রবিবার, ০৮ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০৬:০৯ পূর্বাহ্ন

চুয়াডাঙ্গায় আধা মণ ধানের দামে ১ কেজি কাঁচা মরিচ

আব্দুর রহমান (দামুড়হুদা) চুয়াডাঙ্গা
  • আপডেট সময় মঙ্গলবার, ১৬ জুলাই, ২০২৪

চুয়াডাঙ্গায় পুঁই শাক, পাট শাক, কচু শাক, কলমি শাক, ধনেপাতা, চিচিঙ্গা, বরবটি, আদা, হলুদ, পেঁয়াজসহ বিভিন্ন ধরনের কাঁচা সবজির দাম বৃদ্ধির কারণে মানুষের যখন নাভিশ্বাস সেই মুহূর্তে আলোচনায় এসেছে কাঁচা মরিচ। জেলার ৪ থানার বাজারসহ ৩২টি বাজারে কাঁচা মরিচের দাম এক মাসের ব্যবধানে বেড়ে হয়েছে তিনগুণের বেশি। মঙ্গলবার (১৬জুলাই) দামুড়হুদা- দর্শনা ঘুরে দেখা যায়, পাইকারি বাজারে প্রতিকেজি মরিচ ৩০০ টাকায় কিনে খুচরা বাজারে দোকানদাররা বিক্রি করছে ৩২০ টাকায়। কেজিতে ক্ষুদ্র ভোক্তাদের কাছে ২০ টাকা বেশি নিচ্ছে। বর্তমানে মরিচের বাজার দরে অতিষ্ঠ ক্রেতারা। কেউ কেউ কাঁচা মরিচ না কিনে শুকনো মরিচের গুঁড়া বা প্যাকেট কিনছেন। আবার শুকনা মরিচ প্রকারভেদে ৩০০-৩৫০ টাকা কেজি দরে কিনতে বাধ্য হচ্ছে ক্রেতারা। অথচ একই বাজারে ৪০ কেজি ধান বিক্রি হচ্ছে ৮৫০ থেকে ১০০০ টাকায়। হিসেবে আধা মণ ধান বাজার মূল্য ৪০০ টাকা যা ১ কেজি কাচা মরিচের সমান দাম। দর্শনা রেল বাজারে দেখা হয় কৃষি শ্রমিক ও সবজি ক্রেতা আব্দুস সামাদ(৫৫) জানান, আয়ের সঙ্গে ব্যয়ের মিল নাই। সারাদিন আয় হয় ৩০০ টাকা। তাও কাজ কোনোদিন হয়, কোনোদিন হয় না। তাহলে গরিব মানুষের বাঁচার উপায় কী? তিনি বলেন, আলু, বেগুন, ঢেঁড়স, মরিচ, পেঁয়াজ, আদা, হলুদ বরবটি, পটলসহ সব কিছুর দামই বেশি। একটু বৃষ্টি নামলেই ব্যবসায়ীরা অজুহাত দেয় আজ মরিচের আমদানি নাই। তাই মরিচসহ প্রত্যেকটি কাঁচামালের দাম বেড়েছে। মদনা গ্রামের আলী নেওয়াজের ছেলে শাকিল হাসান মোড়ল জানান, ‘পাঁচ বিঘা জমিতে বোরো ধান চাষ করেছি। এলাকার বাজারে প্রথম ধাপে ১মণ ধান ৮৫০ টাকায় বিক্রি করেছি। দ্বিতীয় ধাপে ৯৫০ টাকায় বিক্রি করেছি ধান। দর্শনা পৌর শহরের শ্যামপুর গ্রানের খলিল(৪২) বলেন, বাজার মনিটরিং না থাকায় খুচরা ব্যবসায়ীরা চড়া দামে এসব পণ্য বিক্রি করছে। এদিকে, ভোক্তা অধিকার কর্মকর্তা জানান, খুব শিগগরিই বাজার দর স্থীতিশীল রাখতে অভিযান চালানো হবে। জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর সূত্রে জানা গেছে, জেলায় ৪৬৫ হেক্টর জমিতে মরিচ আবাদ করা হয়েছে। প্রথম দিকে আবহাওয়া একটু খারাপ হলেও পরে স্বাভাবিক হয়, ফলে মরিচের উৎপাদনও ভালো হয়েছে। তারপরেও কারণ-অকারণে কাঁচা মরিচের দাম ওঠানামা করছে। শহরের কাঁচামালের আড়তদার ইসলাম জানায়, চলতি বর্ষার মৌসুমে কোন বৃষ্টি না থাকায় অন্যান্য জেলাসহ স্থানীয় মরিচ চাষিদের ক্ষেতে গাছ মরে যাওয়ায় বাজারে কিছুটা প্রভাব পড়েছে। পাইকারি প্রতিকেজি ৩০০ টাকায় বিক্রি করা হচ্ছে। তবে শুনছি, খুচরা বাজারে নাকি ৩২০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। একই কথা জানান, আড়তদার আসাদ আলী। দামুড়হুদা বাজারের খুচরা বিক্রেতা আবু বকর ও জায়েদ জানান, আড়তদাররা মরিচ সাপ্লাই দিতে পারছে না। তাই বেশি দামে মরিচ কিনতে হচ্ছে। এছাড়াও মরিচ বাসি হলে পচে যায় এবং ওজনে কম হয়। ফলে বাধ্য হয়ে একটু বেশি দামে বিক্রি করতে হচ্ছে। দাম বেশি হওয়ায় ক্রেতারা কাঁচা মরিচ কিনছে না। অনেকেই প্যাকেটের গুঁড়া মরিচ কিনছে। মেসে রান্না করার কাজে মরিচ কিনতে আসা রেল বাজারের আসমা খাতুন বলেন, ‘মাছ, মাংস রান্নায় কাঁচা মরিচের দরকার হয়। তরকারির স্বাদও ভালো হয়।
কিনতে এসে দেখি, এক কেজি চালের দামের চেয়ে এক কেজি মরিচের দাম তিনগুণ বেশি। তাই কাঁচা মরিচ না কিনে শুকনা মরিচ গুঁড়া কিনলাম।’ চাষি মাহমুদ আলী জানান, বৃষ্টি ও গরমের কারণে অনেক মরিচ গাছ ক্ষেতে নষ্ট হয়েছে। গাছ মরে যাওয়ায় ফলন নাই। এই জন্য বাজারে মরিচের আমদানি নাই। ফলে দামও অনেক বেশি। চুয়াডাঙ্গা জেলা ভোক্তা অধিকার অফিসার জানান, কাঁচা মরিচের দাম শুধু চুয়াডাঙ্গা বাড়েনি। পুরো দেশেই একই অবস্থা। আমরা নিয়মিত বাজার মনিটরিং করছি। খুব শিগগরিই বাজার দর স্থীতিশীল রাখতে অভিযান চালানো হবে।




শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর









© All rights reserved © 2020 khoborpatrabd.com
Theme Developed BY ThemesBazar.Com