সরকার পতন আন্দোলন দেখিয়ে গত ৫ আগষ্ট দুপুর থেকে ৬ আগষ্ট দুপুর পর্যন্ত ২৪ ঘন্টায় শেখ রাসেল সেতু থেকে ৫’শ টাকা টোল আদায় দেখান পটুয়াখালী সওজ বিভাগ। অথচ একই দিনে পার্শবর্তী শেখ কামাল সেতু থেকে অন্তত ৩৪ হাজার টাকা টোল আদায় করে ইজাদার। র্নিধারিত হারে ৫ আগষ্ট শেখ রাসেল সেতু থেকে ১৫ থেকে ১৭ হাজার টাকা আদায়ের কথা। পূর্বের ইজাদারের মেয়াদ শেষ হলে পটুয়াখালী সওজ কর্তৃপক্ষ বিভাগীয় ভাবে নিজস্ব জনবলে টোল আদায় করে পঞ্চাশ শতাংশ অর্থ হাতিয়ে নেন বলে অভিযোগ রয়েছে। এর আগে ২০২১ সালের জুলাই থেকে ২০২২ সালের জুন পর্যন্ত এক বছর সওজ বিভাগীয় ভাবে শেখ কামাল সেতুর টোল আদায় করে। সওজের নিজস্ব ঠিকাদারের পরিকল্পিত মামলায় শেখ কামাল সেতুর টোল ইজারা টেন্ডার প্রক্রিয়া বন্ধ করে বিভাগীয় ভাবে টোল আদায় করে সওজ। সুত্রমতে টানা এক বছরে শেখ কামাল সেতু থেকে প্রায় চার কোটি টাকা আদায় হলেও পঞ্চাশ শতাংশ অর্থ রাজস্বখাতে জমা হয়। শেখ কামাল সেতুর এই টোল দুর্নীতির সঙ্গে জড়িত ছিল তৎকালীন উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলী মাহামুদুল হাসান রাসেল, হেডক্লার্ক জালাল উদ্দিনসহ তৎকালিন নিযুক্তরা। পরবর্তীতে সওজের কাছে শেখ কামাল সেতুর টোল সংক্রান্ত তথ্য চাওয়া হলে তথ্য না দিয়ে সওজ ক্ষমতাসীন আ.লীগের কাধে ভর করে প্রতিবেদককে নিউজ না করতে প্রভাবিত করেন। অনুসন্ধান ও সুত্রমতে, শেখ রাসেল সেতুর টোল আদায়ে চুক্তি মেয়াদের শেষ ৩০ জুন রাত ১২ থেকে পরদিন দুপুর পর্যন্ত ১২ ঘন্টায় ১৫,৩৫০ টাকা টোল আদায় করে সওজ। অথচ ইজাদার দায়িত্ব হস্তান্তরের দিন ২৪ ঘন্টায় ৬০ হাজার টাকা আদায় করে। কোটা বিরোধী আন্দোলন দেখিয়ে ৩ আগষ্ট-২০,৫৫৫, ৪ আগষ্ট সরকার পতনের একদফা আন্দোলন দেখিয়ে-৩৯৯০ টাকা, ৫ আগষ্ট সরকার পতনের দাবি দেখিয়ে মাত্র ৫শ টাকা এবং ৬ আগষ্ট সরকার পতন দেখিয়ে ২৮১৫ টাকা টোল আদায় দেখান। ৩০ জুন থেকে ৩০ জুলাই পর্যন্ত ৩১ দিনে শেখ রাসেল সেতুতে ৮ লাখ, ২৫ হাজার এবং পরবর্তী জুলাই মাসের ২৫ দিনে ৬ লাখের অধিক টোল আদায় দেখান সওজ। সুত্রমতে শেখ রাসেল সেতু থেকে ১১৫ দিনের প্রায় অর্ধ কোটি টাকা টোল আদায় করে। অভিযোগ রয়েছে- পঞ্চাশ শতাংশ টোল রাজস্ব খাতে জমা হয়েছে। এদিকে টেন্ডার পদ্ধতিতে নিযুক্ত নতুন ইজারাদার ২৪ অক্টোবর প্রথম দিন ২৪ ঘন্টায় ৪৮ থেকে ৫০ হাজার টাকা টোল আদায় করে। একই পদ্ধতিতে পার্শবর্তী শেখ জামাল সেতুর টোলেও লুটপাটের অভিযোগ ওঠে। ৩০ জুন ইজাদারের চুক্তি শেষ হলে রাত ১২ টা থেকে ১ জুলাই রাত ১২টা পর্যন্ত ২৪ ঘন্টায় ৩৭ হাজার টাকা টোল আদায় দেখান সওজ। অথচ দায়িত্ব হস্তান্তরের দিন ৩০ জুন ২৪ ঘন্টায় ৪৬ হাজার টাকা টোল আদায় করে ইজারাদার। সুত্রমতে ১ জুলাই প্রায় ৫০ হাজার টাকা টোল আদায় হলেও রাজস্ব খাতে জমা হয় ১৫ হাজার,২৪০ টাকা। একই ভাবে ৪ আগষ্ট-৪৫০০ এবং ৫ আগষ্ট ২৫৫০ টাকা টোল আদায় দেখান সওজ। ৩০ জুন থেকে ৩০ জুলাই পর্যন্ত শেখ জামাল সেতু থেকে ৮ লাখ, ৯২ হাজার টাকা টোল আদায় দেখান সওজ। এদিকে টেন্ডারে পদ্ধতিতে নিযুক্ত নতুন ইজাদার ০১ অক্টোবর ২৪ ঘন্টায় ৪৫ হাজার টাকা আদায় করে। এছাড়াও একই রুটের পার্শ্ববর্তী শেখ কামাল সেতু থেকে ৩ আগষ্ট-৯৮ হাজার টাকা। ৪ আগষ্ট-৬৩ হাজার এবং ৫ আগষ্ট-৩৪ হাজার টোল আদায় করে ইজাদার। শেখ কামাল সেতু থেকে জুলাই মাসে প্রায় ৩৩ লাখ,আগষ্ট মাসে ৩০ লাখের অধিক এবং সেপ্টেম্বর মাসের-৩০ লাখের অধিক টাকা টোল আদায়ের তথ্য রয়েছে যুগান্তরের হাতে। অনুসন্ধান ও সুত্রমতে কলাপাড়া-কুয়াকাটা রুটের বিশ কিলোমিটার পথে শেখ কামাল,শেখ জামাল এবং শেখ রাসেল সেতু পাড় হয়ে সকল যানবাহনকে কুয়াকাটা পর্যটনে পৌছাতে হয়। বিশ কিলোমিটারের এই সড়কে উল্লেখযোগ্য কোন বিকল্প সড়ক নাই। যদিও শেখ কামাল সেতুর তুলনায় শেখ জামাল ও রাসেল সেতুর টোল পঞ্চাশ শতাংশ কম। এসব তথ্য সংযোজন-বিয়োজনেও মোটা দাগের অর্থ লোপাটের অভিযোগ মেলে অনুসন্ধানে। অভিযোগ রয়েছে-টোল আদায়ে নিযুক্ত পটুয়াখালী সওজের কর্মচারী একেএম হুমায়ন কবির, তারিকুজ্জমান সৈকত, হাসান ইমাম, এনামুল হক এবং হেডক্লার্ক জালাল উদ্দিন টোল লুটপাটে প্রত্যক্ষ ভাবে জড়িত। এছাড়াও অর্থ ভাগাভাগির সম্মানজনক অংশিদারের তালিকায় নাম রয়েছে পটুয়াখালী সওজের উপ-সহকারী প্রকৌশলী নজরুল ইসলামসহ কয়েকটি টেবিলের লোকজন। অভিযোগ রয়েছে-উপ-সহকারী নজরুল ইসলাম প্রটোকল অনুযায়ী ভাগাভাগির অর্থ বিকাশের মাধ্যমে নিতেন। বিকাশে ভাগ নেয়ার অভিযোগ অস্বীকার করে উপ-সহকারী প্রকৌশলী নজরুল ইসলাম বলেন-সরকার পতনের আন্দোলনে যান চলাচল কম ছিল এবং পাখিমারা সড়ক খারাপ থাকায় অধিকাংশ যানবাহন শেখ জামাল ও শেখ রাসেল সেতু পাড়াপাড় হতনা। তিনি আরও বলেন-টোল আদায়ে সরাসরি র্নিবাহী প্রকৌশলী ও উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলীর হস্তক্ষেপ ছিল, আমি শুধু নামে দায়িত্বে ছিলাম। সওজের একটি সুত্র বলছে-র্নিবাহী প্রকৌশলী জামিল আক্তার ও উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলী মো. মনিরুজ্জামানের পটুয়াখালী নতুন কর্মস্থল হওয়ায় টোলে নিযুক্তরা আর্থিক দুর্নীতির সুযোগ পেয়েছে। পটুয়াখালী সওজের র্নিবাহী প্রকৌশলী মো. জামিল আক্তার লিমন ও উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলী মো. মনিরুজ্জামান বলেন-গত ৫ আগষ্ট সরকার পতন আন্দোলনে দুস্কৃতিকারীরা শেখ রাসেল সেতুর টোল প্লাজা ভাংচুর করে রশিদ বই, রেজিষ্টারসহ প্রয়োজনীয় কাগজপত্র আগুনে পুড়িয়ে দেন, যা লিখিত ভাবে কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে। তাছারা টোল আদায়ে দুর্নীতি হওয়ার কথা নয়। এ ধরনের অভিযোগ প্রমানিত হলে জড়িতদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে।