কোটা আন্দোলন নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্যের প্রসঙ্গে বিএনপি’র স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেছেন, আপনি যখন অধিকার চাইবেন, যখনই দেশের অধিকার চাইবেন- তখন কেউ বলবে ষড়যন্ত্র করছে, কেউ বলবে বিএনপি উস্কানি দিচ্ছে, কেউ বলবে এটা রাজাকার, কেউ বলবে এটা মুক্তিযুদ্ধের বিরোধী শক্তি, এগুলোকে মূলধন করে অনেকদিন জাতিকে তাদের সমস্ত অধিকার থেকে বঞ্চিত করা হয়েছে। এগুলোকে আর মূলধন করার সুযোগ নাই।
গতকাল রাজধানীর গুলশানে বিএনপি চেয়ারপারসনের রাজনৈতিক কার্যালয়ে যুগপৎ আন্দোলনের শরিক দল গণ-অধিকার পরিষদের (কর্নেল মশিউজ্জামান) সঙ্গে বিএনপির লিয়াজোঁ কমিটির বৈঠক শেষে সংবাদ সম্মেলনে এক প্রশ্নের জবাবে তিনি এসব কথা বলেন। এই বৈঠকে আমীর খসরু ছাড়াও বিএনপি’র ভাইস চেয়ারম্যান বরকত উল্লাহ বুলু উপস্থিত ছিলেন।
গত ১১ই জুলাই গণফোরাম ও পিপলস পার্টি, গণতান্ত্রিক বাম ঐক্য, এনডিএম, ১২ই জুলাই এলডিপি, জাতীয়তাবাদী সমমনা জোট বাংলাদেশ লেবার পার্টি এবং ১৩ই জুলাই গণ-অধিকার পরিষদের (নুর), ১৪ই জুলাই ১২ দলীয় জোটের সঙ্গে পৃথক বৈঠক করেন বিএনপি নেতারা। এরই ধারাবাহিকতায় মঙ্গলবার গণতন্ত্র মঞ্চের সঙ্গে বৈঠক হওয়ার কথা রয়েছে।
এক প্রশ্নের জবাবে আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেন, ‘তুমি কে আমি কে রাজাকার-রাজাকার, কে বলেছে, কে বলেছে-স্বৈরাচার স্বৈরাচার’। অর্ধেক স্লোগান দিয়ে তো হবে না। পুরো স্লোগান দিতে হবে। পুরো স্লোগান যদি মাথায় রাখেন, আমার মনে হয়- এখানে কেউ কোনো সমস্যা দেখতে পাচ্ছে না। আর নতুন প্রজন্মের কাছে এগুলো আর গ্রহণযোগ্য নয়। তারা সেই কথাই বোঝানোর চেষ্টা করছে। এ সমস্ত কথা বলে জাতিকে বিভক্ত করে মানুষের অধিকার কেড়ে নেয়া যাবে না।
নতুন প্রজন্ম সেই বক্তব্যটাই দিচ্ছে। সেজন্যই তারা আন্দোলন করছে।
তিনি বলেন, আমরা দেখলাম, ছাত্রলীগ আক্রমণ করছে এবং রক্তাক্ত করছে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিতরে বহিরাগত আক্রমণ চালাচ্ছে। এটা তো আমরা দেখতে পাচ্ছি, সারা দেশ এবং বিশ্ব দেখতে পাচ্ছে না। এই যে আজ দেশের মানুষ মুক্তির আন্দোলন করছে। এটা কিন্তু আন্দোলনের অংশ। তাদের (শিক্ষার্থী) দাবির জন্য তারা আলাদা আন্দোলন করছে। কিন্তু এই সরকার গণতান্ত্রিক সরকার নয়, তারা জনগণের সমস্ত অধিকার কেড়ে জোর করে ক্ষমতায় বসে আছে। তারা জনগণের কাছে দায়বদ্ধ নয়, জবাবদিহি নয়। এটাই তো মূল সমস্যা। যদি নির্বাচিত সরকার থাকতো তাহলে এটার যৌক্তিক সমাধান খুবই সহজ। যৌক্তিক সমাধান হচ্ছে, এই বাংলাদেশ আপনি একটি মেধাভিত্তিক দেশ গড়তে চান। নাকি মেধাবিহীন দেশ গড়তে চান। আপনি কি দলীয় লোকদেরকে নিয়ে দেশ গড়তে চান, নাকি দেশের সকলকে নিয়ে দেশ গড়তে চান। খসরু বলেন, যারা আন্দোলন করছে, তাদের পরিবার, আত্মীয়-স্বজন ও বন্ধুরা আছে। সবাই কিন্তু একটা ন্যায়সঙ্গত সমাধানের অপেক্ষা করছেন।
সেটা না করে আপনি যদি লাঠিপেটা করে এবং মিথ্যা মামলা দেন তাহলে তো সমাধান হবে না। এই যে ছাত্রলীগের হামলা, তাদের বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা আমরা এর তীব্র নিন্দা জানাচ্ছি।
বৈঠক প্রসঙ্গে বিএনপি’র এই স্থায়ী কমিটির সদস্য বলেন, আমাদের প্রত্যেকটা কর্মসূচি গণতান্ত্রিক ও রাজনৈতিক প্রক্রিয়ায় পালিত হবে। কারণ আমাদের জনসমর্থন আছে এবং দেশের জনগণ আমাদের সঙ্গে আছে। জনগণকে সঙ্গে নিয়েই আমাদের এই আন্দোলনকে সফল করতে হবে। তাই জনগণকে সঙ্গে নিয়ে আমরা কর্মসূচি পালন করবো। আর যুগপৎ আন্দোলনের কর্মসূচি গ্রহণের প্রক্রিয়ার অংশ হিসেবে দল ও জোটের সঙ্গে আলোচনা করছি এবং তাদের মতামত নিয়ে আগামীদিনের কর্মসূচি ঠিক করবো। বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার মুক্তি এবং দুর্নীতিসহ বিভিন্ন ইস্যুতে কর্মসূচির ধারা কি হবে, সে বিষয়ে আমরা দীর্ঘ আলোচনা করেছি।
গণ-অধিকার পরিষদের সদস্য সচিব ফারুক হাসানের নেতৃত্বে বৈঠকে দলটির নেতা এস ফাহিম, তারেক রহমান, আব্দুল্লাহ, মো. ইমাম উদ্দিন উপস্থিত ছিলেন। এরপরে বাংলাদেশ সাধারণ ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদের সঙ্গে বিএনপির লিয়াজোঁ কমিটির বৈঠক হয়। এতে ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদের আহ্বায়ক ইসমাইল সম্রাট, সদস্য সচিব সাজ্জাদুর রহমান রাফি, রিমন হোসেন, হামিদ ফিথু, তাওহীদুর ইসলাম, রাসেল হোসেন, মুহাম্মদ ইসহাক হাবিব এবং মো. হাসিবুর রহমান রাকিব উপস্থিত ছিলেন।