প্রায় নয় মাস ধরে জন আলফ্রেড টিনিসউড বিশ্বের সবচেয়ে বয়স্ক পুরুষের খেতাব ধরে রেখেছিলেন। সম্প্রতি তিনি ১১২তম জন্মদিন পালন করেন। অবশেষে সেই যাত্রার সমাপ্তি হলো। যুক্তরাজ্যের সাউথপোর্টের এক সেবাযতœ কেন্দ্রে (কেয়ার হোম) গত সোমবার তার মৃত্যু হয়। সেখানেই তিনি বসবাস করতেন। ১৯১২ সালের ২৬ আগস্টে যুক্তরাজ্যের লিভারপুলে অ্যাডা ও জন বার্নার্ড টিনিসউডের ঘরে জন্মগ্রহণ করেন জন টিনিসউড। ওই একই বছর টাইটানিক জাহাজ আটলান্টিক মহাসাগরে ডুবে গিয়েছিল।
২০২০ সালে জন যুক্তরাজ্যের সবচেয়ে বয়স্ক পুরুষের খেতাব পান তিনি। টিনিসউড সবসময় বলতেন, জন্ম-মৃত্যু কারো হাতে নেই, হয় আপনি দীর্ঘজীবী হবেন, নয়ত কম সময় বাঁচবেন।’ তিনি বলেছিলেন, তিনি অন্য যেকোনও কিছুর মতো ১১২ বছরে পদার্পণকে স্বাভাবিকভাবেই নেবেন। টিনিসউড তার ১০০ তম জন্মদিনের ঠিক আগে ইংল্যান্ডের সাউথপোর্টের হলিস রেস্ট কেয়ার নামে একটি বৃদ্ধাশ্রমে চলে যান। পছন্দের ফুটবল ক্লাব লিভারপুল প্রতিষ্ঠার ২০ বছর পর টিনিসউডের জন্ম। ১৯০১ ও ১৯০৬ ছাড়া ক্লাবটির জেতা সবকটি ট্রফির খেলা দেখেছেন তিনি। প্রথম বিশ্বযুদ্ধের সময় টিনিসউডের বয়স ছিল মাত্র দুই বছর। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ শুরুর সময় তিনি ছিলেন ২৭ বছরের তরুণ। এক বিবৃতিতে জনের পরিবার বলেছে, তার অনেক সূক্ষ্ম গুণ ছিল। তিনি ছিলেন একাধারে বুদ্ধিমান, বিচক্ষণ, সাহসী, যেকোনো সংকটে শান্ত, গণিতে মেধাবী ও একজন সদালাপী। এই গুণগুলো তাকে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় রয়্যাল আর্মি পেস কোরে সামরিক চাকরির সময় সুবিধা দিয়েছে। সেখানে তিনি হিসাবরক্ষণ ও নিরীক্ষণ, আটকে পড়া সেনাদের শনাক্ত করা এবং খাদ্য সরবরাহের ব্যবস্থা করার মতো কাজের সঙ্গে জড়িত ছিলেন।
২০১২ সালে ১০০ বছর পূর্ণ হওয়ার পর টিনিসউড বরাবরই ইংল্যান্ডের রাজপরিবার থেকে জন্মদিনের শুভেচ্ছাবার্তা পেয়ে এসেছেন। প্রথমে প্রয়াত রানি দ্বিতীয় এলিজাবেথের কাছ থেকে শুভেচ্ছা পেতেন। এলিজাবেথ প্রায় ১৪ বছরের ছোট ছিলেন। এরপর রাজা তৃতীয় চার্লসের কাছ থেকেও তিনি শুভেচ্ছা পেয়েছিলেন। তার পরিবারের পক্ষ থেকে অনুরোধ করা হয়েছে, তার স্মরণে যেকোনো অনুদান যেন ‘এইজ ইউকে’ বা তাদের পছন্দের কোনো দাতব্য প্রতিষ্ঠানে দেয়া হয়। গিনেস ওয়ার্ল্ড রেকর্ডসে টিনিসউডের পরিবর্তে বিশ্বের সবচেয়ে বয়স্ক মানুষের নতুন রেকর্ডধারী কে হবেন তার নাম উল্লেখ করেনি। টিনিসউড তার মেয়ে সুসান ও নাতি-নাতনিদের রেখে গেছেন। ৪৪ বছর বয়সী তার স্ত্রী ব্লডওয়েন ১৯৮৬ সালে মারা যান। এই মুহূর্তে বিশ্বের সবচেয়ে বয়স্ক জীবিত নারী হলেন জাপানের ১১৬ বছর বয়সী তোমিকো ইটোকা। সূত্র: এপি নিউজ