রসালো ও সুস্বাদু এবং পুষ্টি গুণে ভরপুর বেলাবোর কাঁঠাল। এবার বেলাবোতে কাঁঠালের বাম্পার ফলন হয়েছে। যতদুর চোখ যায় গাছে গাছে ঝুলে আছে হরেক রকমের কাঁঠাল। মৌসুমী ফল এই কাঁঠালকে ঘিরে কৃষকদের বাড়িতে ঐতিহ্যের উৎসব লেগে থাকতো। এবার তার সম্পূর্ণ বিপরীত। কারণ এসব কাঁঠাল এবার বিক্রি হচ্ছে পানির দরে। পাইকারের অনুপস্থিতি, স্থানীয় লোকজনের কাঁঠালের প্রতি অনিহা, বাজার ব্যবস্থাপনার অভাব, সরকারি পৃষ্ঠপোষকতায় অভাব, লাটকল, আনারস, জাম এসব ফলের আধিক্য ও এদের কদর অতিমাত্রায় বৃদ্ধির ফলে কাঁঠালের কদর কমে গেছে বলে মনে করেন এলাকার সচেতন মহল। বাজার প্রদক্ষিণে দেখা যায় অনেক কৃষক তাদের উৎপাদিত কাঁঠালের কাঙ্কিত দাম না পেয়ে মাথায় হাত দিয়ে হাহাকার করছে, অনেকে এগুলো গরু-ছাগলকে খাওয়াচ্ছে। উপজেলার বিভিন্ন বাজার ঘুরে দেখা গেছে বড় সাইজের (১০ কেজির উপরে) একটি কাঁঠাল বিক্রি হচ্ছে মাত্র ৩০ থেকে ৪০ টাকায়। আর মাঝারি সাইজের কাঁঠাল বিক্রি হচ্ছে ২০ থেকে ২৫ টাকায়। পোড়াদিয়া বাজারে গিয়ে দেখা যায়, প্রায় দুই শতাধিক ট্রাক, ভ্যান, অটো ও বিভাটেকে ভর্তি সারি সারি কাঁঠাল নিয়ে প্রধান সড়ক দখল করে ঘন্টার পর ঘন্টা দাঁড়িয়ে আছেন কৃষকরা কিছুটা দাম পাওয়ার আশায়। একেবারে হতাশ হয়ে কেউ কেউ স্বল্প টাকায় বিক্রয় করছেন আবার কেউ কেউ রাগে বাড়িতে ফেরত যাচ্ছেন গরু ছাগলকে খাওয়াবেন বলে। তাছাড়া কাঁচা কাঁঠাল বিক্রি করা গেলেও পাঁকা কাঁঠাল কিনছে না কেউ। বিগত বছরগুলোতে যেখানে একটি বড় সাইজের কাঁঠাল ৫০-৬০ টাকায় বিক্রি হয়েছে সেখানে এবার মাত্র ২৫-৩০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। আর মাঝারি সাইজের কাঁঠাল ৩০ থেকে ৪০ টাকায় বিক্রি হলেও এবার বিক্রি হচ্ছে মাত্র ১৫-২০ টাকায়। বেলাব উপজেলার ভাবলা গ্রামের রিটন শেখ জানান, ঢাকা, রাজশাহী, ময়মনসিংহ, ব্রাহ্মণবাড়িয়া, বরিশাল, কুমিল্লা, কিশোরগঞ্জসহ দেশের বিভিন্ন স্থানের পাইকাররা এখান থেকে কাঁঠাল ক্রয় করে নিয়ে যেত প্রতিবছর। এবার তাদের দেখা তেমনটা মিলছে না। কাঁঠাল চাষি তপন দেবনাথ জানান, তার প্রায় ১১০ টি কাঁঠাল গাছ রয়েছে। এবার কাঁঠালের বাম্পার ফলন হয়েছে। এক একটি গাছে ৬০-৭০ টি কাঁঠাল ধরেছে। এতে তার বাগানে প্রায় ২ হাজারের বেশি কাঁঠাল হয়েছে। গত বছর বড় সাইজের একটি কাঁঠাল বিক্রি করেছেন ৫০-৬০ টাকায়। আর এবার বিক্রি করতে হচ্ছে মাত্র ৩০-৩৫ টাকায়। তাও আবার ক্রেতার অভাব। অনেকটা জোর করে ক্রেতাদের হাতে তুলে দিতে হচ্ছে। বেলাব উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা নাজিম উর রউফ জানান, বাড়িঘর, রাস্তার পাশে, বাগানে, উঁচু স্থানে, পতিত জায়গায় ব্যাপক কাঁঠালের ফলন হয়েছে। তবে দামটা একটু কম।