শনিবার, ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ০৬:৪৭ পূর্বাহ্ন

সিরাজগঞ্জে গো-খাদ্যের সংকট, বিপাকে খামারিরা

খবরপত্র ডেস্ক:
  • আপডেট সময় রবিবার, ৭ জুলাই, ২০২৪

ভারত থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে সিরাজগঞ্জে যমুনা নদীসহ অভ্যন্তর্রীণ করতোয়া, ফুলজোড়, হুড়াসাগর ও চলনবিলের নদ-নদীর পানি বাড়ছে। প্লাবিত হয়েছে চরাঞ্চল ও নিচু এলাকা। এতে গো-খাদ্যের সংকট দেখা দিয়েছি। জেলয় ৫০ হাজার গোবাদি পশু নিয়ে বিপাকের পড়েছেন বন্যা দুর্গতরা। গতকাল রোববার (৭ জুলাই) সদর উপজেলার কাওয়াকোলা ইউনিয়ন, কাজিপুরের খাসরাজবাড়ি, শাহজাদপুরের পাচিল এলাকায় দেখা যায়, বানভাসি মানুষেরা উঁচু স্থানে খোলা আকাশের নিচে থাকলেও গবাদি পশুগুলোকে পলিথিনের ছাউনিতে রাখা হয়েছে। কেউ কেউ গবাদি পশুদের নিয়ে খোলা আকাশের নিচে দিন পার করছেন। চরের জমিতেই মূলত গরু চরানো হতো। বন্যায় চরের পুরো এলাকা এখন জলাবদ্ধ। কোথাও নেই গবাদিপশুর চারণভূমি। এসব পশু চুরি কিংবা হারানোর ভয়ে নির্ঘুম রাত কাটাচ্ছেন কৃষকেরা।
পানি উন্নয়ন বোর্ড সূত্র জানায়, সকালে সিরাজগঞ্জ শহর রক্ষা হার্ড পয়েন্টে যমুনা নদীর পানির সমতল রেকর্ড করা হয়েছে ১৩ দশমিক ৫১ মিটার। গত ১২ ঘণ্টায় হার্ড পয়েন্টে যমুনার পানি না বাড়লেও বিপৎসীমার ৬১ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। অপরদিকে, কাজিপুরের মেঘাই ঘাট পয়েন্টে পানির সমতল রেকর্ড করা হয়েছে ১৫ দশমিক ৩৬ মিটার। গত ১২ ঘণ্টায় ৩ সেন্টিমিটার পানি কমে বিপৎসীমার ৫৬ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। শাহজাদপুর উপজেলার রেশমবাড়ি গ্রামের খামারি জলিল শেখ জানান, বন্যার কারণে তারা গবাদি পশু নিয়ে বিপাকে পড়েছেন। ঘাসের জমিগুলো পানিতে ডুবে যাওয়ায় তারা কোন মতে খড় দিয়ে পশুগুলো বাঁচিয়ে রেখেছেন। এছাড়া, বন্যার কারণে খৈল ভুষিসহ বিভিন্ন ধরনের গো-খাদ্যের দাম বেড়ে গেছে।
একই গ্রামের মনিরুল ইসলাম জানান, চাহিদা অনুযায়ী গরুগুলোকে খাবার দিতে না পারায় দিন দিন দুধের পরিমাণ কমে যাচ্ছে। ফলে লোকসানের মুখে পড়তে হচ্ছে। এ ব্যাপারে তারা মানুষের পাশাপাশি গরুর খাবার বিতরণের জন্য সরকারের সহযোগিতা কামনা করেছেন।
কাজীপুরের শহীদ এম মনসুর আলী ইকোপার্কে আশ্রয় নেওয়া গবাদি পশুর মালিকেরা জানান, এক সপ্তাহ পার হলেও তারা কোনো গো-খাদ্যের সহায়তা পাননি। উচ্চ মূল্যে খড় কিনে এক থেকে দুবেলা খাবার দিচ্ছেন। চারদিকে পানি থাকায় প্রাকৃতিক কোনো খাবার জোগাড় করাও তাদের পক্ষে সম্ভব হচ্ছে না।
জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. ওমর ফারুক বলেন, জেলার পাঁচটি উপজেলায় প্রায় ৫০ হাজার গবাদিপশু পানিবন্দি। এসময় গবাদিপশুর বিভিন্ন রোগব্যাধি হয়। এজন্য আমরা পাঁচটি মেডিক্যাল টিম গঠন করেছি। তারা নিয়মিত বানভাসি কৃষক ও খামারিদের পরামর্শ দিচ্ছেন। আর গবাদি পশুর খাদ্য সরবরাহের জন্য আমাদের বিভাগে কোনো বরাদ্দ নেই। বরাদ্দ পাওয়া গেলে পর্যায়ক্রমে বিতরণ করা হবে।
বন্যা পূর্ভাবাস সতর্কীকরণ কেন্দ্রের বরাত দিয়ে সিরাজগঞ্জে পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. মাহবুবুর রহমান বলেন, কয়েকদিন ধরেই যমুনার পানি দ্রুতগতিতে বাড়ছে। গত ১২ ঘণ্টায় শহর রক্ষা হার্ড পয়েন্টে যমুনার পানি স্থিতিশীল থাকলেও কাজিপুর পয়েন্টে ৩ সেন্টিমিটার কমেছে। আশা করছি, দ্রুতই পানি কমে যাবে। এ মৌসুমে বড় ধরনের বন্যার আশঙ্কা নেই। জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক বাবুল কুমার সূত্রধর বলেন, ইতিমধ্যে বানের পানিতে তলিয়ে গেছে জেলার ৪ হাজার ৬৩০ হেক্টর ফসলি জমি। তবে এখনও ক্ষতির পরিমাণ নিরূপণ করা যায়নি।
জেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন কর্মকর্তা মো. আক্তারুজ্জামান বলেন, জেলার ৫টি উপজেলার ৩৪টি ইউনিয়নের ৫ হাজার ৩৬২টি পরিবারের ২৩ হাজার ৮৩৬ মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। ক্ষতিগ্রস্ত মানুষের সংখ্যা ২৩ হাজার ৮৩৬ জন। তাদের মধ্যে ৬০ টন চাল বিতরণ করা হয়েছে। আরও ৪৪০ টন চাল, নগদ ১০ লাখ টাকা ও ৫০০ প্যাকেট শুকনা খাবার বরাদ্দ রয়েছে। এগুলো পর্যাক্রমে দেওয়া হবে।




শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর









© All rights reserved © 2020 khoborpatrabd.com
Theme Developed BY ThemesBazar.Com