রবিবার, ১৯ জানুয়ারী ২০২৫, ০৮:২৭ অপরাহ্ন
শিরোনাম ::
দেশের উন্নয়ন ও মানুষের কল্যাণে বিএনপির নেতা কর্মীদের কাজ করতে হবে বনশ্রী আফতাব নগর প্রেসক্লাবের নবনির্বাচিত সভাপতি বাবলু পন্ডিত, সম্পাদক জহুরুল ইসলাম ইউনিয়ন ব্যাংক পিএলসি. এর নবগঠিত পরিচালনা পর্ষদের ১৫তম সভা মহানগরী জোন আন্তঃকলেজ ক্রীড়া প্রতিযোগিতায় মাইলস্টোন কলেজের কৃতিত্ব স্বাধীনতার ঘোষক শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের আজ ৮৯তম জন্মবার্ষিকী নগরকান্দায় দু’গ্রামবাসীর মধ্যে সংঘর্ষ, ওসি, সাংবাদিকসহ আহত- ৩০ কালীগঞ্জে নানা সংকটে গ্রাম আদালত সুফল পেতে প্রয়োজন কার্যকরী উদ্যোগ কটিয়াদীতে তারুণ্যের উৎসব উদযাপন, ফুটবল টুর্নামেন্টের ফাইনাল ম্যাচ মুন্সীগঞ্জে লুন্ঠিত মালামালসহ ৭ ডাকাত গ্রেফতার লক্ষ্মীপুর ন্যাশনাল আইডিয়াল স্কুল এন্ড কলেজে বর্ণিল পিঠা উৎসব

ধনবাড়ীর গ্রামীণ জীবনে শীতের আনন্দ

জহিরুল ইসলাম মিলন (ধনবাড়ী) টাঙ্গাইল
  • আপডেট সময় বৃহস্পতিবার, ১২ ডিসেম্বর, ২০২৪

পৌষ-মাঘ এই দুই মাস শীতকাল হলেও অগ্রহায়ণ মাস থেকেই শুরু হয় শীতের আগমন। শীতকাল আমাদের দেশের একটি সুন্দর ঋতু। জলবায়ুর পরিবর্তনে বাংলাদেশে শীত এখন সংক্ষিপ্ত ঋতু। হাড়কাঁপানো শীত বলতে যা বোঝায় তার দেখা পাওয়া যায় পৌষ-মাঘ মাসে। একসময় প্রচলিত ছিল ‘মাঘের শীতে বাঘে কাঁপে’। সেই হাড়কাঁপানো শীতের সঙ্গে এখনকার প্রজন্মের পরিচয় নেই। শীতকাল এলে গ্রামবাংলায় অনুষ্ঠিত হয় নানান ধরনের উৎসব। এরমধ্যে রয়েছে ষাঁড়ের লড়াই, ঘোড়ার দৌড়, মোরগ লড়াই ইত্যাদি। এগুলো গ্রামের শীত মৌসুমের ঐতিহ্যবাহী খেলার আসর। শীতে সবাই গ্রামে ফেরার আমন্ত্রণ পায়। কারণ গ্রামে না গেলে শীত কী জিনিস আর শীতের অপরূপ পরিবেশ চোখে না দেখলে বলে বোঝানো যাবে না। গ্রামের সবুজ প্রকৃতির বুকে হলুদ সরিষা খেতের উজ্জ্বলতা মানুষকে মুগ্ধ ও বিমোহিত করে। তার ওপর কুয়াশাভাঙ্গা শিশির কণাÍআহা কী অপরূপ, কী অপরূপ। শীতের বেলায় গ্রামে সূর্য ওঠার দৃশ্য বেশ মনোরম। বাড়ির সামনে মানুষ ঠায় জমায়েত হয়ে বসে থাকে সূর্য ওঠার অপেক্ষায়। মাঘ মাসের হাড়কাঁপানো শীতে বাবুদের কাবু হওয়ার কথা প্রচলিত আছে। মাঘের শুরুতে জেঁকে বসে শীত। এই শীতে জবুথবু অবস্থা হয় মানুষের জীবনযাপনে। যান্ত্রিক এই নগরীতেও শীতে কাবু হওয়ার ব্যবস্থা হয় নগরবাসীর। তাহলে ভেবে দেখুন গ্রামের মানুষের কী অবস্থা হতে পারে। গ্রামে শীতের প্রকোপ আরো তীব্র। মুক্ত পরিবেশে শীতল হাওয়া যেন আরো বাড়িয়ে দেয় শীতের প্রকোপ। মাঘের হাঁড়কাপানো শীতে গ্রামের মানুষ উনুনের পাশে বসে অথবা শন দিয়ে আগুন জ্বেলে শরীরের তাপ বাড়ায়। সূর্য ওঠার অপেক্ষায় আঙিনায় বসে থাকে। কাঁথামুড়ি দিয়ে দিনের কাজ শুরু করে। এই শীতের প্রকোপ যতই হোক না কেন, থেমে থাকে না গ্রামবাংলার কৃষক-কৃষাণির কাজকর্ম। শীতের এই হিমেল হাওয়ায় সব কিছুর শীতলাবস্থা হলেও গ্রামে আছে কিছু ঐহিত্যের প্রচলন। শীতের সকালে দলবেঁধে আগুন তাপানো, কাঁথামুড়ি দিয়ে গল্প করা, সকালে মুড়ি খাওয়া, খেজুরের রস ও ঘরে ঘরে শীতের পিঠা আর পায়েসের ভোজন উৎসব। গ্রামে এখনো এক ঘরে পিঠা পায়েস করা হলে আশপাশের স্বজনদের না দিয়ে খাওয়ার রেওয়াজ নেই। বাংলাদেশে এখন শীত চলছে। প্রচ- শীত আর কুয়াশায় কাবু হয়ে পড়েছে জনজীবন। ‘এক মাঘে শীত যায় না’ বাঙালির এই প্রবাদ বহুল প্রচলিত। পৌষ ও মাঘ মাস হলো শীত ঋতু। নভেম্বর মাসের ১৫ তারিখ থেকে ফেব্রুয়ারির মাঝামাঝি পর্যন্ত শীতকাল টিকে থাকে। জলবায়ুর উষ্ণতার দিক থেকে হেমন্ত এবং বসন্তের মধ্যবর্তী সবচেয়ে শীতলতম ঋতুকে বলা হয় শীতকাল। শীতে বাংলাদেশের গ্রাম-প্রকৃতি সন্ধ্যার আগে থেকেই শিশির আর কুয়াশার চাদর মুড়ি দিতে শুরু করে। মানুষজন বেশ সকাল সকালই ঘরে ফেরে। গবাদি পশুরও আশ্রয় হয় গোয়ালে বা নির্দিষ্ট স্থানে। শীতের হিমশীতল গ্রামবাংলায় খুশি আর আনন্দের আয়োজনও রয়েছে প্রচুর। হিমেল হাওয়ায় জবুথবু হয়ে একটু উষ্ণতার জন্য সবাই কাতর হয়ে আছেÍএমনই দৃশ্য চোখে পড়বে। শীতের প্রকৃতি কথা কী আর বলব। গ্রামের বিস্তীর্ণ ফসলের মাঠজুড়ে দেখা যায় হলুদ রঙের সরষে ফুলের সমারোহ। লাউয়ের ডগায় ভোরের শিশিরে সূর্যের আলো পড়ে ঝিলিক দিয়ে ওঠে হীরের মতো। ফুলে ফুলে দাপিয়ে বেড়ায় বাহারি প্রজাপতি। দূর-দূরান্তের পথ পাড়ি দিয়ে শীতকালে বাংলাদেশে ঝাঁকে ঝাঁকে উড়ে আসে অতিথি পাখি। এই অতিথি পাখি আমাদের পরিবেশকে নতুন প্রাণ-চাঞ্চল্য দেয়। বিশেষ করে হাওর ও বিল এলাকা, বিভিন্ন নদীতট এবং বন এলাকায় এসব পাখির আগমন ঘটে। অতিথি পাখি আমাদের চারপাশের চিরচেনা প্রাকৃতিক পরিবেশকে আরো মনোমুগ্ধকর করে তোলে। শীতের মিঠেরোদ, কুয়াশার চাদর, উঠোনের কোণে মাটির চুলায় রান্না, চুলার পাশে বসে বসে হাতের তালু গরম করে নেওয়া, পিছিয়ে পড়া মানুষগুলোর উদাম শরীর আর শরীরের শিরশির কাঁপুনি, চায়ের কাপের সাদাটে ধোঁয়া, হলুদ সর্ষের মাঠÍএসব অপরূপ চিত্রপট আমাদের গ্রামবাংলার চিরপরিচিত। অসাধারণ সামাজিক ও পারিবারিক সংস্কৃতির ধারা এখনো আছে এই গ্রামবাংলায়। শীত এলেই আত্মীয়স্বজন বেড়াতে আসে। নানা-মামা, খালু-ফুফা, বোন-দুলাভাই যত স্বজন-সহোদর আছেন সবাই বেড়ানোর জন্য এই মৌসুমটাকে বেছে নেন। তাই শীত যতই থাকুক না কেন উৎসবের আমেজ কিন্তু গ্রামীণ জীবনে কমেনি। শীতের প্রধান উৎসব হলো নবান্ন উৎসব। গ্রামবাংলায় হেমন্তে কৃষকের ঘরে নতুন ফসল তোলা হয়। ঐতিহ্য অনুযায়ী গ্রামে বিবাহিত মেয়েদের বাপের বাড়িতে দাওয়াত দিয়ে আনা হয়। শীতের সকালে বা সন্ধ্যায় পিঠা তৈরি করে সবাই একসঙ্গে বসে ধুমধাম করে পিঠা খাওয়ার উৎসব চলে। শীতের সকাল মানেই নতুন কোনো পিঠার সুস্বাদ নেওয়া। গ্রামাঞ্চলে গেলে দেখা যায়, বাড়িতে বাড়িতে পিঠা বানানোর ধুম। শীত এলে তাই পিঠা বানানো হয়ে যায় আনন্দের অনুষঙ্গ। এর মধ্যে ভাপা, কুশলি, চিতই, পাকান, ম্যারা, ফুলপিঠা, পাটিসাপটা, পুলি, শ্যাওই উল্লেখযোগ্য। শীতকালে গড়পড়তা হারে বিয়ের অনুষ্ঠান অনেক বেশি হয়। শীতকালে স্কুল-কলেজ বন্ধ থাকে বলে সবাই গ্রামের বাড়ি কিংবা আত্মীয় বাড়ি যায়। এই সময় দল বেঁধে পিকনিক কিংবা দর্শনীয় স্থানে ঘুরে বেড়ানোর মজাই আলাদা। শীতে খেজুর গাছের রস পেতে গাছে কলসি বাঁধা হয়। সারা রাত নল বেয়ে কলসিতে খেজুর গাছের রস জমে। খুব ভোরে সেই রস নামিয়ে আনা হয়। টাটকা এই খেজুরের রস খেতে খুব সুস্বাদু। এই রস দিয়ে আবার রসের ক্ষীর ও রান্না করা হয়। এই রস থেকেই তৈরি হয় খেজুরের গুড়। ঋতুর সংখ্যাগত পরিক্রমায় শীতের স্থান পঞ্চমে। শীতের সঙ্গে উৎসবের একটা গভীর যোগসূত্র রয়েছে। গ্রামবাংলায়, এমনকি নগরেও উৎসবের আমেজ নিয়ে আসে শীত। এই উৎসব একেবারেই লৌকিক ও প্রাকৃতিক বৈশিষ্ট্যসম্পন্ন। গ্রামবাংলার লোকায়ত সংস্কৃতির যত আয়োজন সবই হয় শীতের রাতে, যেমনÍকবিগান, জারিপালা, মুর্শিদিগান, মাঘীপূর্ণিমা, পতুলনাচ, মাদার বাঁশের জারি, মাইজভান্ডারি গান, গাজীর গীত, মানিক পীরের গীত, মাদার পীরের গীতসহ বিভিন্ন ধরনের যাত্রাপালা অভিনীত হতে দেখা যায়। কুয়াশার ভেজা রাতে যাত্রাপালা অন্যতম গ্রামীণ বিনোদন। গ্রামের তুলনায় আমাদের দেশে শহরাঞ্চলে শীতের তীব্রতা কম। শীতের আসল চেহারা আর রূপ পুরোপুরি দেখতে পাওয়া যায় গ্রামে। মানুষের শহরমুখিতার কারণে এখন গ্রামগুলো দিনে দিনে এসব আনন্দ থেকে দূরে সরে যাচ্ছে। আর শহরের যান্ত্রিক জীবনে এসব শীতের আনন্দ একেবারে কল্পনাই করা যায় না।




শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর









© All rights reserved © 2020 khoborpatrabd.com
Theme Developed BY ThemesBazar.Com