সীতাকুন্ডে বিশ্ব পর্যটন দিবস পালিত হয়েছে। বিশ্ব পর্যটন দিবস উপলক্ষে উপজেলার বিভিন্ন সামাজিক, পরিবেশবাদী সংগঠন আলোচনা সভা ও র্যালী‘সহ পালন করেছে বিভিন্ন কর্মসূচি। সামাজিক ও পরিবেশবাদী সংগঠনগুলো জানান পর্যটন শিল্পে অপার সম্ভাবনাময় উপজেলা চট্টগ্রামের সীতাকু-। সমুদ্র সৈকত, পাহাড়, ঝর্ণা আর কৃত্রিম লেকের অপরূপ মেলবন্ধণ সীতাকু-ের অর্থনীতি বদলে দিতে সক্ষম এ পর্যটন শিল্প। দেশে প্রতিনিয়ত জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে ইকো-ট্যুরিজম। যার অন্যতম উপাদান পাহাড়-পর্বত, অরণ্য, সমুদ সৈকত, নদী-নালা, জীব বৈচিত্র্য, বৃক্ষ-বনানী, প্রাণীকূল, ইতিহাস, ঐতিহ্য, সভ্যতা, সংস্কৃতি-বিনোদন ও জনসাধারণের বৈচিত্র্যময় জীবন-যাপনের পদ্বতি। যার সব কিছুই বিদ্যমান রয়েছে সীতাকু-ে। ছোট দারোগারহাটে সহ¯্রধারা-সুপ্তধারা আর পন্থিছিলার মায়াবী ঝরঝরি ঝর্ণা, গুলিয়াখালী, বাঁশবাড়ীয়া ও আকিলপুর সমুদ্র সৈকত, বোটানিক্যাল গার্ডেন-ইকোপার্ক, ভাটিয়ারী কৃত্রিম লেক আর ভ্রমণপ্রেমীদের আগ্রহের তালিকার নতুন করে যোগ হয়েছে ফৌজদারহাট লিঙ্করোডের ডিসি পার্কের মতো বেশ কয়েক‘টি আকর্ষণীয় স্পটে সজ্জিত এ উপজেলা। সমুদ্র পৃষ্ট থেকে ১২ শত ফুট উচু পাহাড়ে সনাতন ধর্মাবলম্বীদের তীর্থস্থান, প্রতœতাত্ত্বিক নিদর্শন আর বার আউলিয়ার পূর্ণভূমি উপজেলাকে করেছে সম্মৃদ্ধ। প্রাকৃতিক বৈরী পরিবেশের ধাক্কা সামলিয়ে বরাবরই উপজেলার পর্যটন স্পটগুলো নিজেদের রাঙ্গাতে শুরু করে আপন সাজে। পরিবেশ-জলবায়ুর পরিবর্তনে নতুন করে আবারো প্রাণচাঞ্চল্যতায় ফিরে আসতে অভ্যস্ত উপজেলার আকর্ষণীয় স্পটগুলো। গণমাধ্যম কিংবা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে দৃষ্টিনন্দন স্পটগুলোর অবস্থান‘সহ প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের বিবরণীতে উপজেলায় প্রতিনিয়ত ভিড় করছে ভ্রমণপ্রেমী দেশি-বিদেশি বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ। বর্ষামৌসুমে কৃত্রিম লেক ও ঝর্ণাগুলোর সৌন্দর্যের সাথে বহুগুণ বেড়ে যায় পর্যটকের সংখ্যা। বাড়তে থাকে হোটেল-রেস্তোরাঁয় জমজমাট ব্যবসা আর পর্যটনমূখী সড়কগুলোর ব্যস্ততা। সীতাকু-ে পর্যটন শিল্প‘কে কেন্দ্র করে গড়ে উঠেছে কতিপয় পেশাজীবি ও কতেক বেকার যুবকের কর্মসংস্থান। আবার পর্যটন দেশের একটি উল্লেখযোগ্য অর্থনৈতিক খাতও বটে। বিশ্বের অনেক দেশের প্রধান বা উল্লেখযোগ্য আয় আসে পর্যটন খাত থেকে। সিঙ্গাপুর জাতীয় আয়ের ৭৫%, তাইওয়ান ৬৫%, হংকং ৫৫%, ফিলিপাইন ৫০% এবং থাইল্যান্ডের ৩০% জাতীয় আয় আসে পর্যটন খাত থেকে। এছাড়াও মালদ্বীপ ও মালয়েশিয়ার বার্ষিক অর্থনৈতিক প্রবৃত্তির একটি উল্লেখযোগ্য আয় আসে পর্যটন খাত থেকে। বিশ্বের অন্যান্য পর্যটন সম্ভাবনাময় দেশের মতো বাংলাদেশেও প্রতিবছর ২৭ সেপ্টেম্বর পালিত হয়ে আসছে বিশ্ব পর্যটন দিবস। সীতাকু-ে পর্যটন শিল্প বিকাশের যথেষ্ট সম্ভাবনা থাকলেও সরকারি কার্যকর পদক্ষেপের কারণে ক্রমাগত পিছিয়ে পড়েছে। অথচ অফুরন্ত প্রাকৃতিক সৌন্দর্যমন্ডিত সীতাকু- পর্যটন শিল্পে খুবই সম্ভাবনাময় একটি উপজেলা। সম্প্রতি উপজেলার ইকোপার্ক, গুলিয়াখালী সমুদ্র সৈকত ও সহ¯্রধারা-সুপ্তধারা ঝর্ণা‘সহ কয়েকটি দর্শণীয় স্পটের অপরূপ সৌন্দর্যের স্বাক্ষী হয়েছেন ডা. কমল কদর, নাটক ও চ্চলচিত্র অভিনেতা মোঃ সাজ্জাদ হোসেন ভূঁইয়া, সংস্কৃতিকর্মী মোঃ গোলাম সাদেক, দলিল লেখক মোঃ রাজীব উদ্দিন ও ঢালীপাড়ার বাসিন্দা মোঃ জয়নাল আবেদীন। ভ্রমণপ্রেমীরা জানান, সীতাকু-ের পর্যটন স্পটগুলো খুবই মনোরম। দৃষ্টিনন্দন স্পটগুলোর সৌন্দর্যে আগত পর্যটকদের অনেকেই স্মার্টফোনে নিজেদের স্মৃতি ধরে রাখার লোভ কিছুতেই সামলাতে পারেন নি। সীতাকু- ফায়ার সার্ভিসের সিনিয়র স্টেশন কর্মকর্তা মোঃ নুরুল আলম দুলাল বলেন, পর্যটকদের অনেকেই অতি উৎসাহী হয়ে বিপজ্জনক ঢালুতে চলাচল, গাইড লাইন না মেনে, সাঁতার না জেনে ঝর্ণা কিংবা কৃত্রিম লেকে অসতর্কভাবে নেমে পড়ার প্রচেষ্ঠায় দেখা দেয় দুর্ঘটনা। এদিকে দূর্ঘটনা ঘটলেও উপজেলায় নেই কোন ডুবুরী টিম। দূর্ঘটনা মোকাবেলায় একটি ডুবুরী টিমের প্রয়োজনীয়তা অনুভব করেন তিনি। বেসরকারী উন্নয়ন সংস্থা ইপসার প্রধান নির্বাহী মোঃ আরিফুর রহমান বলেন, পর্যটকরা আমাদের অতিথি। সড়ক পথে দীর্ঘ পথ পাড়ি দিয়ে দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে পর্যটক‘রা সীতাকু-ে আগমণ করে। মনোরম স্পটগুলোর আকর্ষণে সমুদ্র সৈকতের কাঁদা মাটি কিংবা ঝর্ণা ও লেকের পানিতে সাঁতার কেটে পাহাড়ি আঁকা-বাকা আর ঢালু পথ অতিক্রম করে পর্যটক‘রা নিজেদের চাহিত গন্তব্যে এগিয়ে যায়। তিনি আরো বলেন উপজেলায় আগমণ বাড়তে থাকায় কমছে পর্যটকদের পাশাকের শালিনতা। তাতে নৈতিবাচক প্রভাব‘সহ দেখা দিয়েছে ভিন্ন সংস্কৃতি। আর সংশ্লিষ্ট খাতগুলোর উন্নয়ন ও বিকল্প কর্মসংস্থান সৃষ্টিতে অবদান রাখায় উপজেলার পর্যটন স্পটগুলো প্লাস্টিক দূষণমুক্ত রাখতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহনে সকলের সহযোগিতা কামনা করেন তিনি। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা কে.এম রফিকুল ইসলাম বলেন পাহাড়, ঝর্ণা, সমুদ্র সৈকত, আর কৃত্রিম লেকের অপরূপ মেলবন্ধন সীতাকু- উপজেলা। প্রাকৃতিক সৌন্দর্য আর জীব-বৈচিত্র্যে ভরপুর সীতাকু-ে আগত পর্যটক‘রা আকর্ষণীয় স্পটগুলো পরিদর্শন শেষে নিরাপদে নিজেদের গন্তব্যে ফিরে যায়। প্রাকৃতিক মনোরম পরিবেশ, পর্যাপ্ত নিরাপত্তা, যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়ন ও আবাসিক সুবিধা থাকায় সীতাকু-ের পর্যটন স্পটগুলোতে প্রতিনিয়ত বাড়ছে পর্যটকের আগমণ। পর্যটন শিল্পে বদলে দিতে পারে সীতাকু-ের অর্থনীতি।