নওগাঁর বদলগাছীতে মহিলা ডিগ্রী কলেজের অধ্যক্ষ মাহবুব আলম এর পদত্যাগ দাবিতে বিক্ষোভ মিছিল করেছে কলেজের শিক্ষার্থীরা। ২৫ আগষ্ট রবিবার বেলা ১২ টায় কলেজের শিক্ষার্থীরা বৈষম্য বিরোধী ছাত্র সমাজ ও জনতা’র ব্যানারে একটি বিক্ষোভ মিছিল বের করে বিভিন্ন সড়ক প্রদক্ষিণ করে উপজেলা পরিষদ চত্ত্বরে সমবেত হয়। এরপর শিক্ষার্থীরা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কার্যালয়ে গিয়ে বিষয়টি নিয়ে আলোকপাত করেন। শিক্ষার্থীদের ভাষ্যমতে, বর্তমান অবৈধ, দূর্ণীতিবাজ অধ্যক্ষ মাহবুব আলম ৫/১২/২০১৯ ইং তারিখে ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ হিসেবে এই কলেজে দায়িত্ব প্রাপ্ত হন। এরপর তিনি বেশ বেপরোয়া হয়ে ওঠেন। দীর্ঘদিন ধরে অধ্যক্ষের পদ খালি থাকার পরে ২২/০৮/২০২২ ইং তারিখে দৈনিক জনকণ্ঠ পত্রিকায় অধ্যক্ষ পদে নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি দেন তৎকালীন ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি (রাজনৈতিক ভাবে মনোনীত) এম.জাামান পিন্টু। এসময় ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ হিসেবে উম্মে হাবিবাকে দায়িত্ব প্রদান করা হয়। অধ্যক্ষ পদে নিয়োগের যোগ্যতা হিসেবে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় নিয়োগ বিধি কাঠামো মোতাবেক ১৫ বছর চাকুরির অভিজ্ঞতা সহ কমপক্ষে ৩ বছর সহকারী অধ্যাপক পদে চাকুরী করতে হবে। কিন্তু সভাপতি কোন কিছুর তোয়াক্কা না করে এই কলেজেরই পরিসংখ্যান বিভাগের সহকারী অধ্যাপক মাত্র ১১ মাসের অভিজ্ঞতা সম্পন্ন মাহবুব আলম কে মোটা অংকের অর্থের বিনিময়ে অধ্যক্ষ পদে নিয়োগ প্রদান করেন। এভাবে রাজনৈতিক ভাবে নিয়োগ পাওয়া অধ্যক্ষ মাহবুব আলম ২৭/১০/২০২২ ইং তারিখে নিয়োগপত্র নিয়ে আরো বেপরোয়া হয়ে ওঠেন। কোন শিক্ষকের সাথেই ভালো আচরণ করতেন না। তাঁর অন্যায়কে সমর্থন না করায় সমাজ কর্ম বিভাগের সহকারী অধ্যাপক মমতাজ জাহান কে দুই মাস সাসপেন্ডও করা হয়। পরবর্তীতে সাসপেন্স প্রত্যাহার হলেও দুই মাসের অর্ধ বেতন-ভাতার টাকা অদ্যাবধি প্রদান করেন নাই বলে ভুক্তভোগীর ভাষ্যে জানা যায়। কলেজের টিউশন ফি’র টাকা কোন শিক্ষককে না দিয়ে তা নিজেই আত্মসাৎ করেছেন বলে একাধিক শিক্ষক অভিযোগ করেন। তাঁর বিভিন্ন অনিয়ম, দূর্ণীতি নিয়ে অভিযোগ হলে মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা অধিদপ্তর (মাউশি) থেকে তদন্ত করা হয়। তদন্তে অনিয়মের স্পষ্ট প্রমান পাওয়ায় স্মারক নং ৩৭.০২.০০০০.১০৫.২৭.০৫৩.২৩.১৫৮ তাং- ১৭.০৫.২০২৪ ইং মাউশি’র সহকারী পরিচালক তপন কুমার দাস স্বাক্ষরিত একটি পত্রে তাঁর বিরুদ্ধে কেন আইনগত পদক্ষেপ নেওয়া হবেনা তা জানতে সভাপতি বরাবর কারন দর্শানোর নোটিশ দেওয়া হয়েছে। এই বিষয়ে তৎকালীন সভাপতি এম.জামান পিন্টু এর সাথে কথা বললে তিনি বলেন, আমি তো একাই কিছু করি নাই। সে সময় এম.পি ছিলেন, কমিটির ১৩ জন সদস্য সবাই মিলেই নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। টাকার বিষয়ে কথা বললে তিনি এড়িয়ে যান এবং পরে কথা বলবেন বলে জানান। বর্তমান সভাপতি উপজেলা নির্বাহী অফিসার মাহবুব হাসান এর সাথে কথা বললে তিনি বলেন, কলেজের শিক্ষার্থীরা এসপছিল। তাঁদের লিখিত অভিযোগ দিতে বলেছি। অভিযোগ পেলে আইনগত পদক্ষেপ নেওয়া হবে। অভিযুক্ত অধ্যক্ষ মাহবুব আলম এর সাথে কথা বলার জন্য কলেজে গেলে তাঁর কক্ষ তালাবদ্ধ দেখা যায়। কলেজের স্টাফদের সাথে কথা বললে তাঁরা জানান, অধ্যক্ষ সাহেব ৭ দিন ধরে কলেজে অনুপস্থিত। তাঁর মোবাইল ফোনে কথা বললে তিনি বলেন, আমি ষড়যন্ত্রের শিকার। আমি মাউশির তদন্ত রিপোর্টের বিরুদ্ধে রিট করেছি। কলেজে অনুপস্থিত থাকার কথা বললে তিনি বলেন, আমি ডায়াবেটিস সেন্টারে এসেছি রক্ত দেওয়ার জন্য। তিনি পরে কথা বলবেন বলে মোবাইল কেটে দেন। সচেতন এলাকাবাসী অবৈধ ভাবে নিয়োগ প্রাপ্ত অধ্যক্ষ মাহবুব আলম এর পদত্যাগ সহ কলেজের শিক্ষার সুষ্ঠু পরিবেশ ফিরিয়ে আনার জন্য সংশ্লিষ্ট উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের আশু হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন।