলে আয়োজিত আলোচনা সভায় সাংবাদিক নেতৃবৃন্দ ও বিশিষ্ট বুদ্ধিজীবীরা অংশগ্রহণ করবেন।
এদিকে বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়ন (বিএফইউজে) সভাপতি রুহুল আমিন গাজী ও মহাসচিব কাদের গনি চৌধুরী এবং ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়ন (ডিইউজে) সভাপতি মো: শহিদুল ইসলাম ও সাধারণ সম্পাদক খুরশীদ আলম আজ এক যুক্ত বিবৃতিতে বলেন, দেশ স্বাধীন হওয়ার মাত্র তিন বছর পার হতে না হতেই ১৯৭৫ সালের ২৫ জানুয়ারি সংসদে আনা হয়েছিল সংবিধানের চতুর্থ সংশোধনী। গণতান্ত্রিক মূল্যবোধের সম্পূর্ণ পরিপন্থী এই সংশোধনীর ফলে জাতির ঘাড়ে চেপে বসে একদলীয় শাসনব্যবস্থা বাকশালের জগদ্দল পাথর। এরই ধারাবাহিকতায় ওই বছর ১৬ জুন বিতর্কিত বাকশাল সরকার সব সংবাদপত্র বন্ধ করে দেয়। সরকারি প্রচারপত্র হিসেবে চারটি পত্রিকা সরকারি ব্যবস্থাপনায় প্রকাশ করা হয়। এতে হাজারো সাংবাদিক রাতারাতি বেকার হয়ে দুঃসহ জীবনে পতিত হন। অনেক সাংবাদিককে চাকরি হারিয়ে সে সময় হকারি পর্যন্ত করতে হয়েছিল। সংবাদমাধ্যম ও বাক-স্বাধীনতা হরণের ক্ষেত্রে বাংলাদেশের ইতিহাসে এটি একটি কালো দিন হিসেবে চিহ্নিত। জাতীয় ইতিহাসের অন্যতম কলঙ্কজনক দিন এটি। এ জন্য সাংবাদিকসমাজ প্রতি বছর এ দিনটিকে ঘৃণা ও ধিক্কারের সাথে ‘কালো দিবস’ হিসেবে পালন করে থাকে।
তারা বলেন, আধুনিক বাংলাদেশের রূপকার শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান ’৭৫ সালের নভেম্বরে সিপাহি জনতার বিপ্লবের মাধ্যমে দেশ পরিচালনার দায়িত্ব নিয়ে সংবিধানে এ দেশের কাঙ্খিত বহুদলীয় গণতন্ত্র পুনঃপ্রবর্তন করে বাকশাল সরকারের সব প্রকার অগণতান্ত্রিক কালো ধারা বাতিল করেন এবং সংবাদপত্রের স্বাধীনতা পুনঃপ্রতিষ্ঠা করেন। এর ফলে দেশে আবার সংবাদপত্রের শত ফুল ফুটতে শুরু করে।
সাংবাদিক নেতারা ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এলেই প্রথম টার্গেট করে সংবাদমাধ্যমকে। সর্বশেষ ২০০৯ সালে ক্ষমতায় এসেও একই পথে হাঁটছে দলটি। গত প্রায় ১৫ বছরে আমার দেশ, দিনকাল, চ্যানেল ওয়ান, দিগন্ত টিভি, ইসলামিক টিভি, সিএসবিসহ জনপ্রিয় সংবাদপত্র, বেসরকারি টেলিভিশন, অনলাইন নিউজ পোর্টাল বন্ধ করে কয়েক হাজার সাংবাদিককে বেকারত্বের মুখে ঠেলে দেয়া হয়েছে। বর্তমান সরকারের আমলে ৬০ জন সাংবাদিক খুন হয়েছে। একের পর এক কালাকানুন করে গণমাধ্যমের স্বাধীনতা হরণ করা হচ্ছে। কথায় কথায় সাংবাদিক গ্রেফতার এখন নিত্যকার ঘটনায় পরিণত হয়েছে।
তারা আরো বলেন, ১৯৭৫ সাল আর বর্তমান শাসনামলের মধ্যে মৌলিক কোনো পার্থক্য নেই। বাংলাদেশের গণমাধ্যম এখন ইতিহাসের সবচেয়ে ক্রান্তিকাল অতিক্রম করছে। অগণতান্ত্রিক সরকারের কালো থাবায় সংবাদমাধ্যম পুরোপুরি শৃঙ্খলিত। সরকারের রক্তচক্ষুর সামনে অসহায় আত্মসমর্পণ করতে হচ্ছে সাংবাদিক ও গণমাধ্যম প্রতিষ্ঠানকে। বস্তুনিষ্ঠ ও সত্যনিষ্ঠ সাংবাদিকতা প্রায় অসম্ভব হয়ে পড়েছে। অকল্পনীয় হুমকির মুখে পড়েছে সাংবাদিকদের জীবন ও জীবিকা। এ অবস্থা থেকে উত্তরণে দল, মত, পথ নির্বিশেষে গণমাধ্যম সংশ্লিষ্ট সবাইকে ঐক্যবদ্ধ প্রতিবাদ ও প্রতিরোধ গড়ে তুলতে হবে।




শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর









© All rights reserved © 2020 khoborpatrabd.com
Theme Developed BY ThemesBazar.Com